বিশুদ্ধ পানি সংকটে চিতলমারীর মুনিপাড়ার বাসিন্দারা

চিতলমারী সংবাদদাতা

আপডেট : ১১:০৭ পিএম, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০১৭ | ১০৩১

শান্তিতে আছে শান্তিপুর মুনিপাড়ার বাসিন্দারা, তবে রয়েছে তাদের পানীয়জলের সংকট। চিতলমারী উপজেলার হিজলা ইউনিয়নের মধ্য-শান্তিপুর গ্রামের মুনিপাড়ায় ৪৮ পরিবারের বসবাস। এই সমাজের চোঁখে তারা দলিত হরিজন সম্প্রদায়। পেশায় তারা কেউ বাঁশ-বেতের কারিগর-তৈরী করেন কুলা, চালন, ধামা, সের, পৈকাসহ প্রাচীন পাত্রসমূহ, কেউ আছেন জুতা পালিশ কিংবা নরসুন্দর পেশায়। সমাজের ভদ্রলোকদের আরো সুন্দর রাখার, সৌন্দর্য্যরে ছোয়া দেয়ার কাজে যারা নিয়োজিত, প্রচলিত সমাজের সেই ভদ্রলোকদের চোখেই তাঁরা দলিত হরিজন! এ নিয়ে তাদের মনে নেই কোন দুঃখ, নেই কোন উচ্চাকাঙ্খা কিংবা অভিলাস। তাদের প্রত্যেকটি পরিবারের আছে বসতভিটে, টিনের ছাউনি দেয়া সেমিপাকা ঘর, গোয়ালে আছে গরু। প্রার্থণার জন্য আছে প্রায় পাঁচশ বছরের প্রাচীন বটগাছ ও মন্দির।

সরেজমিনে মধ্যশান্তিপুর মুনিপাড়ায় প্রবেশ মুখে দেখা যায়, মধ্যবয়সী মন্মথ চন্দ্র বিশ্বাস ও গুরুদাসের মতো প্রায় প্রত্যেক পরিবারের লোকেরা বাঁশ-বেতের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। গুরুদাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এই কাজে তাদের গড়ে প্রতিদিন তিনশ’ টাকা আয় হয়। তা দিয়ে সংসারের খরচ মিটে যায়। ৪/৫টি এনজিও তাদের লোন দেয়। তবে পানীয়জলের চরম কষ্টে রয়েছে মুনিপাড়ার শিশু, বৃদ্ধসহ প্রায় ২৫০ জন মানুষ।

দলিত বেদে জনগোষ্ঠির জীবনমান নামক স্থানীয় সংগঠনের সভানেত্রী ঝর্ণা বিশ্বাসসহ অন্যান্যরা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এক কলস পানীয়জলের জন্য প্রতিদিন প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ হেটে যেতে হয় পার্শ্ববর্তী উপজেলা নাজিরপুরের চর-মাটিভাঙ্গায়। অর্থাৎ এক কলস পানির জন্য প্রতিদিন একজন নারীকে তিন কিলোমিটার পথ হাটতে হয়। পানির এই কষ্ট লাঘবের জন্য চিতলমারী উপজেলা স্যানিটেশন অফিসের ভূমিকা নিষ্ক্রিয়। এ বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার উপজেলা স্যানিটেশন অফিসে গিয়ে অফিসারকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনটিও তিনি রিসিভ করেননি ।

মুনিপাড়ার মাতব্বর বিমল বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বৈশাখী বিশ্বাস (৭) ও প্রিতম বিশ্বাস (৪) নামের দুই ভাইবোনের মা-বাবা উভয়ই মারা গেছে ৩-৪ বছর আগে। তারা এখন বৃদ্ধ দাদু-ঠাকুরমার কাছে থাকে। পিতৃ-মাতৃহীন এই দুই শিশুসহ তাদের পাড়ায় অনাথ রয়েছে চারজন। এছাড়া, প্রতিবন্ধি চারজন এবং বৃদ্ধ রয়েছেন আটজন। অসহায় শিশুদের জন্য নেই কোন সহায়তা।

মুনিপাড়ার মাঝে রয়েছে প্রসস্থ চত্তর, তার উত্তরদিকে বিশালদেহী বটবৃক্ষ দাড়িয়ে গভীর মায়ার বন্ধনে যেন আগলে রেখেছে সমাজের দলিতদের। বটবৃক্ষের কোলে প্রাচীনকালে ছিল কালীমন্দির। এখন তার পাশে নতুনভাবে গড়া মন্দিরে অনুষ্ঠান হয়। মন্মথ চন্দ্র বিশ্বাস ও গুরুদাসের মতে, বটবৃক্ষের বয়স পাঁচশত বছরের বেশি হবে। বৃক্ষটির কোন ডাল-পাতা মুনিপাড়ার কেউ পোড়ায়না বা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করেনা। শিশুরা ওই বৃক্ষতলে নিশ্চিন্তে বিচরণ ও খেলাধুলা করে বেড়ায়।

এলাকাবাসির দাবী তাদের পানির সমস্যা যাতে দ্রুত সমাধান হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত