সংঘবদ্ধ হরিণ ও বন্য প্রাণী শিকারী চক্র তৎপর

শুরু হতে যাচ্ছে সাগরপাড়ের আলোর কোলে রাস উৎসব

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০৭:৩৮ পিএম, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০১৯ | ৯০০

বঙ্গোপসাগর পাড়ে দুবলার চরের আলোর কোলে চলতি মাসের ১০’নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে তিন শত বছরের ঐতিহ্যবাহী তিন দিনের রাস উৎসব। দেশি-বিদেশি পুন্যার্থী, ভক্ত ও পযর্টকদের স্বাগত জানাতে প্রতি বছরের মতো এবারও আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য রাস উৎসব অনুষ্ঠানের। তিনদিনব্যাপী রাস উৎসব উপলক্ষে ইতিমধ্যেই সাগরপাড়ে মন্দির নির্মানসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মেলা উদযাপন কমিটি। এদিকে রাস উৎসবকে টার্গেট করে সংঘবদ্ধ হরিণ শিকারী চক্রগুলোও ইতিমধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে। রাস মেলায় তীর্থ যাত্রী বা দর্শণার্থীর আড়ালে এসব চোরা শিকারীর দল হরিণ নিধনের ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে। এ চক্রের অনেক সদস্য ইতিমধ্যে কৌশলে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। বাকী সদস্যরা সময় সুবিধা মতো নানা পাশ-পারমিরে মাধ্যমে কৌশলে বনের অভ্যন্তরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে রাশ উৎসবকে ঘিরে সুন্দরবনের বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রাণী শিকার ও পরিবেশের তি রোধে এবং যাতায়াতে আটটি রুট নির্ধারনসহ চারদফা সতর্কতা জারি করেছে বনবিভাগ। এদিকে বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার হরিণসহ অন্যান্য বন্য প্রানী নিধন রোধসহ যে কোন নাশকতা দমনে বন রক্ষীসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক সতর্ক অবলম্ভন করবে।

রাস উৎসবের আয়োজক কমিটির সভাপতি কামাল উদ্দিন আহম্মেদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ধর্মভীরু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা দুবলায় মেলায় মানত করে এবং বছরের এসময় এসে মানতকারীরা আনুসাঙ্গিক অনুষ্ঠানাদী সম্পন্ন করে থাকে। আবার কেউ কেউ জীবনের কৃত পাপ মোচন হবে মনে করে এ স্থানে আগমন করে এবং সমুদ্রের নোনাজলের ঢেউয়ের মধ্যে স্মান করে পুত পবিত্র হতে দেখা যায়। এসময় ঢেউ সেবনের মন্ত্রাদী উচ্চরন করে পাঠা ছাড়ল, ফল ও মিষ্টি সাগরে নিক্ষেপ করতে দেখা যাবে ভক্তদের।

এ বছর ১০ থেকে ১২ নভেম্বর বর্নাঢ্য রাস উৎসব উপল্েয মন্দির নির্মাণ, পুলিশ, র‌্যাব, কোষ্টগার্ডসহ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় সভাসহ সব আয়োজনই এরমধ্যে সম্পন্ন করেছে রাস মেলা উদযাপন কমিটি। রাস উৎসবকে ঘিরে থাকছে ধর্মীয় পূজা-পার্বন, আলোচনা সভা, নৃত্যসংগীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামীন কুঠির শিল্প মেলার আয়োজন। তিনদিনের এ রাসমেলায় হিন্দু-মুসলিমসহ সবধর্মের পুণ্যার্থী আর দেশী-বিদেশী বিপুল সংখ্যক পযর্টকের পদচারণায় মুখরিত হবে-সুন্দরবনের গহীনে দুবলার চরের আলোর কোলসহ আশপাশের এলাকাগুলো- এমন প্রত্যাশা আয়োজকদের।

এদিকে, রাস উৎসবে পুণ্যার্থী ও পযর্টকদের যাতায়াতে আটটি রুট নির্ধারণসহ সুন্দরবনের প্রতিবেশ রায় সতর্ক ব্যবস্থা নিয়েছে বনবিভাগ। রাশ উৎসবকে নির্বিঘœ করতে সমন্বিত কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন। আগামী ১২ নভেম্বর ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দিনের প্রথম জোয়ারে বঙ্গোপসাগরের নোনা পানিতে পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে রাস উৎসব। এই রাস উৎসবকে ঘিরে পূণ্যার্থী ও পর্যটদের নিরাপত্তাসহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের নিরাপত্তায় নৌবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বন বিভাগ নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।

পুর্ব সুন্দরবন বিভাগ বলছে, বুধবার সকাল থেকে রাস উৎসবকে ঘিরে আগাত পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠবে সাগরদ্বীপ আলোরকোল। আলোরকোলে রাস উৎসবে আগতদের যাতায়াতের জন্য সুন্দরবন বিভাগ ৮টি রুট নির্ধারণ করছে। প্রত্যেক পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা তিন দিন সুন্দরবনে অবস্থানের জন্য ৫০ টাকা, নিবন্ধিত ট্রলার ২ শত টাকা এবং অনিবন্ধিত ট্রলারে ৮ শত টাকা রাজস্ব ধরা হয়েছে।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা এবং বন ও বন্যপ্রাণি রায় বন বিভাগের সাথে নৌবাহিনী, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশের পাশাপাশি বনরীরাও নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া, কন্ট্রোল রুমে স্বার্বণিক একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তদারকির দায়িত্বে থাকবেন। এবার রাস উৎসবের নিয়মাবলীতে একটু ভিন্নতা আনা হয়েছে। অন্যান্য বছর গুলোতে পুণ্যার্থীরা রাতের বেলায় রওনা হতো। কিন্তু এবার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে ১০ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকেই যাত্রা শুরু হবে। তাছাড়া আলোরকোলে নারী পূণ্যার্থীদের পোশাক পরিবর্তনের জন্য আলাদা শেড ও পর্যাপ্ত টয়লেট তৈরি করা হয়েছে। তিন দিনের এ রাস মেলায় প্রশাসন, বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। এ কর্মকর্তা আরো বলেন, এবার রাস মেলাকে ঘিরে হরিণ ও অন্যান্য বন্য প্রাণী শিকার রোধে বন বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসন সজাগ সৃষ্টি রাখবে। যে কোন মূল্যে চোরা শিকারীদের অপতৎপরতাসহ সব ধরনের নাশকতা দমনে প্রশাসন কঠোর রয়েছে। শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে পাপমোচন, মনোকামনা-বাসনা পুরণ ও পুণ্যলাভের আশায় অবতার শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা আর গাজী কালুর উদ্দেশ্যে মানত প্রদান উপলে অনুষ্ঠিত হয় তিনশত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ রাসমেলা।

এদিকে রাস মেলাকে ঘিরে সংঘবদ্ধ হরিণ ও বন্যপ্রাণী নিধনকারী চক্র ইতিমধ্যেই নানাভাবে তৎপর হয়ে উঠেছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এ উৎসবের সুযোগকে টার্গেট করে তারা বিপুল পরিমান হরিণ ও বন্যপ্রাণী নিধনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ চক্রের কিছু সদস্য ছদ্মবেশে এরই বনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। চক্রের অপর সদস্যরা রাস মেলা বা তার আগ মুহুর্তে বনের অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। এরা ফাঁদ, বিষ টোপসহ নানা মাধ্যমে হরিণ শিকার করে থাকে। এ ব্যাপারে স্যাভ দ্যা সুন্দরবনের চেয়ারম্যান লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাস মেলাকে টার্গেট করে চোরা শিকারীর দল বনের মায়াবি হরিনসহ অন্যান্য বন্য প্রাণী নিধন করতে পারে। তিনি এ ব্যাপারে সরকারের বন বিভাগসহ প্রশাসনের নজরদারী আরো জোরদার করার আহ্বান জানান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত