জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পুকুর খনন না করেই হস্তান্তরের চেষ্টা

মোংলায় সুপেয় পানির জন্য হাঁহাকার

মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৯:০২ পিএম, শনিবার, ১১ মে ২০১৯ | ১২৩৭

মোংলা পোর্ট পৌরসভায় পানি শোধন ও সরবরাহ কেন্দ্রের পুকুরের পানি তলানিতে ঠেকেছে। পবিত্র রমজান চলছে আর বৃষ্টিও দেখা নেই। তাই সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে, হাহাকার করছে একটু মিস্টি খাবার পানির জন্য। পানির অভাবে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে দেড় লাধিকের ও বেশী পৌরবাসী। অনেক পৌরবাসীর অভিযোগ, পানি শোধনাগার কেন্দ্রে মাছ চাষ,পুকুরের চড়ায় গরু চরানো,সঠিক নিয়োমে পুকুর খনন না করা ও সময়মত নদী থেকে পানি উত্তোলন না করা, অযোগ্য লোক দিয়ে শোধনাগার চালানোসহ নানা অনিয়মের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, লবণ পানি-অধ্যুষিত মোংলাবাসীর সুপেয় পানির সংকট নিরসনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০০৫ সালে পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি উত্তোলন ও সরবরাহের উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষে পৌরসভার মাছমারা এলাকায় ৮৪ একর জায়গায় পাঁচ লাখ লিটার ধারণমতার একটি উচ্চ জলাধার, ৪৬ কোটি লিটার ধারণমতার একটি পানি শোধন ও সরবরাহ কেন্দ্রের কাজ শুরু করা হয়। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর তা পৌর কর্তৃপরে কাছে হস্তান্তর করে। ছয় বছর ধরে পৌর কর্তৃপ পৌর এলাকার ২ হাজার ৫০০ পরিবারকে পাইপলাইনের মাধ্যমে সকালে ও বিকেলে সুপেয় পানি সরবরাহ করে আসছিল। গত মাস থেকে পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় শুধু সকালে একবার সামান্য পানি সরবরাহ করা হতো। ১ মে থেকে এ সরবরাহ একেবারেই অপ্রতুল করে দেওয়া হয়েছে।

মোংলা বাজারের ব্যাবসায়ী চোবাহান তালুকদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, গত বছর ১৭ মে পৌর কর্তৃপ মাইকযোগে জানিয়ে দিয়েছে, আপাতত আর পানি দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এ বছর মে মাস চলছে, কখন যেন আবারো মাইকিং করা হয় পানি দেয়া বন্ধ। কিন্তু পানি ছাড়া তো এক দিনও চলা যায় না। ৭মে বিকেলে পৌর পানি শোধনাগার কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের বিশাল পুকুরটির তলানিতে সামান্য পানি আছে। শোধনাগার-সংলগ্ন কুমারখালী গ্রামের শুকুর, জাহাঙ্গীর আলম, কামাল ও মাছমারা গ্রামের মিনাল,নির্মল,সুবেন্দ্রসহ অনেকে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এই পুকুরে পৌর কর্তৃপ মাছ চাষ করে। গত সপ্তাহে কয়েকশ কেজি মাছ ধরা হয়েছে। এখানে পাম্পচালক মোঃ শাহিন ও দুজন নিরাপত্তারী ছাড়া আর কোনো প্রকৌশলীকে আমরা দেখিনি। এছাড়াও নতুন আরো একটি পুকুর খনন না করে পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করার চেষ্টা চলছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী সোহান আহম্মেদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নদীর মিষ্টি পানি সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুকুরে তোলা হয়। কিন্তু এবার পানি তোলার মৌসুমে পুকুরে পর্যাপ্ত পানি ওঠানো হয়নি। তাই এ সংকট দেখা দিয়েছে। পৌর কর্তৃপরে এই শোধনাগার প্রকল্প যাঁরা দেখভাল করছেন, তাঁরা এ বিষয়ে কতটুকু যোগ্য, তা নিয়ে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তা পৌর কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে। তা ছাড়া পুকুরে মাছ চাষ করে সেই মাছ ধরতে গিয়েও কিছু পানি কমিয়ে ফেলা হয়। বিষয়টি আমি পৌর মেয়রকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি।

তিনি আরও বলেন,যদি পুকুরের পানী সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ‘জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের প থেকে পানি শোধনের একটি গাড়িতে করে প্রতিদিন পানি সরবরাহ করা হবে। তবে চাহিদার তুলনায় তা খুব একটা দেয়া সম্ভব হবেনা।

পানি শোধনাগারের পাম্পচালক শাহিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, পুরাতন পুকুরের কিছু অংশের খনন কাজ করায় পানি শুকিয়ে গেছে। তা ছাড়া নদীর পানি এখন অনেক লবণাক্ত। সেই পানি পুকুরে ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। এদিকে পৌর এলাকায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের একটি পুকুরে বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পানি নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে নারী-পুরুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে এক কলস করে পানি সংগ্রহ করেন। কিন্তু সেই পানিও শেষের দিকে।

শেহালাবুনিয়া এলাকার গৃহবধু প্রতিমা রানী, মানসী বিশ্বাস ও ফাতেমা বেগম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে কিছু এলাকায় ওপেন ট্যাপ দেয়া হয়েছে। তা থেকে পানি আনতে লাইনে দাঁড়াতে হয়, তা তো আমাদের পে সম্ভব না। তাই এই পুকুরের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে।

পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মোঃ জুলফিকার আলী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর নতুন একটি পুকুর পৌর কর্তৃপক্ষের নিকট খনন না করেই হস্তান্তর করার চেষ্ট করছে এবং পুরোনো পুকুরটি পুরো খনন না করে তরিগরী করে চালু করা হয়েছে, তাই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া নদীর পানি লবন বেড়ে গেছে এবং পাইপ লাইনের কাজ করছেন। এ কারণে নদী থেকেও পানি তোলা যাচ্ছে না। তবে একটু বৃষ্টি হলেই সকল সমস্যা দুর হয়ে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত