কচুয়ায় বঙ্গবন্ধুর পছন্দের “লক্ষীদিঘা” ধানের বাম্পার ফলন

আলী আকবর টুটুল

আপডেট : ১১:৪০ পিএম, রোববার, ১১ নভেম্বর ২০১৮ | ৮৬৯

বাগেরহাটের কচুয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পছন্দের “লক্ষীদিঘা” ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিলুপ্ত প্রায় এই লক্ষীদিঘা ধানের জাতটি জেলার কচুয়া উপজেলার দরিচর মালিপাটন এলাকায় চাষ করা হয়েছে। গ্রীণ বাগেরহাট অর্গানিক এ্যাগ্রো লিঃ নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলকভাবে এ ধান চাষ করে। এতে বাম্পার ফলন হয়েছে বলে তারা জানান। একর প্রতি ৩৫ মন ফলন হয়েছে এ ধান। আগামীতে এ ধান দেশের সকল এলাকায় ছড়িয়ে দিতে চায় কৃষি বিভাগ ও গবেষকরা।


ধানটি স্বাভাবিক ধানের চেয়ে একটু বেশি লম্বা হওয়ায় একসময় গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেসব জায়গায় মাঠে বেশিরভাগ সময় অতিরিক্ত পানি থাকতো অর্থাৎ অনেক নিচু জমি, ডোবা-নালা, বা বিলে “লক্ষীদিঘা” ধানের চাষ হত। তখন একরে এ ধানের ফলন ছিল মাত্র ১৫ থেকে ২০ মন। ফলন কম হওয়া ও নিচু জমি হ্রাস পাওয়ার কারণে ধীরে ধীরে এ ধানের চাষ কমে যায় এ অঞ্চলে। ২০১৪ সালের ২০ জুলাই কৃষিবিদদের এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু “লক্ষীদিঘা” ধান পছন্দ করতেন বলে ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই কথার প্রেক্ষিতে মাটি ও ধান গবেষক মুক্তিযোদ্ধা হাশেম জামান “লক্ষীদিঘা” ধানের উপর গবেষনা করেন। ফরিদপুরের এক প্রত্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলক ভাবে কচুয়ায় উচু জমিতে গ্রীণ বাগেরহাট অর্গানিক এ্যাগ্রো-র মাধ্যমে এ ধানের চাষ শুরু করেন। রোপন থেকে শুরু করে দীর্ঘ ১‘শ ৩৫ দিনের পরিচর্যায় শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কাটেন গ্রীণ বাগেরহাট অর্গানিক এ্যাগ্রো লিঃ এর কৃষকরা।


সরজমিনে দেখা যায়, মাঠে ধান পেকেছে। চাষীরা ধান কাটছে। পাকা ধান কর্তন দেখতে ও ধানের ফলন পরিমাপের জন্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন, বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আফতাব উদ্দিন, গবেষক হাশেম জামান, কচুয়া উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা বিভাষ চন্দ্র সাহা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোকাররম হোসেন, গ্রীণ বাগেরহাট অর্গানিক এ্যাগ্রো লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী আকবর মিন্টুসহ আরও অনেকে।


গবেষক হাশেম জামান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বঙ্গবন্ধু “লক্ষীদিঘা” ধান পছন্দ করতেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখে এমন কথা শুনে এ ধানের উপর গবেষনা শুরু করি। গবেষনা করে দেখেছি এ ধান আজ প্রায় বিলুপ্ত। তবে এ ধানের চালের ভাত খুবই সুস্বাদু। ফলন কম হওয়ায় বিল অঞ্চলে সামান্য পরিমানে কিছু কৃষক চাষ করেন এ ধান। আমি গবেষনা শূরু করি এ ধান কিভাবে উচু জমিতে চাষ করা যায়। অবশেষে এবছরের জুন মাসের শেষে “রেইজড বেড ফারো এ্যান্ড টুইন প্লান্টেশন টেকনিকে” উচু জমিতে এ ধানের চাষ শুরু করি। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধান কাটলাম। ধান পরিমাপ করে দেখেছি একরে প্রায় ৩৫ মন ফলন হয়েছে। আমরা এ ধাণের ফলনে খুবই সন্তষ্ট। আমরা চাই সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন বঙ্গবন্ধুর পছন্দের এ ধান দেশের সকল মানুষের কাছে পৌছে দিতে।


গ্রীণ বাগেরহাট অর্গানিক এ্যাগ্রো লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী আকবর মিন্টু বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গবেষক হাশেম জামানের সহযোগিতায় “লক্ষীদিঘা” ধানের চাষ করি। পরীক্ষামূলকভাবে ২.৫ একর জমিতে চাষ করে আমরা ভাল ফলন পেয়েছি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ধান আমরা পরীক্ষামূলকভাবে অর্গানিক পদ্ধতিতে কোন প্রকার রাসায়নিক কিটনাশক ও সার ছাড়া চাষ করছি। আমরা চাই দেশের মানুষ রাসায়নিক কিটনাশক ও সার মুক্ত খাবার গ্রহন করুক।


বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আফতাব উদ্দিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ক্রপ কাটিংয়ে আসলাম। এখানে দেখলাম ধানটির জীবনকাল ১‘শ ৩৫ দিন। ধানটি সাধারণত ফোটেড (বিল) জমিতে চাষ করা হত। কিন্তু এখানে উচু জমিতে চাষ করে হেক্টর প্রতি ৪ টন ফলন হয়েছে। যা আমরা আশাবাদী। প্রচলিত আছে এ ধানের চালের ভাত খুব সুস্বাদু। আমরা চেষ্টা করলে একটি ভাল স্বাদের ধান মানুষকে উপহার দিতে পারবো।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত