আমরা তো এতদিন ভাবতাম ‘সরকারী হাসপাতাল’

কমিউনিটি ক্লিনিকের উন্নয়নে প্রতিবন্ধী ভাতার দু’শ টাকা দিলেন হতদরিদ্র মনিরা

বাবুল সরদার

আপডেট : ১১:০৩ পিএম, রোববার, ১৬ জানুয়ারী ২০২২ | ৪৩৩

“আমার স্বামী নেই, ছোট একটা মেয়ে আছে, তার ওপর বুড়ো মা, কোন জায়গা-জমি নেই, প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা আর চাইয়ে-চিন্তে মানুষের সাহায্যে খাইয়ে-নাখাইয়ে চলি। তবুও আমি এই ক্লিনিকের কাজের জন্যি (উন্নয়নের) এবার ভাতার টাকা পালি দু’শ টাকা দেব। আপনারা আমার এই টাকা নেবেন, এই ক্লিনিকের ভাল হলি আমাগো উপকার হবে .. .।” রবিবার দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার মুক্ষাইট কমিউনিটি ক্লিনিকের মাসিক সমন্বয় সভা চলাকালে কমিউনিটি ক্লিনিকের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় জনগণের অংশগ্রহন বিষয়ে বক্তাদের বক্তব্য চলাকালে হটাৎ দাড়িয়ে হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী মনিরা আক্তার লিজা একথা গুলো বলে তার সহায়তার দুই’শ টাকা গ্রহন করতে মিনতী জানান। এসময় সকলে উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে তাকে অভিন্দন জানান।

এই কমিউনিটি ক্লিনিকের অদূরে একটি ভিটায় কুড়ে ঘরে বৃদ্ধ মা ও ৪ বছরের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস তোয়াকে নিয়ে তিনি বাস করেন। তিনি সিজি বা’ সিএসজি কোন সদস্য নন। অনেক লোকের ভীড় দেখে কৌতুহলে তিনি এখানে এসেছিলেন, কথা শুনছিলেন।

এ সভায় উপস্থিত মুক্ষাইট কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা সহায়তা গ্রুপের (সিএসজি) সদস্য রোকেয়া বেগম বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহনের যে সুযোগ ও দায়বদ্ধতা রয়েছে, তা এতদিন আমরা জানতাম না।’ তখন পাশে বসা সিএসজি সদস্য নাদিরা বেগম বলে ওঠেন, আমরা তো এতদিন ভাবতাম ‘সরকারী হাসপাতাল’। এহ্যানে আমাগো কি করার আছে, সরকার যেভাবে চালাবে, সেই ভাবে চলবে...।” অনুরূপ অধিকাংশ সিজি এবং সিএসজি সদস্য মত প্রকাশ করেন।

এ সময়ে ক্লিনিকের প্রতি সাধারন জনগণের দায়বদ্ধতা এবং অংশগ্রহন বিষয়ে বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে প্রতিবন্ধী মনিরার মত স্থানীয় বাসিন্দা সিজি মেম্বর সোহেল রানা বাবু ক্লিনিকের প্রতি মাসের বিদ্যুৎ বিলের ৫০ শতাংশ, নাদিরা বেগম ক্লিনিক চত্ত্বরে ঔষধি ও ফলজ গাছের চারা রোপন, গোটাপাড়া ইউপির নবনির্বাচিত মহিলা সদস্য মাহামুদা আজাদ ক্লিনিক চত্ত্বরের নীঁচু যায়গা বালু ভরাটের প্রতিশ্রুতি দেন।


মুক্ষাইট কমিউনিটি ক্লিনিক চত্ত্বরে ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির (সিজি) সহ-সভাপতি মাহমুদা আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমন্বয় সভায় সন্মানিত অতিথি ও পর্যবেক্ষক হিসেবে কমিউনিটি ক্লিনিকের বিভিন্ন বিষয়ের উপর দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন, বাগেরহাট জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক বিকাশ কুমার দাস, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা: প্রদীপ কুমার বকসী, পি.ফর.ডি প্রকল্পের বাগেরহাট ডিষ্ট্রিক্ট পলিসি ফোরামের (ডিপিএফ) সভাপতি বাবুল সরদার ও সাধারন সম্পাদক এম এ সালাম। সভা পরিচালনা করেন, মুক্ষাইট কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সিএইচসিপি মিজানুর রহমান।


কমিটির সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ওয়াদুদুর রহমান, সাংবাদিক সোহেল রানা বাবু, মোস্তফা শেখ, নাদিরা বেগম, মনিরা খাতুন প্রমূখ। ক্লিনিক পরিচালনা কমিটি ও সাব কমিটির ৬৮ জন সদস্যের অধিকাংশ এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় ২০২২ সালে মুক্ষাইট কমিউনিটি ক্লিনিকের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ন ও ক্লিনিকের সার্বিক সেবার মান বৃদ্ধিসহ তথ্য অধিকার প্রাপ্তি ও সিটিজেন চার্টার আপডেট-সহ যথাযথ প্রদর্শনের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক বিকাশ কুমার দাস বলেন, তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মীকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা: প্রদীপ কুমার বকসী বলেন, নিয়মিত সিজি এবং সিএসজি কমিটির সভা করতে হবে। তাঁরা কমিউনিটি ক্লিনিককে নিজেদের ক্লিনিক, গ্রামবাসীর সেবাকেন্দ্র মনে করে এর উন্নয়নে এলাকার জনগণকে এগিয়ে আসার আহব্বান জানান।

স্থানীয়রা জানান, এই ক্লিনিকটি নিচু এলাকায় হওয়ায় প্রতি বর্ষায় জলমগ্ন হয়ে পড়ে ফলে রুগীদের যাতায়াতে এবং সেবা প্রদানে খুব অসুবিধা হয়। তাছাড়া খোলা জায়গায় কোন বেড়া বা’ দেয়াল না থাকায় হরহামেশা গবাদি পশু বিচরণ করে, দেয়ালের পলেস্তারা খসে গেছে। রয়েছে বিশুদ্ধপানিয় জলের সমস্যা। এলাকাবাসী এসকল সমস্যা সমাধানে এখন থেকে নিজেরা উদ্যোগী হবেন বলে আশ্বাস দেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত