নানা সমস্যায় জর্জরিত রামপালের আবাসন প্রকল্প

এম,এ সবুর রানা, রামপাল

আপডেট : ০৫:২৬ পিএম, শনিবার, ৫ মে ২০১৮ | ১২৭৯

রামপালে হতদরিদ্র ছিন্নমূল ভূমিহীন পরিবারের বসবাসের জন্য বিভিন্ন সময়ে সরকারীভাবে নির্মিত অধিকাংশ আবাসন প্রকল্প এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অগ্রাধিকার ভিত্তিক পূনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন সরকারের আমলে রামপাল উপজেলায় ১১ টি আবাসন প্রকল্প নির্মিত হয়েছে। এ প্রকল্পভূক্ত ঘর গুলির সুষ্ঠু রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থা ধারন করেছে। এ সব আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী সহস্্রাধীক পরিবারের প্রায় ৫ হাজার মানুষ বর্তমানে পানীয় জলের চরম কষ্টে ভূগছে। সেই সাথে ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। চরম স্বাস্থ্য ঝুকি নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এসব জনবসতির পাশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় জীবন জীবিকার চরম সংকট মাতায় নিয়ে দিনাতিপাত করছে এসব ছিন্নমূল পরিবারের সদস্যরা।

বাঁশতলী, শ্রীফলতলা, সিকিরডাঙ্গা-১,২ ও পারগোবিন্দপুরসহ বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প এলাকা সরেজমিন ঘুরে ও বসবাসকারী পরিবার সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে তারা খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বাঁশতলী গিয়ে দেখা গেছে, এখানে ৮ টি শেডে ১০ টি করে কক্ষ আছে। এখানে বাথ রুমের অবস্থা খুব খারাপ, টেঙ্কির ঢাকনা নেই, ময়লা বের হয়ে দূর্গন্ধ ছড়ায়। ঘরের চালের টিন সব মরিচা ধরে নস্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি পড়ে,ঘুনে ধরে ও উই পোকায় খেয়ে ফেলায় ঘরের কাঠামো খসে খসে পড়ছ্।ে ছেলে মেয়ে নিয়ে ঘরে থাকতে ভয় লাগে। চলাচলের জন্য রাস্তা না থাকায় বর্ষার সময়ে যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। মাত্র ৫০০ গজ দূরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকলেও আজও বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি এ আবাসন প্রকল্পে। প্রায় ১৫ বছর আগে সরকারীভাবে নির্মিত এ ঘর গুলি সংস্কার না করায় খুব নাজুক হয়ে পড়েছে। একই ধরনের সমস্যার কথা উঠে আসে ওই প্রকল্পের বাসিন্দা তানজিলা বেগম,ফরিদা বেগম, আঃ রাজ্জাক, নূর জাহান বেগমের বক্তব্যে।

সিকিরডাঙ্গা আবাসন প্রকল্প-২ এ গিয়ে দেখা যায়, এখানে ৬টি টিন সেড ব্রাকে ৬০ টি পরিবার বসবাস করেন। এখানের ল্যাট্রিন গুলোর অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। কয়েকটি ল্যাট্রিন সরাসরি পার্শবর্তী লেকের সাথে সংযুক্ত হয়ে পড়ায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সিকিরডাঙ্গা আবাসন প্রকল্প-১ এ ২টি ফেজে ১২০টি পরিবার বসবাস করেন। এর মধ্যে ১ বছর পূর্বে বিদ্যুতের সর্টসার্কিট দূর্ঘটনায় একটি ব্রাক পুড়ে সম্পুর্ন ভষ্মিভূত হয়ে যায়। এতে ১০ টি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন। তাৎক্ষনিকভাবে কিছু ত্রান সহায়তা পেলেও সেডটি এখনও পুনঃনির্মান করা হয়নি।

শ্রীফলতলা আবাসন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রায় একই চিত্র। ওই প্রকল্পে ২ টি পেজের ১৫ টি শেডে ১৫০ টি পরিবার বসবাস করেন। এর মধ্যে প্রায় ৮ বছর পূর্বে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় একটি শেড সম্পূর্ণ রূপে পুড়ে ভস্মিভূত হয়ে যায়। নামমাত্র যৎ সামান্য ত্রান সহায়তা ছাড়া আর কিছুই জোটেনি ক্ষতিগ্রস্থ ১০ টি পরিবারের সদস্যদের ভাগ্যে। এখানেও বাঁশতলী আবাসন প্রকল্পের অনুরূপ সমস্যা বিরাজমান।এ প্রকল্পের বাসিন্দা নাহার বেগম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান,বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জেঃ মঈনের আশার আলো প্রকল্পের মাধ্যমে গাভী পালন ও বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মান করা হয়। প্রকল্পটি ২ বছরের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে। এখানে ল্যাট্রিনগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঘরগুলিও নাজুক হয়ে পড়েছে।

পারগোন্দিপুর আবাসন প্রকল্প কয়েকটি ফেজে বেশকিছু ভবন ও সেড নির্মান করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭৫টি পরিবারের জন্য ১৫টি ভবন নির্মান করা হয়। ভবনের বাসিন্ধা ফাতেমা বেগম ও মিরাজ শেখ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, জলছাদ না থাকায় ভবনের ছাদ দিয়ে বর্ষার সময় পানি পড়ে। ল্যাট্রিনগুলোর অবস্থাও বেশ খারাপ। পুুকুরে ঘাট নাই, টিউবঅয়েল নষ্ট। ২নং ফেজে গিয়ে দেখা যায়, ২০১১ সালে ১৯টি টিন সেড ব্রাক নির্মান করা হয়। এতে প্রায় ৯৫টি পরিবার বসবাস করেন। এ ব্রাকের আঞ্জু শেখ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এখানে ৭ বছরেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। কোন রাস্তাঘাট ও নেই। বৃষ্টির সময় ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হয়। কথা হয়, ৩য় ফেজের বাসিন্ধা মোমেনা বেগমের সাথে তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এখানে ৪০ টি সেডের ৮০টি পরিবার বসবাস করে। ঘরের দরজা জানালা নষ্ট হয়ে গেছে। ২টি মাত্র টিউবঅয়েল থাকায় পানির খুব সমস্যা।

গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প-২ এর বাসিন্ধা ছায়রা বেগম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এখানে বিদ্যুৎ আছে কিন্তু ল্যাট্রিনগুলো নষ্ট। ৫/৬ টি পরিবার ঘর নিলেও এখানে থাকেন না। আশ্রয়ন প্রকল্প ফেজ-২ এর সভাপতি আনছার আলী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এখানে ২০টি সেডে ১’শ টি পরিবার বসবাস করেন। এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ নাই। বাথরুমগুলো নষ্ট, বর্ষার সময় ময়লা উপচে পড়ে। রাস্তাঘাট নাই। খুব কষ্ট করে এখানে থাকতে হয়। তিনি আরও জানান, মাদক ব্যবসা কিছুটা নিয়ন্ত্রনে থাকলেও ৮/১০ সন্ত্রাসী এখানে আনাগোনা করে। তিনি আবাসনের বাসিন্ধাদের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

আবাসন প্রকল্পগুলির সমস্যার বিষয় নিয়ে কথা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পাল এর সাথে তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, আমি পর্যায়ক্রমে আবাসন প্রকল্পগুলোতে গিয়ে বাসিন্ধাদের সাথে কথা বলে কিছু সমস্যার কথা জেনেছি। সরকারিভাবে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাগনের সাথে কথা বলে সমস্যার সমাধান করা হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মোঃ আবু সাইদ এর দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, আবাসনগুলোর সমস্যার সমাধানের জন্য একাধিকবার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখলে ও এখনও কোন প্রকার সহায়তা পাওয়া যায়নি তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন বরাদ্দ সহায়তা দিয়ে বাসিন্ধাদের সমস্যার সমাধান করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত