পুরো জাতি যেমন পরাজিত তেমনি প্রগতিশীল নারীরাসহ

তাছলিমার কাছে আমরা সকলেই আসামি !

গাজী ইলিয়াস

আপডেট : ০৫:০৯ পিএম, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৯ | ১০৩২

কান্না আর রাগ দুটোই এখন আসছে এবং উঠছে। ইচ্ছে করছে এটম মেরে পুরো দেশকে নিশ্চিহ্ন করে দিই। কি ধর্ম মানি? কিসের আদালত কিসের বিচার কিসের কি? সবকিছু যেন আজ মূল্যহীন। খুব কাছ থেকেই জাতীয় মসজিদের জায়গায় বসবাসরত কিছু এতিম অসহায় শিশুদের বসবাস পর্যবেক্ষণ করে আসছি দীর্ঘ দিন ধরে। তাছলিমা ও তার ছোট ভাই বিপ্লবও সেখানে বাস করে। মা তাদের পাগল আসক্ত। কই থাকে খোঁজ নেই। বাবার কোন পাত্তা নেই। জন্মই যেন কলন্ক !

আরও অনেক অসহায় শিশুর সাথে তারা ভাইবোনও বায়তুল মোকাররম ও স্টেডিয়াম এলাকায় বসবাস করে। তাদের সকলের সাথে আমার সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের! গত তিন চার বছর ধরে ঈদের দিন এরা সকলে দলবেঁধে আমার বাসায় আসে। আমার ফেসবুকের বন্ধুরা সকলেই এ সংক্রান্ত অনেক কিছুই জানেন। ঈদের আগে তাদের সকলকে নিয়ে আমি শপিং এ যায়। তাদের আনন্দ আমার কলিজা জুড়িয়ে যায়। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত এ আনন্দ যেন আমার থাকে সে দোয়া করবেন।

এ তাছলিমাকে বড় হতে দেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী মহোদয় এর পত্নীর পরিচালিত নারী শিশু এতিমখানায় আমি গার্ডিয়ান হয়ে ভর্তি করিয়েছিলাম। ভাবির সাথে আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখা করে অনুরোধ করে তাছলিমাকে ঊনার ওখানে রেখেছিলাম। অনাথ মেয়েদের জন্য দারুণ মহব্বতের এক প্রতিষ্ঠান তিনি করেছেন। পুরুষ্কার নিশ্চয়ই তিনি পাচ্ছেন। তাছলিমা এখানে সাত আট মাস ছিল মনেহয়। সমস্যা ছিল সে বারবার পালিয়ে তার ছোট ভাই বিপ্লবের কাছে চলে আসতো। প্রথমবার পালানোর পর ভেবেছিলাম ভাইয়ের মায়ায় পালিয়ে এসেছে। কর্তৃপক্ষকে অনেক অনুরোধ করে আবারও নিয়ে দিই। কিছুদিন পর আবারও পালায়। হোস্টেল সুপার আমাকে বলে সে নাকি সিগারেট খায়। হোস্টেলের বাথরুমে সিগারেটের গন্ধ পাই। স্কুলে গেলে মানুষের কাছে টাকা চেয়ে সিগারেট কিনে আর চুরি করে।

তৃতীয়বার পালানোর পর কর্তৃপক্ষ আর আমার অনুরোধ শুনেনি। তখন বুঝলাম সে আসক্ত তার চিকিৎসা প্রয়োজন। তা করবে কে? আজও পথের লক্ষ শিশু আসক্ত। সকলেই এতিম অসহায় শিশু। আজ জাতির কাছে প্রশ্ন করতে চাই তার এ আসক্তি এবং এ দূরাবস্থার জন্য কে দায়ী? আজ একজন মেয়ে ধর্ষণ হলে পুরো জাতি ফেটে পড়ে! আমি গাজী ইলিয়াছ বলছি, এর চেয়ে অনেক ছোট অসহায় অনাথ এতিম মেয়ে প্রায় প্রতিদিনই শত শত ধর্ষণ হয়। এ জাতীয় মসজিদের নিকটেই তাসলিমার বাচ্চা হয়েছে সে বাচ্চা আছাড় মেরে নাকি মেরে ফেলেছে। গত পরষু শুনতে পেলাম তাছলিমা জেলে। অপরাধ গাঁজা বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। এবার বলুন আসামি কে? তাসলিমা না আমরা সমগ্র জাতি?

আমি আসামী বলবো সক্ষম জনগন সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলকেই। তার মধ্যে আমিও আছি। এ রকম জাতীয় মসজিদের পাশাপাশি তাসলিমাদের এ জীবন যাপন থাকলে আমাদের দোয়া কি কবুল হবে? আমি ১০০% বলতে পারি কখনো না। আজ প্রগতিশীল নারীরা কি আন্দোলন যে করেন? শুধু নুসরাতকে দেখতে পাই অসহায় এতিম শত শত তাসলিমা তাদের চোখে পড়ে না? চোখে পড়লে কখনো নুসরাতের মতো অনেক মেয়ের জীবনের এ পরিনতি হতো না। এগুলো হলো মহান আল্লাহর গজব আমাদের সত্য শিক্ষার জন্য। সকল শিশুই এক । সকল কিশোর কিশোরী এক এবং অভিন্ন। ভিন্ন করে দেখছি বলেই আজ এতো অশান্তি। দেশ দরদী ড. কামাল হোসেন স্যার কি বিপ্লবের বোন অসহায় তাসলিমার জামিনের জন্য কি কোর্টে দাঁড়াবেন? কখনো না? ঊনাদের চোখে তো এগুলো পড়ে না। ঊনাদের দরকার টাকা আর ক্ষমতা। মনে রাখবেন, এ সকল অসহায় অনাথ শিশুদের কোর্ট ও উকিল সবকিছুই হলেন মহান আল্লাহ এবং এ সকল অনাথ শিশুদের জন্য জান্নাত অবধারিতভাবে অপেক্ষমান এতে কোন সন্দেহ আছে বলে মনেকরি না। তারা পাশ আমরা নিকৃষ্টতর ফেল করে চলছি। জঘন্যতম অবিচারের এক দুনিয়ায় বসবাস করছি। যেখানে জাতীয় মসজিদের পাশে শিশু নির্যাতিত হয়। মাননীয় আপাকে বিনয়ের সহিত অনুরোধ করি এতদসংশ্লিষ্ট সকলকেই ফায়ার করুন! অসহায় এতিম শিশুদের এ জীবন কোন মতেই মেনে নেওয়া যায় না।

ধর্ষণ, দূর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো মহান আল্লাহর গজব। এগুলোর গোড়ার ঔষধ দিতে আগায় দিলে কখনো হবে না? এ পর্যন্ত বিচার কি কম হয়েছে কমছে না কেন? অসহায় এতিম শিশু সম্পর্কে ধর্ম কি বলেছে ? রাসুল(সঃ) কি বলেছেন? তা ভালো করে পড়ুন অনুধাবন করুন এবং ভেবে দেখুন আমরা কি করছি? যাঁরা এরজন্য দায়ী তাদের শাস্তির সম্মুখীন করুন তাহলে মহান আল্লাহর অনুকূল সম্মতি পাবেন নতুবা কখনো নয়! আল্লাহ হাফেজ। দোয়া করবেন কিছু করতে না পারলেও অসহায় অনাথ শিশুর পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরে যেন মরতে পারি। এতিম শিশুদের এ রকম নিরব যন্ত্রণা কোনমতেই মেনে নেওয়া যায় না! নতুবা তাদের সহ আমাকে ব্রাশফায়ার করুন! অসম্ভব রাগ উঠে! ক্ষমা করবেন! নীজেকে কন্ট্রোল করাও আজ বড় দায়। কোন শিক্ষায় আমরা শিক্ষিত?

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত