৫০ হাজার টাকা নিয়ে ১৪ লাখ টাকার মাছ ছেড়ে দিল বনবিভাগ

মাসুদ রানা, মংলা

আপডেট : ০৬:৩২ পিএম, বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১০১৮

বঙ্গোপসাগর থেকে সামুদ্রিক মাছ নিয়ে ফিরে আসার সময় অস্ত্রের ভয় দিয়ে একটি ফিশিং ভ্যাসেল (মাছ ধরার জাহাজ) আটক করে বনবিভাগ। পরে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ১৪ লাখ টাকার মাছসহ “এফ ভি মেটাডোর” নামে দুই কোটি টাকার সেই জাহাজ ছেড়ে দেয়া হয়। তবে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ষ্টেশন কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম দাবি করেন, বনবিভাগ অনুমোদিত জরিমানা নিয়ে সবকিছু ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল ৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে সুন্দরবনের পশুর নদীতে জয়মনি এলাকা থেকে মাছ বোঝাই এ ফিশিং ট্রালারটি আটক করে ছেড়ে দেয়া হয়।


পুর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারি বনসংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ শাহিন কবির বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বঙ্গোপসাগর থেকে ফিরে আসার সময় বৃহস্পতিবার ভোরে পশুর নদীর জয়মনি থেকে অভিযান চালিয়ে বনরক্ষীরা একটি ফিশিং ভ্যাসেল (মাছ ধরার জাহাজ) আটক করে। ওই বোর্টে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ছিল। তিনি বলেন, সাগরে মাছ ধরার অনুমতি থাকলেও রিজার্ভ ফরেষ্ট (সুন্দরবন) এর ভিতরে চলচলের জন্য বনবিভাগের অনুমতি ছিলনা। এ কারনেই ওই ফিশিং ভ্যাসেলটি আটক করা হয়েছে। পরে কাগজপত্র (সার্ভে কাগজ, মেরিন ফিশারিজের অনুমতি পত্র) যাচাইয়ের পর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা নিয়ে নাবিকসহ ১৫ জন ও মাছ বোঝাই বোটটি ছেড়ে দেয়া হয়।


চাঁদপাই রেঞ্জের ষ্টেশন কর্মকর্তা মোঃ কামরুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, “জরিমানা দেড় লাখ টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত থাকলেও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদ্ববিরে মাত্র ৫০ হাজার টাকায় ছেড়ে দিতে হয়েছে। এটা নিয়ে আপনারা আবার লেখালেখি করেন না।


এদিকে এফ ভি মেটাডোর ফিশিং ভ্যাসেল (মাছ ধরা জাহাজ) এর মাষ্টার মোঃ এনায়েত হোসেন খাঁন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমরা প্রায় ২০ বছর ধরে সমুদ্র থেকে মাছ ধরে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে পশুর নদী হয়ে খুলনায় চলাচল করছি। কিন্তু কখনো বনবিভাগের অনুমতি প্রয়োজন হয়নি। তিনি আরো বলেন, আমাদের সমুদ্র মাছ ধরার জন্য মেরিন ফিশারিজের অনুমতি এবং মাছ ধরার জাহাজের সার্ভে (সমুদ্রে চলাচলের রুট পারমিশন) আনুসাঙ্গিক সব কাগজ পত্র রয়েছে। হঠাৎ গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে অস্ত্রের ভয় দিয়ে জাহাজসহ আমাদের পাঁচ ঘন্টা আটকে রাখা হয়েছে। পরে জোর করে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। ওই জাহাজে সাত হাজার কেজিরমত বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ছিল বলে জানান তিনি।


অস্ত্র দেখিয়ে আটকের বিষয়টি স্বীকার করেন চাঁদপাই রেঞ্জের ষ্টেশন কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদের (মাছ ধরার জাহাজে থাকা নাবিকদের) সিগনাল দিয়ে গতিরোধের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে অস্ত্র তাক করেছিলাম।


সুন্দরবন সহ ব্যবস্থাপনা সংগঠনের (সিএমসি) সহ-সভাপতি শুকুরুজ্জামান হাওলাদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বনবিভাগের কর্মকর্তাদের কথা বলে আর লাভ কি? এখানে (চাঁদপাই ষ্টেশন) কিছু অসাধু কর্মকর্তা রয়েছেন যারা দূর্ণীতি ছাড়া কিছুই বোঝেন না। তিনি আরো বলেন, আজকের ঘটনাই দেখেন কিভাবে মানুষকে হয়রানি করে তারা টাকা আদায় করেন।


পুর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, পশুরনদী থেকে একটি মাছ বোঝাই ফিশিং বোর্ট আটক করা হয়েছে। তবে এদের কাছ থেকে কেউ যদি কোন সুবিধা গ্রহন করে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত