ফকিরহাটে অর্ধশতাধিক নদী ও খালে পলি জমে ভরাট

পি কে অলোক,ফকিরহাট

আপডেট : ০৫:১০ পিএম, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৫৫১

ফকিরহাট উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক নদী ও খালে পলি জমে ভরাট হয়ে পড়েছে। যে কারনে বর্ষা মৌসুমে উপরের জমে থাকা পানি সরবরাহ হতে না পারায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে কৃষি ফসল উৎপাদনে চরম বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। অপর দিকে মরা নদী ও খালের দুইপাড়ে বিপুল পরিমান জেড়ে উঠা চর দখলের প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। অতিদ্রুত নদী ও খাল গুলি পুনঃ খনন করা না হলে কৃষি ফসলের চরম ক্ষতি ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা মারাত্বক আকার ধারন করা সহ সরকারী জমি বেদখল হওয়ায় আশাংকা করছেন সচেতন মহল।

সরেজমিনে অনুসন্ধ্যান করে জানা গেছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবাহমান প্রায় অর্ধশতাধিক নদী ও খালে পলি জমে এখন প্রায় সম্পুর্ন ভরাট হয়ে পড়েছে। যে কারনে স্থায়ী জলাবদ্ধতা থেকে শুরু করে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। জানা গেছে, বেতাগা ইউনিয়নের পাশ্বের খাল, চাকুলী খাল, গজার খাল,কুমোরখালী খাল, গবিন্দদেশাই খাল ও বাসাবাড়ী খাল, শুভদিয়া ইউনিয়নের ভোলা নদী, পশর নদী, সাপমারী খাল, কাটাখালী খাল, বড় কাটাখালী খাল, দোনার খাল, নলিয়ান খাল, বদুরগাছা খাল, বোরোইতলা খাল ও গজালিয়া খাল, পিলজংগ ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা খাল, মরগাংনী খাল, বাহিরদিয়া ইউনিয়নের গাবখালী যুগীখালী খাল, লখপুর ইউনিয়নের ভবনা খাল, মাসকাটা সাবপ্রজেক্ট খাল ছাড়াও রুপসা আটারোবাকী নদীর মোহনা হয়ে ফকিরহাটের উপর দিয়ে যাত্রাপুর পযন্ত ভৌরব নদী গুলি এখন মৃতঃ প্রায়। এই মৃতঃ নদী খালের উপরে হাজার হাজার একর জমি গুলি যে যার মত ইচ্ছামত দখল করে লুটে পুটে খাচ্ছেন। কেউ কেউ জাল জালিয়াতীর মাধ্যমেও জমি গুলি তাদের আওতায় নিয়ে কোটিপতি বসে গেছেন। আবার অনেকে খাল গুলি বেঁধে ও জালাপাটা দিয়ে দখল করে তাদের ইচ্ছামত মৎস্য ঘের করা ছাড়াও ফসলী জমি বানিয়ে নানা প্রকার ফসল উৎপাদন করছেন।

সরকারী ভাবে এই সমস্ত অবৈধ জবর দখল কারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনীক ভাবে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় সরকারী সম্পতি গুলি বেদখল অব্যাহত রয়েছে। বেতাগা মৎস্য চাষি মোঃ জিল্লুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, মরা খাল গুলি পুনঃ খননের ব্যাবস্থা গ্রহন না করায় বর্ষা মৌসুমে উপরের পানি সরবরাহ হতে না পেরে মৎস্য ঘের ও ফসলি জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কোন কোন স্থানে জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারন করেছে। শুভদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য প্রদীশ অধিকারী বলেন, তাদের এলাকায় এক শ্রেণীর অসাধু ব্যাক্তি জালপাটা দিয়ে ঘিরে মরা খাল গুলি দখল করে সেখানে মৎস্য চাষ করছেন। আবার কেউ কেউ মরা নদীর পাড়ের বিপুল পরিমানে জমি দখল করে অন্যের কাছে বিক্রয় করছে। কিন্তু প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেন না। যে কারনে নদী ও খালের চর দখল অব্যাহত রয়েছে।

পিলজংগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খান শামীম জামান পলাশ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, পিলজংগ ভেড়বাড়ী এলাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত মরা মরগাঙ্গী খাল পুনঃ খনন না করায় তা এখন বেদখল হয়ে পড়েছে। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যাক্তিরা মরা মরগাঙ্গী খাল দখল করে মৎস্য চাষ ও জমি বানিয়ে ফসল ফলিয়ে নিজ দখলে নিয়েছেন। যে কারনে উপরের পানি সরবরাহ হতে না পেরে প্রবল বর্ষনে বন্যার রুপ ধারন করে। আবার কোন কোন স্থানে পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতা রুপ নিয়ে বিল গুলি অজন্মা হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলেছেন, এক সময় এই সমস্ত নদী ও খাল দিয়ে নৌকা ট্রলার লঞ্জ ষ্টিমান চলাচল করতো। এখন সেটি রুপ কথার কল্পের মত। নদী ও খাল গুলি পুনঃ খনন করে জলাবদ্ধতা দুরীকরনের মাধ্যমে কৃষিকে আরো বেগবান করার আহবানও জানান কৃষক ও স্থানীয় মৎস্য চাষিরা।

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, শুভদিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত মরা ভোলা নদীর এক অংশ পূনঃখনন করা হচ্ছে। এছাড়া মরা ভৌরব নদী পুনঃ খননের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। বাকি খাল গুলি পুনঃ খননের জন্য কৃষি মন্ত্রনালয়ের উর্দ্ধতন একটি দল ইতিমধ্যে বিভিন্ন নদী ও খাল পরির্দশন করেছেন। আশা করা হচ্ছে আগামীতে মরা নদী ও খাল গুলি দ্রুততার সাথে পুনঃ খনন করা হবে। আর এটি করা সম্ভাব হলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দুর করা সম্ভাব হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত