সহপাঠীরা দেখলে ভয় পায় তাই স্কুলে যাওয়া বন্ধ

শিশু স্বপ্নাকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চায় পরিবারটি

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৫:৩৯ পিএম, বুধবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ | ১৭৯৯

বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের উত্তর তাফালবাড়ী গ্রামের হতদরিদ্র কৃষি শ্রমিক সমীর চন্দ্র হালদারের মেয়ে স্বপ্না রাণী (৭)। তার জিহ্বায় পচন ধরেছে। জিহবা ফুলে এমন হয়েছে যা আর মুখের ভেতরে নিতে পারেনা সে। আড়াই থেকে তিন ইঞ্চি বাইরে ঝুলে থাকে সবসময়। কথা বলাতো দুরের কথা, তরল খাবার ছাড়া আর কিছুই খেতে পারেনা। সারাক্ষণ লালা ঝরতে থাকে। দুঃস্বহ জ্বালাযন্ত্রনা জিবে। দিনের বেলায় সবার সঙ্গে মিশে যন্ত্রনা কিছুটা ভুলে থাকলেও রাতে যন্ত্রনাটা বেড়ে যায়। ঘুমোতে পারেনা। চিকিৎসার অভাবে প্রায় পাঁচ বছর ধরে এমন দুঃস্বহ যন্ত্রনা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে ফুটফুটে মেয়েটিকে।


স্থানীয় উত্তর তাফালবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তো স্বপ্না। এ অবস্থায় স্কুলের কেউ তার সঙ্গে মিশতে চায়না। জিবের ভয়ঙ্কর অবস্থায় তাকে দেখলে সহপাঠীরা ভয় পায়। একারণে এখন তাকে স্কুলে পাঠায়না পরিবার। চিকিৎকরা বলছেন, স্বপ্নার জিবে ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে। ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা পেলে ভালো করা সম্ভব। কিন্তু হতদরিদ্র কৃষি শ্রমিক বাবার পক্ষে মেয়ের চিকিৎসার টাকা যোগাড় করা কোনোভাবেই সম্ভব না।


সরেজমিনে স্বপ্নাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ ঘর। মা দিপু রাণী হালদার বাড়ির কাজ করছেন। বাবা সমীর হালদার অন্যত্র কাজে যাওয়ায় তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। স্বপ্না বাড়ির অন্য ছেলেমেয়েদের সাথে খেলা করছে।

এসময় দিপু রাণী হালাদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, তার চার মেয়ে, এক ছেলের মধ্যে স্বপ্না দ্বিতীয়। স্বপ্নার বয়স যখন দুই বছর তখন জিহবার নিচ থেকে কালো জামের মতো কি যেনো একটা দেখা দেয়। সেসময় স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা বলেন বাইরে নিয়ে অপারেশন করাতে। তখন খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা টিউমার হিসেবে সেটা অপারেশন করে। তাতে ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। মাসখানেক ভালো থাকার পর হঠাৎ করে জিহবা ফুলে ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে যায়। প্রচন্ড যন্ত্রনা হয়। ওর কষ্টে রাতে আমরাও ঘুমোতে পারিনা। বেশ কয়েকদিন ওর অবস্থা দেখে ঘরে কান্নাকাটি পড়ে গেছে।


দিপু রানী হালদার আরো বলেন, স্বপ্না স্কুলে যেতে চায়। কিন্তু সাবাই ওকে দেখে ভয় পায়, মিশতে চায়না। তাই ওকে স্কুলে যেতে দিইনা। স্বামী অন্যের কাজ করে যা পান তা দিয়ে সংসার চালাতেই কষ্ট হয়। চিকিৎসা করানো টাকা কোথায় পাবো। শুনেছি প্রথানমন্ত্রী অসহায়, অসুস্থ মানুষের চিকিৎসার জন্য সাহায্য করেন। আমার মেয়েটাকেও যদি একটু চিকিৎসায় সাহায্য করতেন তাহলে ওকে বাঁচানো যেতো। ও আবার স্কুলে যেতে পারতো!

স্বপ্নার এমন রোগের ব্যাপারে কথা হয় সদ্য বিদায়ী শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমদ্দারের সঙ্গে। তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, মেয়েটির জিহবায় টিউমার থেকে এমন হয়েছে। দীর্ঘদিন এ অবস্থায় এখন সেটি ক্যান্সারেও রূপ নিতে পারে। জিহ্বার গ্রোথ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্যান্সার হলে তা কোন পর্যায় আছে পরীক্ষা না করে বলা যাবেনা। তবে, উন্নত চিকিৎসা পেলে ভালো করা সম্ভব।


স্বপ্নাকে সাহায্য পাঠানো ঠিকানা- সমীর হালদার, সঞ্চয়ী হিসাব নং-৭৩৮১, জনতা ব্যাংক, শরণখোলা শাখা, বাগেরহাট। মোবাইল নম্বর- ০১৭৯৬২৩৭৮৯০/০১৯৫১৫১৪৯৫১।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত