বুলবুলের তান্ডব, কুয়াশা আর বৃষ্টি

হাসিঁ নেই দুবলা শুটকি পল্লীর জেলেদের মুখে

মাসুদ রানা, মোংলা

আপডেট : ০৭:২৫ পিএম, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২০ | ৮১০

বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের দুবলা জেলে পল্লীসহ ৫টি চরে শুটকি মাছ আহরণ মৌসুমে জেলেদের মধ্যে নেই খুশির আমেজ। সম্প্রতি আঘাত হানা ঘূর্নিঝড় বুলবুল, বৃষ্টি আর সাড়া দেশ ব্যাপি কুয়াশা। এরই মধ্যে প্রচন্ড শীতের সাথে প্রচন্ড বাতাশের কারণে সাগরের গহীনেও মাছ পাচ্ছেনা জেলেরা।

তিন মাস অতিবাহীত হওয়ার ফলে এবার কাঙ্খিত শুটকী আহরণ না হওয়ায় জেলে, মহাজন (বহদ্দর) ও শুটকী ব্যবসায়ীদের মাঝে একধরনের হতাশা বিরাজ করছে। তবে আগামী দুইমাস আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করছে জেলে ও বন বিভাগ।

সুন্দরবন উপকুল দুবলার চরে অক্টোবর থেকে মার্চ এই ৫ মাস ব্যাপী চলে শুটকি আহরন মৌসুম। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধ করে পাশ-পারমিট নিতে ডিপো মালিক, বহরদারসহ কয়েক হাজার জেলে শুটকি তৈরীর জন্য সাগর পাড়ে মাছ আহরণ করেন। এবছর সুন্দরবনের ৫টি চরে ৫৩টি ডিপো মালিক, ১০৪০ টি জেলে ঘরে প্রায় ২০ হাজার জেলে শুটকির জন্য মাছ আহরন করছে। কিন্ত এবার ১০ অক্টোবর ঘূর্নিঝড় বুলবুলের আঘাতে শুটকী পল্লি লন্ডভন্ড হয়ে যায়।

নষ্ট হয়েছে কয়েক কোটি টাকার আহরিত বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ। এছাড়াও ডিসেম্বরের শেষের দিকে কয়েকদফা শৈত্য প্রবাহের কারণে প্রচন্ড ঠান্ডার সাথে বৃষ্টি আর কুয়াশা হওয়ায় মরার উপর খাড়ার ঘা‘রমত ঘটনা ঘটেছে শুটকী পল্লীতে। এ অবস্থায় মহাজন ও জেলেদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

দুবলার চরের মহাজন (বহরদর) পঙ্কজ রায় বলেন, ঘূর্নিঝড় বুলবুলের পর থেকে সাগরে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া প্রচন্ড শীতের সাথে আছে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে সাগরে যার কারণে উৎপাদন এতকম যে আমাদের পুজিই টিকবে না।

জেলে নজরুল ইসলাম বলেন, বিরুপ আবহাওয়ার কারণে মাছের উৎপাদন কম। যে মাছ পাচ্ছি তার আকার-আকৃতিও ছোট। তাই জেলেদের মনে কোন আনন্দ নেই। কারণ আপনজন ছেড়ে প্রায় ৬ মাসের জন্য সাগরে আসতে হয়। ৬মাস কাজ করে যদি শুন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হলে এর থেকে কষ্টের কিছু নেই।

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিবছর শুটকী মৌসুমে জেলেদের একটি লক্ষমাত্রা থাকে। এবছর জেলেদের লক্ষমাত্রা কোনভাবেই পূরণ হবে না। তবে মৌসুমের বাকি দিনগুলোতে যদি আবহাওয়া ভাল থাকে এবং মাছ বেশি পাওয়া যায় তাহলে কিছু ক্ষতি পূষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাগেরহাট২৪কে বলেন, দুবলার চরে ৫টি শুটকি প্রক্রিয়া করন স্থান রয়েছে। প্রথম থেকে সাগরে প্রচুর মাছ পাওয়ায় এবছর জেলেদের টার্গেট বেশী বেশী শুটকী তৈরী করতে পারবে। কিন্ত ঘুর্নিঝড় বুলবুল ও শীতের কারণে জেলেরা গেলবছরের থেকে মাছ কম পাচ্ছে। গেল বছর ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত যেখানে রাজস্বের পরিমান ছিল ১ কোটি ৪১ লক্ষ সেখানে এবছর একই সময়ে সে রাজস্ব মাত্র ১ কোটি ৩ লক্ষ। গেল বছর পুরো মৌসুমে আমাদের রাজস্ব আদায় ছিল ২ কোটি ৬৬ লক্ষ ৬৭ হাজার ৮‘শ ১৯ টাকা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত