পূর্ণস্ন্যানের মধ্য দিয়ে

শেষ হয়েছে সুন্দরবনের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব

শেখ আহসানুল করিম

আপডেট : ০১:২৭ পিএম, শনিবার, ৪ নভেম্বর ২০১৭ | ৭৫৭

দেড়শ বছরের পুরনো সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে তিনদিন ব্যাপী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব পূর্ণস্ন্যানের মধ্যে দিয়ে শনিবার সকালে শেষ হয়েছে। হাজার হাজার পূর্ণার্থী সকালে সূর্যোদয়ের আগে সাগরের প্রথম জোয়ারে পূর্ণস্ন্যান করে তাদের মনোবাসনা পূণের্র প্রার্থনা করেন। গত ২ নভেম্বর এই রাস উৎসব শুরু হয়।

প্রতি বছর কার্ত্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের আলোরকোলে এই রাস উৎসব শুরু হয়। সুন্দরবনের রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী, পুরুষ ও পূর্ণাথীসহ জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ এই উৎসবে সমাবেত হন। তিনদিনের এই উৎসব স্থলে দোকানিরা নানা পসরা সাজিয়ে বসেন।


রাস উৎসবের পূর্ণস্ন্যানের সমাপনী অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অনাান্যদের মধ্যে ছিলেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়, বন সংরক্ষক (সিএফ) আমির হোসাইন চৌধুরী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে রাস উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সুন্দরবন বিভাগে মোট আটটি প্রবেশ দ্বার প্রস্তুত রাখে। প্রবেশ দ্বারগুলো হচ্ছে, ঢাংমারী, বগী, কচিখালী, শরণখোলা স্টেশন, বুড়িগোয়ালিনি, কৈখালী, কয়রা কাশিয়াবাদ এবং নলিয়ান। এসব স্থান থেকে বনবিভাগের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। গত ২ নভেম্বর সকাল থেকে পূর্ণার্থীরা অনুমতি (পাশপারমিট) নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেন।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে তিনদিন ব্যাপী রাস উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। রাস উৎসবকে ঘিরে সুন্দরবনে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পূর্ণার্থীদের যাতে উৎসবে যোগ দিতে কোন অসুবিধা না হয় তার জন্য র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বনবিভাগ ছিল তৎপর।

রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ দে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, শনিবার সকালে সূর্যোদয়ের আগে সাগরের প্রথম জোয়ারে পূর্ণস্ন্যান

করে তাদের মনো বাসনা যেন পূর্ণ হয় তার প্রার্থনা করেন। কার্ত্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূর্ণলাভের আশায় এখানে জড়ো হয়েছিলেন। সূর্যোদয়ের আগে সাগরে জোয়ারের পানিতে পূর্ণস্ন্যান করলে পাপমোচন হয়ে থাকে বলে তারা বিশ^াস করেন। এখানে প্রতিদিন পূজা অর্চনা, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) আমির হোসাইন চৌধুরী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে তিনদিন ব্যাপী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব পূর্ণস্ন্যানের মধ্যে দিয়ে শনিবার সকালে শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়েছে। সরকারের মন্ত্রী, প্রশাসনের কর্মকর্তারাসহ হাজার হাজার পূর্ণার্থী ও পর্যটকরা এই রাস উৎসবে অংশ নেন। রাস উৎসব স্থল সব ধর্মের মানুষের এক মহামিলন মেলায় পরিণত হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত