পর্যাপ্ত ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায়

আতংকে উপকুলীয় বাগেরহাট বাসি

আলী আকবর টুটুল

আপডেট : ০৬:৩২ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ ২০১৮ | ১৮০০

উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে পর্যাপ্ত ঘুর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মিত না হওয়ায় এলাকাবাসি এখন আতংকে রয়েছে। ঘুর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের দাবী জানিয়েছেন সিডর বিধ্বস্ত উপকুলীয় এলাকার মানুষ। তবে অনেক এলাকাবাসি দুর্যোগকালিন ও পরবর্তী করনীয় বিষয় প্রশিক্ষন নিয়ে সচেতন হচ্ছেন। যেসব ঘুর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান হয়েছে সেগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় স্বাস্থ্যঝুকিঁতে রয়েছে উপকূলবাসী।


সিডরের ১১ বছর পার হলেও তেমন গড়ে উঠেনি পর্যাপ্ত সাইকোন শেল্টার। এতে উপকুলীয় বাসির মধ্যে ক্রমস ক্ষোভ বাড়ছে।

স্থানীয় বাসিদের অভিমত, সিডরের সময়ে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে এই জেলায় এতো বেশি মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তখন থেকেই উপকূলবাসীর অন্যতম প্রধান দাবি ছিল পর্যাপ্ত সাইকোন শেল্টার নির্মাণ।

জানা গেছে, সিডরের পর বিভিন্ন এলাকায় সাইকোন শেল্টার হলেও এতে ধারণ মতা অনেক কম। একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬-৭ শ লোকের ধারন ক্ষমতা থাকলেও সেখানে আশ্রয় নিতে হয় আড়াই থেকে ৩ হাজারের অধিক। ঘূর্ণিঝড় সতর্ক সংকেত ঘোষণা হলে এই শেল্টারগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। অনেকে শেল্টারে জায়গায় পান না। আবার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় শেল্টার নেই। অনেকগুলো আবার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী। অনেক স্থানে শেল্টারে যাওয়ার রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ।


সিডরের পর শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জে বেশকিছু স্কুল কাম সাইকোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে রাস্তাঘাট। সুপেয় পানির ব্যবস্থার জন্য ট্যাঙ্কি, টিউবওয়েল, বাথরুম টয়লেটের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা চরম আকার ধারন করেছে। ওই সকল সাইকোন শেল্টারে পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকরা চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিবাবকেরা।


প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির, তন্নী , নাজমুল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘ভবনে টিউবওয়েল আছে পানি নেই। আমরা স্কুলে আসার পর টয়লেটে যেতে পারি না। অন্যের বাড়ির টয়লেটে যেতে হয়। তারপর খাবার পানি খেতে পারি না’।

বানিয়াখালী গ্রামের মমতারানী ও শাহানাজ বেগম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘আমাদের এলাকায় সাইকোন শেল্টার কম। যা আছে তাতে সংকুলান হয় না। পর্যাপ্ত সাইকোন শেল্টার না থাকায় আমরা দুর্যোগকালিন ও পরবর্তী করনীয় বিষয় প্রশিক্ষন নিয়েছি। আমাদের মত অনেকেই প্রশিক্ষনে অংশ গ্রহন করেছে। ’

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জেজেএস এর মহড়া প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. আব্দুল মালেক বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘আমরা ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে কাজ করছি। সিডরের পর বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় সরকারী ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে উপকুলীয় এলাকাবাসিকে দুর্যোগকালিন প্রস্তুতি ও পরবর্তী করনীয় বিষয় প্রশিক্ষন দিয়ে থাকি। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ প্রশিক্ষন পেয়ে সচেতন হয়েছে। দূর্যোগের বিপদ সংকেতের খবর পেলে তারা দ্রুত সাইকোন শেল্টারে যান। তবে মোরেলগঞ্জ ও শরনখোলা উপজেলায় আরও সাইকোন শেল্টার দরকার।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল খায়ের বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন,‘ঘুর্ণিঝড় সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলাতে। এখনও পর্যাপ্ত সাইকোন শেল্টার গড়ে না ওঠায় এসব এলাকার মানুষ আতংকে থাকে। দ্রুত সাইকোন শেল্টার নির্মানের দাবী জানান তিনি’।

খাউলিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিলন মীর বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, প্রয়োজনের তূলনায় সাইকোন শেল্টার এখনও অনেক কম। দ্রুত এই এলাকায় নতুন সাইকোন শেল্টার নির্মাণ করা দরকার। যেগুলো আছে সেগুলো সংরক্ষনের অভাবে বাথরুম নষ্ট হয়ে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্র গুলো সংস্কার করা জরুরী’।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে জেলায় বর্তমানে ২৩৪ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। নতুন করে আরও ২০টি নির্মান করা হচ্ছে। জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যায়ক্রমে জেলায় আরও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি এসব কেন্দ্রে যেতে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধার সহ গৃহপালিত পশু-পাখি রাখার সুব্যবস্থা থাকে এখন থেকে এমন ডিজাইনে অবকাঠামো নির্মাণে জোর দেওয়া হবে’।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত