দূর্যোগে মফঃস্বলের গণমাধ্যম কর্মী

খোন্দকার নিয়াজ ইকবাল

আপডেট : ০৭:১৭ পিএম, মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ২০২০ | ৪৫৫১

দেশের সকল ক্লান্তিলগ্নে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসিম। প্রতিটি দূর্যোগে রাস্ট্রের বিভিন্ন যন্ত্র যেমনি ভাবে দূর্যোগ মোকাবেলায় এগিয়ে আসে। তেমনি গণমাধ্যম কর্মীরা ও কিন্তু বসে থাকে না। তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভূমিকা রাখেন। দেশের দূর্যোগকালীন সময়ে দেশ ও বিশ্বের মানুষের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে প্রাণপণ চেষ্ঠা চালিয়ে যান ওই সংবাদকর্মীরা। নিজের বা পরিবারের চাহিদা বিসর্জন দিয়ে ছুটে যায় মানুষের দুঃখ কষ্ট ও বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে। তাই দিয়ে তৈরী করা সংবাদ দর্শক ও পাঠকদের কাছে পৌছে দিতে তৎপরতা চালান।

এই পেশার কারনে সংবাদকর্মীরা নিজ ও পরিবারের ঝুকির কারনও হতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। পাঠকের সন্তুষ্টিই একজন সংবাদকর্মীর সার্থকতা।

মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। প্রতিদিন এই তথ্য গণমাধ্যমে প্রচার করছেন সংবাদকর্মীরা। দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারনে সরকার প্রতিদিন মানুষকে সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ঘরে থাকতে বলছেন। এজন্য সরকারী, বেসরকারী, ব্যাক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষনা করেছেন। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রনোদনা ঘোষনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

সকল সহযোগীতা সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগালে হয়তো আমরা এগিয়ে যেতে পারবো। গণমাধ্যমে আয়ের পথ গুলি ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে। গণমাধ্যম মুলত চলে বিজ্ঞাপন প্রচারে প্রাপ্ত অর্থের টাকায়। পণ্য বিক্রি যেখানে সীমিত হয়ে গেছে সেখানে বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিজ্ঞাপন দিতে অনেকটা অনীহা প্রকাশ করছে।

মফঃস্বলের গণমাধ্যম কর্মীরা চলে সাধারনত বিজ্ঞাপনের কমিশনের টাকায়। জেলায় কর্মরত সংবাদকর্মীদের অধিকাংশই (হাতে গোনা কয়েকটি গণমাধ্যম ব্যাতিত) বিনা বেতনে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অনুমতি পেতে উল্টো টাকা দিতে হয়, উপজেলা পর্যায়ে আরো ভয়াবহ অবস্থা।

দূর্যোগে জরুরী সেবাদানকারীদের চলাচলে বাধা নেই। তার মধ্যেও সংবাদকর্মীরা রয়েছেন। প্রতিটি মুহুর্তে জীবনের ঝুকি নিয়ে চলছেন তারা, ফেলছেন পরিবারকে ঝুকির মধ্যে। তারপরেও শুধু লোক দেখানো ধন্যবাদ ছাড়া জোটেনা কোন সহায়তা। একজন প্রকৃত সংবাদকর্মী খুব বেশী আয় করতে পারেননা সততা,নিষ্ঠা ও পেশার প্রতি সম্মানের জন্য। দেশের প্রতিটি এলাকায় সরকারীভাবে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। যা দিয়ে পরবর্তিতে দূর্যোগকালীন মুহুর্তে শ্রেণীভেদে সরকারী বা বেসরকারী সহায়তা দেয়া হয়। একজন গণমাধ্যম কর্মী বা তার পরিবার থাকেনা নি¤œবিত্ত,মধ্যবিত্ত বা অন্যকোন শ্রেণীতে। ফলে সেখান থেকেও বাদ পড়ে যান তারা। আবার ওই তালিকায় থাকা ব্যাক্তিদের দেয়া সহায়তা ফলাও করে প্রচারের দায়িত্বে থাকতে হয়। কখনো তালিকা বা বিতরণে অনিয়ম হলে তা প্রচার করে রোষানলে পড়তে হয় ওই সংবাদকর্মীর।

রাজনীতিবীদরা তাদের কর্ম প্রচারের সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের একটু কদর দেখালেও যখন একটা পর্যায়ে চলে যান তখন আবার চিনতেও চাননা। কখনো কখনো তাদের অনিয়ম দুর্নীতি প্রচার করতে গিয়ে হামলা বা মিথ্যা মামলা এমনকি পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হয়।

দেশে বর্তমানে গণমাধ্যমকর্মীদের উপর মিথ্যা মামলা, হামলার ঘটনা ঘটে চলছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি গোচর হলে তা আবার আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়। দেশে ৮ম,৯ম ওয়েজবোর্ড ঘোষনা করা হয়। কোন ওয়েজবোর্ডের আওতায় কি আজো পড়েছেন মফঃস্বলের গণমাধ্যম কর্মীরা? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের কল্যাণে কল্যাণ ট্র্যাস্ট গঠন করেছেন। দূর্যোগকালীন মুহুর্তে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি মুল্যায়ন করবেন। তাঁর হস্তক্ষেপে পাবেন সহায়তা, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সবকিছুর মধ্যেও সংবাদকর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ঠ থাকেন,থাকবেন। নানা ঝুকির মধ্যেও দেশের কল্যাণে সরকারকে সহযোগীতা করে যাবেন। দূর্যোগ কেটে যাবে,আবার সবাই বাইরে কর্মব্যস্ততার মাঝে দিন কাটাবো। ঘরে থাকুন,নিরাপদে থাকুন।সরকারী নির্দেশ মেনে চলুন।

খোন্দকার নিয়াজ ইকবাল
সম্পাদক, bagerhat24.com
সভাপতি,কচুয়া প্রেসক্লাব।

কচুয়া,বাগেরহাট।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত