জাল পর্চা তৈরি করে জমি বিক্রির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ১০:৫৩ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৪৬৮

প্রতিকী ছবি

মোরেলগঞ্জে জাল পর্চা তৈরি করে জমি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে আঃ ছালাম হাওলাদার নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ওই দলিলের মাধ্যমে দোকান ভাড়ার চুক্তি করে জমির মূল মালিকদের হয়রানি করছেন জমির ক্রেতারা। উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের মূল ভলিউমে উক্ত খতিয়ানে দলিল প্রদানকারীর নামের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। দলিলের অনুকূলে ভুক্তভোগী পরিবারের করা নামজারি বাতিলের আবেদন বর্তমানে তদন্তনাধীন রয়েছে।


ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য মোঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলা সদরের ১১৬নং মৌজার কামারপট্টি ব্রিজ সংলগ্ন জায়গায় আমার বাবা মৃত আব্দুস সাত্তারের বসতবাড়ি। বসতবাড়ির সামনে রাস্তার পাশে এক শতাংশ জমিতে আমাদের ১৮ফুট লম্বা ও ১২ ফুট চওড়া একটি দোকান ঘর রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা দোকানটি ভাড়া দিয়ে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করে প্রতিবেশী মোঃ দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোঃ মেহেদী হাসান ওই জমি দাবি করেন। জমি দাবির স্বপক্ষে তিনি একটি দলিল দেখান। দলিলের নকল উঠিয়ে জানতে পারি আমার চাচা আব্দুস ছালাম ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর মোরেলগঞ্জ সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে ৪৪১৫নং দলিলের মাধ্যমে পাঁচ শতকের বেশি জমি মোঃ মেহেদী হাসানসহ তিনজনের কাছে বিক্রি করেছেন। যে দাগ ও খতিয়ান থেকে জমি বিক্রি করেছে, সেই দাগে চাচার কোন জমি নেই। দলিল যাচাই-বাছাই করে জানতে পারি আমাদের মালিকানাধীন ৬৫৬নং ডিপি খতিয়ানের কাগজ জাল করে নিজের নাম লিখে পর্চা তৈরির মাধ্যমে এই জমি দলিল করেছেন। মোরেলগঞ্জ সেটেলমেন্ট অফিসের ভলিউম খাতায় দেখা যায়, ওই ডিপি পর্চায় সোয়া ১১ শতক জমি আছে। ওই জমির দলিল ও মাঠ জরিপ (ডিপি) আমার বাবা আব্দুস সাত্তার হাওলাদার ও চাচা ইদ্রিস আলীর নামে রয়েছে। সেখানে আব্দুস ছালামের কোন নাম নেই। জমি ক্রেতারা খুব চালাক হওয়ায় ক্রয়ের পরেই অতিদ্রুত সহকারি কমিশনার ভূমির দপ্তর থেকে তাদের নামে নামজারি করিয়েছে।


তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দোকানটি ভাড়া দিয়ে আসছি। এর ধারাবাহিকতায় লিখিত চুক্তির মাধ্যমে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অগ্রীম নিয়ে মোঃ শোয়াইব শেখ নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে ১১ মাসের জন্য ভাড়া দেই। ভাড়া চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তার ঘর ছেড়ে দেওয়ার কথা থাকলেও না ছেড়ে তিনি জবরদস্তি শুরু করেন। উপরন্তু ভুয়া পর্চায় জমি ক্রেতা মোঃ মেহেদী হাসানের কাছ থেকে একটি ভুল চুক্তির মাধ্যমে ঘর দখল করে রেখেছেন তিনি। রাতের আধারে আমাদের উপর হামলা এবং মারধরও করেছে শোয়াইব ও তার লোকজন। হামলা ও মারধরের মামলায় শোয়াইব ও তার লোকজন ১৮দিন জেলও খেটেছে। তাকে দোকান থেকে নামিয়ে ঘর ফিরে পাওয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন রফিকুল ইসলাম বাচ্চু।


পাশের দোকানের ভাড়াটিয়া বাচ্চু মাতুব্বর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই জমির মালিক মোঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু ও তার চাচা ইদ্রিস আলী হাওলাদার। কিন্তু হঠাৎ করে শুনি মালিকানা না থাকা স্বত্তেও বাচ্চুর চাচা ওই জমি বিক্রি করেছে।


স্থানীয় মোটরসাইকেল চালক হেলাল তালুকদার বলেন, বাচ্চুর বাবা থেকে এই জমি তারা ভোগ দখল করে। এখন শুনি তাদের জমি নেই, এটা অন্যায়।

অভিযোগ অস্বীকার করে ভাড়াটিয়া মোঃ শোয়াইব শেখ বলেন, আমি কাউকে মারিনি। আমার নামে মামলা দিয়েছে, আমি সেই মামলা আইনগত ভাবে মোকাবেলা করব।


জমি বিক্রেতা আব্দুস সালামের সাথে মুঠোফোনে বারবার ফোন করলেও, তিনি ফোন রিসিভ করেনি। পরে তার বাড়িতে যেয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

জমি ক্রেতা মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, জমি ক্রয়ের আগে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করিনি। পরবর্তীতে যখন জানতে পারি ডিপি পর্চায় আব্দুস ছালামের নাম নেই। তখন ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এই পর্চা সংশোধনের জন্য আবেদন করেছি।


মোরেলগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার সেখ মোস্তাক আহমেদ বলেন, ডিপি ৬৫৬নং খতিয়ানে দুই জন মালিক রয়েছে। ওখানে আব্দুস ছালামের কোন স্বত্ত্ব নেই। কোনো ভাবে হয়ত জাল পর্চা তৈরি করেছে প্রতারক চক্র।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ আব্দুল মালেক বলেন, মোঃ রফিকুল ইসলাম বাচ্চু ৪৪১৫নং দলিলের বিপরীতে ১৬১৭নং নামজারি বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন। আবেদনটি যাচাই-বাছাই শেষে তহশীলদারকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। আবেদনে উল্লেখিত তথ্যের সত্যতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত