জেলা বাস মালিক সমিতির খামখেয়ালী

সকালে দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ ঘোষনা, বিকেলে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শর্তসাপেক্ষে চালুর সিদ্ধান্ত

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা 

আপডেট : ১২:০০ এএম, মঙ্গলবার, ৭ জুন ২০২২ | ৪০২

শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জে সোমবার (৬জুন) সকাল থেকে হঠাৎ দূরপাল্লার সকল পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয় আন্তঃ জেলা বাস মালিক সমিতি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে দুই উপজেলার হাজার হাজার কর্মজীবি ও সাধারণ যাত্রী। পরিবহন বন্ধের ঘোষনায় দুই উপজেলায় মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে প্রায় ১২ ঘন্টা পর বিকেল ৫টা থেকে পুনরায় চালুর সিন্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে শর্তসাপেক্ষে প্রতিদিন সকাল ও বিকালে একেকটি কম্পানির দুটি পরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগামী ৮জুন পুনরায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আন্তঃ জেলা বাস মালিক ও দূরপাল্লার পরিবহন মালিকদের নিয়ে বৈঠক করে এব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

গত ৩ জুন আন্তঃ জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক এ বাকী তালুকদার স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ রবিবার বিকেলে দূর পাল্লার সকল পরিবহন মালিক, ম্যানেজার কাউন্টার পরিচালকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরন করা হয়। এই নোটিশে উপজেলা পর্যায় থেকে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল না করার নির্দেশনা রয়েছে।

এদিকে, স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগমূহুর্তে দূর পাল্লার পরিবহন বন্ধের এই খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের ঘোষনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সাধারণ মানুষ ফেসবুকে জেলা বাস মালিক সমিতির নেতাদের ধিক্কার জানিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া জানান। এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে এবং কথায় কথায় পরিবহন বন্ধ করার প্রতিবাদে বৃহত্তম আন্দোলনের ঘোষনাও দিয়েছেন তারা।


এর আগেও ২০১১ সালে একবার উপজেলা সদর থেকে দূর পাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল জেলা মালিক সমিতি। তখন প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ ছিল পরিবহন চলাচল। সেসময়ও ব্যাপক আন্দোলন হয় এবং এনিয়ে হাই কোর্টে একটি রিট করা হলে আবার চালু হয় পরিবহন চলাচল।

শরণখোলা ও মেরেলগঞ্জের পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, সকালে (৬জুন) শরণখোলা থেকে যাত্রী নিয়ে দুটি পরিবহন ছেড়ে যাওয়ার পরে বাগেরহাট অতিক্রম করার সময় বাস দুটি আটকে দেয় জেলা বাস মালিক সমিতি। একইভাবে ঢাকা থেকে ফালগুনিসহ কয়েকটি পরিবহনের বাস শরণখোলার উদ্দেশ্যে আসার সময় দুপুরে সেগুলোও বাগেরহাটে আটকে দিয়ে মাঝপথে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিসহ হয়রানির মুখে পড়ে বলে জানান কাউন্টার পরিচালকরা।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, এই দুই উপজেলা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিন দিবা ও রাত্রিকালীন শতাধিক পরিবহন চলাচল করে। উপকূলীয় এই অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ গার্মেন্টসসহ কলকারখানা এবং সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত। তাদের আসা-যাওয়ার সহজ মাধ্যম হচ্ছে এই পরিবহন। প্রতিদিন শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ থেকে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ চলাচল করে এসব পরিবহনে। কিন্তু হঠাৎ এই পরিবহন বন্ধের ঘোষনায় অনেকেই বাড়িতে এসে আটকে পড়েছেন।

শরণখোলার বাসস্ট্যান্ডের ফালগুনি পরিবহন কাউন্টার পরিচালক মো. গুলজার হোসেন জানান, সকালে শরণখোলা থেকে দুটি পরিবহন ছেড়ে গেলে বাগেরহাটে আটকে দেয়। এমনকি ঢাকা থেকে শরণখোলায় আসার সময় বেশ কয়েকটি পরিবহন আটকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া, বাড়িতে এসে আটকে পড়া যাত্রীরাও যেতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন।

শরণখোলার উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জালাল আহম্মেদ রুমি বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই মুহুর্তে দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে আওয়ামীলীগকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র এটা। আওয়ামীলীগ নামধারী জেলা বাস মালিক সমিতির কতিপয় নেতার পরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত এবং যাত্রী হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই প্রশাসনের কাছে।

এব্যাপারে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নূর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন, পরিবহন বন্ধ ঘোষনার খবর শুনেই জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করি। এরপর দুপুরে জেলা বাস মালিক সমিতির নেতাদের নিয়ে সভা করে বিকেল থেকে শর্তসাপেক্ষে পরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত হয়। তবে এই জটিলতার স্থানীয় সমাধানের জন্য আগামী ৮ জুন আন্তঃ জেলা বাস মালিক এবং দূরপাল্লার পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত