মৎস্যজীবি কার্ডের চাল বিতরণ

চাল পাইছে ধনাঢ্যরা, বঞ্চিত সমিরের মতো দরিদ্ররা

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ০৯:২৯ পিএম, শুক্রবার, ২০ মে ২০২২ | ৪৫৮

‘কি বলব বাবা। আমরা জেলে মানুষ। দিন আনি দিন খাই। সরকার আমাদের কষ্টের কথা ভেবে কার্ড করি দেছে। মাঝে মধ্যি চাল দেয়। কিন্তু সেই চাল আমরা ঠিকমত পাই না। খোঁজ নিয়া দ্যাহেন, চাল পাইছে ধনাঢ্যরা। আর বঞ্চিত হইছে সমিরের মতো দরিদ্র মানুষরা।’-শুক্রবার দুপুরে কথা গুলো বলছিলেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সাবোখালী জেলে পল্লীর বৃদ্ধ রেবতি বিশ্বাস ও বিনয় বিশ্বাস।


তাঁরাসহ জেলে পল্লীর অসংখ্য নারী-পুরুষ জানান, সরকার থেকে তাঁরা ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বরে মৎস্যজীবি কার্ড পান। সেই কার্ডধারীদের বছরে ৪-৫ বার চাল দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার (১৯ মে ২০২২) চিতলমারী সদর ইউনিয়নে মৎস্যজীবি কার্ডধারীদের মধ্যে জনপ্রতি ৩২ কেজি ৫০০ গ্রাম চাল বিতরণ করা হয়। মোট ৫০ টি পরিবার ওই চাল পেয়েছেন। যাঁরা চাল পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যাক্তিই ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী। সাবোখালী গ্রামের ধনাঢ্য মনিমোহন বিশ্বাস, তার ছেলে সঞ্জয় বিশ্বাস, শ্যালক অমল বিশ্বাস ও পরিতোষ বিশ্বাস চাল পেয়েছে। অথচ একই গ্রামের দরিদ্র জেলে সমির বিশ্বাস, বাসুদেব বিশ্বাস, খোকন বিশ্বাস, শচিন বিশ্বাস, গোপাল বিশ্বাস, বাদল বিশ্বাস, সুধন বিশ্বাস ও হরেন বিশ্বাসের মত অসহায় ব্যাক্তিরা সরকারি সাহায্য থেকে বার বার বঞ্চিত হচ্ছেন।

চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য কৃষ্ণ পদ গাইন ও স্থানীয় বাসিন্দা রিপন গোলদার বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, ওখানে আদিবাসি নামে একটি সমিতি রয়েছে। ওই সমিতির সভাপতি পংকজ বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। পংকজ ও মৃত্যুঞ্জয় মিলে এই অপকর্ম করেছে। তাঁরা তাঁদের আত্মীয় স্বজনের নাম দিয়েছে। অথচ মনিমোহন বিশ্বাস একজন কোটিপতি লোক। আর সমিতির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস তাঁর ছেলে।


এ ব্যাপারে আদিবাসি সমিতির সভাপতি পংকজ বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন,‘চাল দেয়ার দায়িত্ব চেয়ারম্যানের। তিনিই নাম লিষ্ট করে থাকেন। এর দায়ভার তাঁর।’


চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নিজাম উদ্দিন শেখ বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘মৎস্যজীবিদের মধ্যে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ আমিও পেয়েছি। আদিবাসি সমিতির সভাপতি পংকজ বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস যে নামের তালিকা দিয়েছেন সেই মোতাবেক চাল বিতরণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এরকম আর হবে না।’


তবে চিতলমারী সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেখ আসাদুল্লাহ বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, বছরের নভেম্বরে মা ইলিশ সংরক্ষণে একবার ও জাটকার জন্য ৪ বার মৎস্যজীবিদের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়ে থাকে। এটা অবশ্যই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অসহায় ও দরিদ্র জেলেরা পাবেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত