২৫লাখ টাকার সম্পদ লুট, ১৪ জেলে আহত

বঙ্গোপসাগরে ফিশিং ট্রলারে ডাকাতি

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৬:২২ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০১৯ | ১৮৭৬

গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় শরণখোলার এফবি রিসান-১ নামের একটি ফিশিং ট্রলারে জলদস্যুরা হানা দিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকার সম্পদ লুটে নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দস্যুদের হামলায় ট্রলারের ১৪ জেলে আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল ৩ টার দিকে শরণখোলার রাজৈর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ট্রলারটি ফিরে এসেছে।

মঙ্গলবার (২২ জানয়ারি) রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রামের কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরের জাহাজখাড়ী এলাকায় এ দস্যুতার ঘটনা ঘটে বলে ফিরে আসা জেলেরা জানিয়েছেন। আহত জেলেদের শরণখোলায় এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এঘটনায় শরণখোলা থানায় জিডি করবেন বলে ট্র্রলার মালিক মো. মনির হাওলাদার জানিয়েছেন।


দস্যুতার শিকার হওয়া ট্রলারের মাঝি মো. নূর ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তারা গত ১২ জানয়ারি রাতে ১৪ জন জেলেসহ শরণখোলা থেকে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে রওনা হন। মাছ ধরতে ধরতে একপর্যায়ে তারা চট্টগ্রামের কাছাকাছি গভীর বঙ্গোপসাগরে চলে যান। গত রবিবার (২০জানুয়ারি) প্রথম চালানের মাছ চট্টগ্রামের একটি আড়তে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে আবার তারা সাগরে ধরতে নামেন। ২২ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে জাহাজখাড়ী এলাকায় মাছ ধরার সময় ১৫-১৬ জনের একটি দস্যুদল নামবিহীন একটি ট্রলারে এসে তাদের ট্রলারে হানা দেয়। দস্যুরা ট্রলারে উঠেই জেলেদের মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে দস্যুরা ট্রলারের সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আহরিত তিন হাজার ইলিশ মাছ, ৪০ পিচ জাল, দুইটি জেনারেটর, দুইটি ব্যাটারী, ১৪টি মোবাইল সেট, নগদ এক লাখ টাকা, ট্রলারে বিভিন্ন যন্ত্রাংশসহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়।

ট্রলার মাঝি আরো জানান, দস্যুরা মারধর করে ৬-৭জন জেলেকে সাগরে ফেলে দেয়। জালের দড়ি ও ফ্লোট (প্লাষ্টিকের ভাসনা) ধরে দুই-তিন ঘন্টা সাগরে ভেসে থাকার পর তাদের উদ্ধার করা হয়। দস্যুদের মধ্যে ৫-৬ জনের মুখোশ পরা ছিল। তবে, দস্যুবাহিনীর নাম জানা যায়নি।

ট্রলার মালিক মো. মনির হাওলাদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বুধবার সকালে ট্রলারের মিস্ত্রি আজিজুলের মোবাইলে ফোন করলে চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে অন্য একজন রিসিভ করে। ট্রলারের খবর জানতে চাইলে কিছু না বলেই ফোন কেটে দেয়। এভাবে সারাদিন বিভিন্ন মোবাইল থেকে ওই নাম্বারে কল করা হয়, কিন্তু কোনো উত্তর না পাওয়ায় বুঝতে পারি ট্রলারটি কোনো বিপদে পড়েছে। ট্র্রলারের ইঞ্জিন আর জ্বালানী তেল ছাড়া সবকিছুই দস্যুরা নিয়ে গেছে। এব্যাপারে শরণখোলা থানায় অভিযোগ করা হবে।

আহত জেলেরা হলেন, ট্রলারের মিস্ত্রি আজিজুল, মাঝি নুর ইসলাম, জেলে ইমাম হোসেন, নিয়ামুল, আ. রাজ্জাক, শামীম, মাসুম হাওলাদার, আ. আজিজ, রফিক শেখ, সাহেব আলী, আ.রব,মাসুম,বাচ্চু ও আনোয়ার হোসেন। এদের বাড়ি বাগেরহাট, ভোলা ও শরণখোলার বিভিন্ন এলাকায় বলে ট্রলার মালিক জানিয়েছেন।

শরণখোলা উপজেলার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমাদের পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন অঞ্চলের দস্যুরা আত্মসমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় এখানে জেলেরা এখন নিরাপদে মাছ ধরছে। কিন্তু পূর্ব বঙ্গোপসাগরে এখনো দস্যুরা সক্রিয় রয়েছে। শরণখোলার ট্রলারটি পূর্ব সাগরে ঢুকে পড়ায় দস্যুদের কবলে পড়ে সবকিছু হারিয়েছে। ওই অঞ্চলের দস্যু দমনে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।



শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার সরকার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এব্যাপারে কেউ থানায় আসেনি। এলে তাদেরকে আইনগত সহায়তা দেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত