খাল আটকে মৎস্য ঘের,ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ

মামুন আহমেদ

আপডেট : ১০:৩২ পিএম, রোববার, ২৮ আগস্ট ২০২২ | ৬৭৬

মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নের বদ্বিয়ারজান ও পেতনিখালী খাল আটকিয়ে মাছ চাষ করছেন ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আরিফ মল্লিক। নেটপাটা দিয়ে প্রবাহমান সরকারি খাল আটকানোয় এলাকার পানি নিস্কাশন যেমন বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। খাল দুটিকে অবৈধ দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে অন্তত তিন বার আবেদন করেছেন স্থানীয়রা। প্রতিটি আবেদনের বিপরীতে মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে খালের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিলেও, অজানা কারণে খালটি দখলমুক্ত হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সামনের সড়ক দিয়ে একটু সামনে গাজীরঘাট, মিত্রডাঙ্গা, হামছাপুর ও চাপড়ী এলাকার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে পেতনিখালী ও বদ্বিয়ারজান খাল। খাল দুটি মোরেলগঞ্জ উপজেলার অন্যতম বড় খাল হেড়মার সাথে মিশেছে। পেতনিখালী খালের গাজীরঘাট এলাকার মোস্তফা ও আইন উদ্দিনের বাড়ির সামনে নেট ও পাটা দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। বদ্বিয়ারজান খালের মোখলেছ সরদারের বাড়ির সামনে, সাইফুলের বাড়ি ও শহীদের বাড়ির সামনে নেট-পাটা রয়েছে। উত্তরগাজীর ঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী সালামের বাড়ির সামনেও নেট-পাটা দেওয়া রয়েছে বদ্বিয়ারজান খালে। এর ফলে ১৫ থেকে ৩০ ফুট চওড়া খাল দুটির প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ আরিফ মল্লিকের ঘেরের মধ্যে রয়েছে। অবৈধ নেট-পাটার জন্য খালের দুই পাশে থাকা শতাধিক বিঘা জমিতে ধান চাষ ব্যবহত হচ্ছে স্থানীয়দের। এর পাশাপাশি খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যহত হওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে এলাকায়।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, বদ্বিয়ারজান ও পেতনিখালি খাল দখলমুক্ত করার জন্য এবছর ২৪ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ আজহার আলী শেখ। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ১১মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা থেকে খাল দখলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে বদ্বিয়ারজান খাল কাটা হলেও, পরবর্তীতে আবারও আরিফ দখল করে নেয়। এরপর ১৫ জুন একই দাবিতে আবারও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেন মোঃ আজহার আলী শেখ। পরবর্তী ২১ জুন রাজস্ব শাখা থেকে খাল দখলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আবারও মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া হয়। এবারও খাল না কাটায় সর্বশেষ ৬ জুলাই আবারও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেন মোঃ আজহার আলী শেখ। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে এবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব না দিয়ে ১৯ জুলাই মোরেলগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি)কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ওই চিঠির একমাসের বেশি সময় পার হলেও খাল অবমুক্ত হয়নি। বরং খাল দখলকারীরা এলাকাবাসীকে হুমকি-ধামকী দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মিত্রডাঙ্গা এলাকার কৃষক মোঃ সোলেমান শেখ বলেন, মোজাহার মল্লিক ও তার ছেলে যুবলীগ নেতা আরিফ মল্লিক পেতনিখালী ও বদ্বিয়ারজান খাল আটকিয়ে ঘের করে। আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একবার বদ্বিয়ারজান খাল কেটে দিয়েছে। আবারও তারা খাল দুটি আটকে ঘের চাষ শুরু করেছে। এখন এই খালের দুই পাশে মোটা ও ইরি কোন ধান চাষ করার উপায় নেই। খালে একটি হাস ও গরু ছাগলও নামতে পারে না। তারা হাসও পিটিয়ে মেরেছে আমার। সরকারি খাল উন্মুক্ত রাখার দাবিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

স্থানীয় শিক্ষক পলাশ মন্ডল বলেন, এই খালের পারে আমার দেড় বিঘা জমি রয়েছে। এই খাল আটকানোর ফলে আমাদের নানা সমস্যা হচ্ছে। খাল আটকানোর ফলে ‍বৃষ্টির পানি নিস্কাশন হতে পারে না। আমরা চাই খালটা মুক্ত হোক।

দীর্ঘদিন ধরে পেতনিখালী ও বদ্বিয়ারজান খাল ও খাল সংলগ্ন মাঠে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু খাল আটকানোর পর আর খালে নামতেই পারি না। শুধু আমি না, আমার মত আরও অনেকে রয়েছে যারা খালে মাছ ধরতে না পেরে কষ্টে রয়েছে। সরকারি খাল উন্মুক্ত থাকলে আমাদের খুব উপকার হত।

খাল অবমুক্ত করণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ আজাহার আলী শেখ বলেন, আমাদের এলাকার জন্য এই খাল দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মোজাহার মল্লিক ও তার ছেলে যুবলীগ নেতা আরিফ মল্লিক এই খাল দখল করে মৎস্য ঘের করেন। এজন্য আমি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তিনবার আবেদন করেছি। প্রথমবার আবেদনের প্রেক্ষিতে বদ্বিয়ারজান খালটি কাটা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে একই লোকেরা আবারও খালটি দখল করে। সেই সাথে পেতনিখালী খালও দখল করে মাছ চাষ করে। যেকোন মূল্যে আমরা এই খালকে দখলমুক্ত করতে চাই।

খাল দখলের বিষয়ে দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ মল্লিক বলেন, আমার ঘেরের মধ্যে একসময় খালের জমি ছিল জেলা প্রশাসক স্যার বলার পরে আমি আর ওই খালে ঘের করি না। এছাড়া এই খালে ঘের শুধু আমি করি না, ঘেরের সাথে আরও অনেকে জড়িত রয়েছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ইতোপূর্বে অবৈধভাবে দখলকৃত বেশকিছু খাল আমরা দখলমুক্ত করেছি। এই খালটির বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত