দাদার দেয়া জমি উদ্ধার ও নব্য আওয়ামীলীগ ভুমিদস্যু জাহাঙ্গীর মেম্বারের বিচারের দাবি

প্রতারণার শিকার হয়ে পিতার বিরুদ্ধে দুই সন্তানসহ এলাকাবাসীর মানববন্ধন

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ১২:০৭ এএম, সোমবার, ৯ মে ২০২২ | ৫৪৯

মোংলায় সংখ্যালঘু দুই ভাইয়ের আতœসাৎ হওয়া জমি ফিরে পাওয়া এবং বিতর্কিত জাহাঙ্গীর মেম্বরের বিরুদ্ধে এবার ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। কুট কৌশলী পিতার প্রতারনার শিকারে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে দুই সন্তান, তাই সহায়তাকারী নব্য আওয়ামীলীগ ভুমিদস্যু জাহাঙ্গির মেম্বার ও পিতার বিচারের দাবিতে দুই সন্তানের পরিবারের সদস্যরা ও এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে মানবন্ধন পালন করেছে। (৮মে) রোববার সকাল ১০ টায় উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের চৌকিদার মোড়ে এ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন তারা। এসময় জমি আতœসাতের মূল হোতা ও অত্যাচারী ওই এলাকার বিতর্কিত ইউপি মেম্বর জাহাঙ্গীর মল্লিকের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা ও তার বিচারের দাবী জানানো হয়। মানববন্ধনে ভূক্তভোগী হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিস্টান পরিবারের শত শত নারী পুরুষ ও শিশুরা এ বিক্ষোভে অংশ নেয়।

মানববন্ধনে ভুক্তভোগী পিতার প্রতারনার শিকার ছেলে নরোত্তম বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, অবাধ্য সন্তানকে জমি না দিয়ে তাদের দাদা দরশন বিশ্বাস ও দাদী পদ্মবতী বিশ্বাস আমাদের ৪ ভাইকে মালগাজী মৌজার ৩২ বিঘা জমি লিখে দেন। সেই জমি পিতা কৃষ্ণপদ বিশ্বাস কৌশলে ওই জমির মধ্যে ছয় একর জমি মেম্বর জাহাঙ্গীরের ফাঁদে পড়ে বিক্রি করে দেয়। তবে ওই জমির ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা তোয়াক্কাই করেননি ওই ইউপি মেম্বর।

মানববন্ধনে আসা মেম্বারের নির্যাতনের শিকার মারিয়া সরকার নামে খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের এক নারী বলেন, বিএনপি থেকে নব্য আওয়ামীলীগ হয়ে মেম্বর হওয়ার পর জাহাঙ্গীর দোর্দান্ত প্রতাপশালী হয়ে উঠেন। এলাকায় ঘের দখল, ঘের লুট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও সরকারী খাস জমি ও খাল আটকে নিষিদ্ধ ড্রেজার দিয়ে বালু বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান। এলাকার কোন ব্যক্তি জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে তার কাছে গেলে ভুল বুঝিয়ে সে জমি তার নামে জোরপূর্বক লিখে নেন বলে অভিযোগ করেন সে।

ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, নিজের স্ত্রী সন্তান থাকলেও সে বিষয় গোপন করে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে তাকে একাধিকবার ধর্ষন করে লম্পট জাহাঙ্গীর। এঘটনায় তাকে আসামী করে থানায় ধর্ষন মামলা দেয় সে, যা এখনও আদালতে বিচার চলমান।

স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেত্রী কোনিুর বেগম বলেন, বিচারের নামে মেম্বর জাহাঙ্গীর ও তার ভাই আলমগীর ভূক্তভোগীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। এমনকি তার স্বজনদের ছাড়া সরকারী ত্রান বা ভিজিপির কার্ড দেওয়া হয়না। মানুষের জমি দখল করতে এলাকায় তিনি এখন চিহ্ণিত ভূমিদস্যু পরিচিত পেয়েছে। এমন জনপ্রতিনিধি তারা চাননা বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং প্রশাসনের কাছে বিচার দাবী জানান তিনি।


উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, জাহাঙ্গীর মেম্বরের বাবা সাত্তার মল্লিক একজন রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী ছিলেন। সেই যুদ্ধাপরাধীর ছেলে জাহাঙ্গীরও পাকিস্তানি দোসরদের মতই এলাকায় নিরীহ লোকজনদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। সে ছিল এক সময় বিএনপি নেতা, খোলস পাল্টে মৌসুমী পাখিরমত দলে আসা এই নব্য আ’লীগ জাহাঙ্গীরকে উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি পদ থেকে বহিস্কারের দাবি জানান আ’লীগ নেতা আবুল হোসেন।

অভিযোগের বিষয়ে মেম্বর জাহাঙ্গীর মল্লিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনের পর থেকেই একটি পক্ষ তার পেছনে লেগে রয়েছে। ওই পক্ষটিই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সব মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন এই মেম্বর।

এদিকে চাঁদপাই ইউনিয়নের চৌকিদার মোড় এলাকার সংখ্যালঘু পরিবারের দুই ভাই নরোত্তম ও প্রেমানন্দ বিশ্বাসের ছয় একর জমি তাদের বাবা কৃষ্ণপদ বিশ্বাসকে ফাঁদে ফেলে ওই জমি বিক্রিসহ বেশ কিছু অপকর্মের বিচারের দাবিতে থানায় শনিবার (৭ মে) অভিযোগ দায়ের করেন নরোত্তম বিশ্বাস। কিন্ত থানায় দেয়া অভিযোগটি মামলা আকারে না নেয়ায় আসামীদের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারেছেনা নরোত্তম ও তার পরিবারের সদস্যরা। প্রতিনিয়ত প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে মেম্বার জাহাঙ্গিরসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন।

মোংলা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্তও চলছে, দোষিদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থাও নেয়া হবে। আইনশৃংখলা যাতে অবনতি না হয় সে ব্যাপারে তৎপর রয়েছে পুলিশ।


মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বলেন, চাঁদপাই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর মল্লিকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত ও ইউপি সদস্যের পদের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানায় তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত