বাগেরহাটে ৪০ গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি কয়েক শত পরিবার, তলিয়ে গেছে ২৫০টি মাছের খামার

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ১০:২১ পিএম, শুক্রবার, ১৫ জুলাই ২০২২ | ৪৬৮

বাগেরহাটের নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মোরেলগঞ্জ পৌরসভাসহ উপকূলীয় তিন উপজেলা মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও শরণখোলার ১৮টি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মোরেলগঞ্জ ও রামপালের জোয়ারের পানিতে এ পর্যন্ত পুকুরসহ ২৫০টি মাছের খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। মোরেলগঞ্জ বাজারসহ পৌরসভার কুঠিবাড়ি ও বারইখালী গ্রামের সড়ক প্লাবিত হয়ে ও ফেরিঘাট থেকে পুরনো থানা ঘাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে হু-হু করে পানি ঢুকছে উপজেলা সদরে। মোরেলগঞ্জ পৌরসভার সড়ক, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। প্রভাবশালীরা সরকারী খালে বাধঁ ও পাটা দিয়ে মাছ চাষ করায় মোরেলগঞ্জ ও রামপাল উপজেলায় ৮টি করে ১৬টি ইউনিয়নসহ শরণখোলা উপজেলায় বেড়ীবাধেঁর বাইরে থাকা সাউথখালী ও খোন্তাকাটা ইউনিয়নের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে কয়েক শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ী পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গত দুদিন ধরে এসব পরিবারের অনেকেই রান্না করতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পানগুছি নদীর তীরবর্তী শহর রক্ষা বাঁধ না থাকায় পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে দিনে-রাতে দুইবার করে প্লাবিত হচ্ছে মোরেলগঞ্জ পৌরশহর। এদিকে সাইনবোর্ড- রায়েন্দা আঞ্চলিক মহাসড়কের মোরেলগঞ্জ ফেরিঘাট ভাঙ্গনের মুখে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।


মোরেলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহ ই আলম বাচ্চু জানান, বেড়ীবাঁধ না থাকার কারনে প্রতিটি পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে দিনে-রাতে দুইবার করে প্লাবিত হচ্ছে মোরেলগঞ্জ পৌরশহর। গত দুদিন ধরে মোরেলগঞ্জ পৌরসভাসহ পানগুছি নদীর তীরবর্তী বেড়ীবাঁধ না থাকায় মোরেলগঞ্জ উপজেলার খাউলিয়া, বারুইখালী, হোগলাবুনিয়া, বহরবুনিয়া, মোরেলগঞ্জ, বলইবুনিয়া, পঞ্চকরন, তেলিগাতী ইউনিয়নের ২১টির ও অধিক গ্রামের কয়েকশত বসতবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সড়ক পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঘরবাড়ী পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এসব পরিবারের অনেকেই রান্না করতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পানিতে এ পর্যন্ত ২০০টি মৎস্য ঘের ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে।


মোড়েলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এস এম মনিরুল হক তালুকদার জানান, পানগুছি নদীর তীরবর্তী এই পৌরসভায় শহর রক্ষা বাঁধ না থাকায় সদর বাজারসহ কুঠিবাড়ি ও বারইখালী এলাকা পানি ঢুকে শহরের ১, ২, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের লঞ্চঘাট, সরকারি বালিকা বিদ্যালয় রোড, কেজি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় রোড, কলেজ রোড, কাপুড়িয়াপট্টিসহ বেশ কিছু তলিয়ে গেছে। বাড়ীঘর, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়ে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ফেরিঘাট থেকে পুরনো থানা ঘাট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে হু-হু করে পানি ঢুকছে উপজেলা সদরে। পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথিতে দিনে-রাতে দুইবার করে প্লাবিত হচ্ছে মোরেলগঞ্জ পৌরশহর। এবার পূর্ণিমায় স্বাভাবিকের চেয়ে পানির উচ্চতা অনেক বেশী দেখা যাচ্ছে। পানগুছি নদী শাষনকরে টেকসই শহর রক্ষা বাঁধ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান হবে না বলেও জানান এই পৌর মেয়র।

রামপাল উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, রামপালের ৪টি নদী কুমারখালী, তেতুলিয়া, বগুড়া, মইদাড়া ও দাউদখালী নদীর তীরবর্তী বাশতলী, পেড়িখালী, হুড়কা, রাজনগর, গৌরম্ভা, ভোজপাতিয়া, বাইনতলা ও রামপাল সদর ইউনিয়নে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে সাধারন মানুষ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এবারে পূর্ণিমায় জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির উচ্চতা অনেক বেশী হওয়ায় নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ৫০টি চিংড়ি ঘের ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। ফয়লা বাজার. ঝনঝনিয়া বাজার, গিলাতলা বাজার তলিয়ে দোকানীদের অনেক মালামাল পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।

শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত জানান, শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগি, খুড়িয়াখালী, চালিতাবুনিয়া ও ও খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর গ্রাম ৪টি বড়ীবাধেঁ বাইরে থাকা সব বাড়ীঘর জেয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, পূর্নিমার প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদ-নদীর পানি ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় মোড়েলগঞ্জ পৌরসভাসহ মোড়েলগঞ্জ ও রামপাল উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ৩৬টি গ্রামের বিভিন্ন এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় বেড়িবাঁধ বা রিং বাঁধ না থাকার কারনে জোয়ারের পানি সহজে লোকালয়ে প্রবেশ করছে কয়েক শত বাড়ীঘর, রাস্তাঘাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে প্রকল্প গ্রহন করে বেড়িবাঁধের কাজ করা হবে বলেও জানান তিনি।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রাসেল জানান, জোয়ারের পানিতে এ পর্যন্ত মোড়েলগঞ্জ ও রামপাল উপজেলায় আড়াই শতাধিক মৎস্য ঘের ও পুকুর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মৎস্য খামারীদের নেট দিয়ে পুকুর ও খামার ঘিরে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে সংশ্নিষ্ট এলাকায় খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত