দেড় মন ধানে একজন কামলা ॥ মিলছে না নায্যমূল্য

চিতলমারীতে ৩০ হাজার একর জমির বোরো ধান নিয়ে বিপাকে কৃষক

এস এস সাগর

আপডেট : ০৩:৩৪ পিএম, শনিবার, ৫ মে ২০১৮ | ৩৩৩৬

বাগেরহাটের চিতলমারীতে দেড় মন ধানের বিনিময়েও মিলছে না একজন ধান কাটার কামলা। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে এ জটিলতা দেখা দিয়েছে। ফলে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে শত’ শত’ মণ পাকা ধান ও খড়। সেই সাথে কিছু ধান ঘরে উঠলেও তারও নায্যমূল্য মিলছে না। তাই এ বছর প্রায় ৩০ হাজার একর জমির উঠতি (পাকা) বোরো ধান নিয়ে কৃষকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, কৃষি অধ্যুষিত এ অঞ্চলে এ বছর েেত যেমন রোগ-বালাই কম ছিল। তেমনি ছিলনা কোনো পোকার উপদ্রব। তাই আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর বেরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আর এ ফলন ঘরে তুলতে পারলে ধান বিক্রি করে মিটবে তাদের ধার-দেনা। সেজন্য প্রতিটি কৃষক পরিবারে সদস্যরা কাকডাকা ভোর থেকেই ধান কাটার কাজ শুরু করেন। বসে নেই পরিবারের মেয়ে-গৃহবধু ও ছোট্ট শিশুরাও। সবাই কাজে ব্যস্ত, একটুকু ফুসরত নেই কারো।

চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানিয়েছেন, এ বছর উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে মোট ব্লকের সংখ্যা ২১ টি। এরমধ্যে বড়বাড়িয়া ব্লকে এক হাজার ৯০১ একর, হাড়িয়ারঘোপ ৯২৬ একর, মাছুয়ারকু এক হাজার ৮৭৭ একর, কলাতলা এক হাজার ৩৫৮ একর, রহমতপুর এক হাজার ২৯৬ একর, শৈলদাহ এক হাজার ৩০৯ একর, হিজলা এক হাজার ৯৯ একর, কুড়ালতলা এক হাজার ৩৩৩ একর, শান্তিপুর এক হাজার ১৯৭ একর, শিবপুর ৬১৭ একর, বড়বাক ৬১৭ একর, চিতলমারী দুই হাজার ৭৪ একর, শ্রীরামপুর ৩ হাজার ৩০৯ একর, রায়গ্রাম ৩ হাজার ৮০৩ একর, চরবানিয়ারী ৯৮৮ একর, খড়মখালী এক হাজার ১১১ একর, চরডাকাতিয়া ৯২৬ একর, সন্তোষপুর ৭৯০ একর, দড়িউমাজুড়ি এক হাজার ২২২ একর ও কচুড়িয়া ব্লকে ৯৬৩ একর মোট ২৯ হাজার ৪৩০ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। তারমধ্যে ২৮ হাজার ৬৬০ একর জমিতে হাইব্রিড, উফশী ৬৫২ ও স্থানীয় জাতের ধান ১১৮ একর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। যা বিগত বছর গুলোর তুলনায় ১৩৫.৮৫ একর বেশী। আর প্রতিটি ক্ষেতেই এবছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ফলন ঠিক মত ঘরে তুলতে পারলে ও নায্যমূল্য পেলে অবশ্যই কৃষক লাভবান হবেন।

সুরশাইলের কৃষক শুধাংশু মন্ডল, মুন্না শেখ, কুরমনির রেজাউল খান, বুদ্ধ বসু, পরিমল বিশ্বাস, উত্তম বসু, শ্রীরামপুরের নিমাই মন্ডল, শেখর ভক্ত, পাটরপাড়ার মুজিবর বিশ্বাস, বোয়ালিয়ার টিটব বিশ্বাস ও খড়মখালীর পরিমল মজুমদারসহ অসংখ্য কৃষক বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ বছর চাষিরা সতর্স্ফুত ভাবে ধান চাষ করেছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও পোকার আক্রমণ না হওয়ার কারণে এ বছর বেরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আনন্দ উৎসবের মধ্যে দিয়ে বোরো ধান কাটা শুরু হয়। কিন্তু গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে এক হাজার টাকার বিনিময়েও একজন কামলা (মজুর) মিলছে না। যা দেড় মন ধানের দাম। তাই কামলার অভাবে এখানে ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে শত’ শত’ মণ পাকা ধান ও খড়।

তারা আরও জানান, কঠিন পরিশ্রমের পর কিছু ধান ঘরে উঠলেও তারও নায্যমূল্য মিলছে না কৃষকের ভাগ্যে। বর্তমানে এখানে প্রতি মন ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকা দরে। তাই এ বছর প্রায় ৩০ হাজার একর জমির বোরো ধান নিয়ে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন।

তবে চিতলমারী উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক আদুরী রানী ব্রক্ষ্ম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এ বছর সরকারি ভাবে প্রতিমন ধান এক হাজার ৪০ টাকা ও চাল এক হাজার ৫২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের কাছে এখনো কোন চিঠি আসেনি। চিঠি আসলে সরকারি ভাবে এখানে ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হবে। তখন কৃষক নায্যমূল্য পাবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত