দলবেধে আসত পরবাসি দাদা’রা

চিতলমারীতে বোরো ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা

এস এস সাগর

আপডেট : ০৪:২৪ পিএম, শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল ২০২০ | ১২৬০

বাগেরহাটের চিতলমারীতে মাঠ ভরা পাকা বোরো ধান নিয়ে চাষিরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কষ্টার্জিত ফসল ঠিকমত ঘরে তুলতে পারবেন কিনা এ নিয়ে তাদের মনে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ আকাশে মেঘ দেখলেই কাল বৈশাখীর ভয়। আছে গুড়ি গুড়ি বৃস্টি। আর বাইরে বেরোলেই করোনার কড়াল গ্রাস। তাই ঘরবন্দি মানুষের জীবনের চাকা এখন থমকে গেছে। উপার্জনের সব রাস্তাই বন্ধ। একমাত্র ভরসা উঠতি বোরো ধান। প্রতি বছর এই ধান কাটতে বাইরে থেকে দলবেধে আসত পরবাসি (ধান কাটা শ্রমিক) দাদারা। কিন্তু এ বছর কি হবে তা নিয়ে ধান চাষিদের মাঝে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।


স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ২১ টি ব্লক রয়েছে। এখানে এ বছর প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে বেরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এখানে কমপক্ষে ২৫-৩০ হাজার কৃষক পরিবার এই বোরো ধানের আবাদের সাথে জড়িত রয়েছে।


ধান চাষিরা জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে ধান চাষ করে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে। তারা সব সময়ই ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ করে আসছেন। তবুও সব লোকসান মেনে তারা জমি অনাবাদি ফেলে রাখতে নারাজ। কৃষি প্রধান এ এলাকার শতকরা ৯০ ভাগ মানুষই চাষাবাদের সাথে যুক্ত। দেশের অন্যতম সবজি ও চিংড়ি চাষ হয় এখানকার জমিতে। পাশাপাশি বোরো আবাদেও বড় ভূমিকা রেখে আসছে এখানকার চাষিরা।

গত কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে চিংড়ি ও সবজি চাষ হুমকির মুখে। অনেকেই বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও এবং সুদেকারবারীদের কাছ থেকে অধিক মুনাফায় টাকা এনে কৃষি কাজে ব্যয় করেছেন। বিগত দিনে কৃষি কাজের জন্য ঋণ এনে অনেকেই পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন। এ অবস্থায় শেষ ভরসা এখন বোরো ধানকে ঘিরে। কিন্তু সে ধান এখন কিভাবে ঘরে তুলবেন সে ভাবনায় দিশেহারা চাষিরা। একদিকে করোনার থাবা। অন্যদিকে মেঘ-বৃষ্টি, বজ্রপাত ও কাল বৈশাখীর আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েই গেছে। এছাড়া প্রতি বছর ধান কাটতে বাইরে থেকে দলবেধে আসত পরবাসি দাদারা। এ বছর কি হবে তা জানা নেই কারো। এমন পরিস্থিতি তাদের দারুণ ভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।

উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের ধান চাষী সুবাস ভক্ত, পাড়ডুমুরিয়া গ্রামের কাকন সরদার, কুরমনি গ্রামের নির্মল বাইনসহ এলাকার অনেক চাষি হতাশা প্রকাশ করে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, গত একমাস ধরে করোনার কারনে তারা ঘরবন্দি আছেন। মাঠে তাদের আবাদকৃত বোরো ধান এখন ঘরে তোলার সময়। কিন্তু মেঘ ও ঝড়-বৃষ্টির ভয় পাচ্ছেন তারা। তাছাড়া ধান কাটা শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় কিভাবে তারা পাকা ধান ঘরে তুলবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ বছর ১১ হাজার ৪ শ’ ৭০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও উফসী জাতের ধানের আবাদ করা হয়েছে। এসব জমিতে ফলনও বেশ ভালো। অবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চাষিদের লোকসান কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।


তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, অন্য এলাকা থেকে ধান কাটা শ্রমিকদের আনার ব্যাপারে কোন বিধি নিষেধ নেই। তাদের স্বাস্থ্য পরিক্ষা ও সেখানকার প্রশাসনের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে এসব শ্রমিক আনা সম্ভব বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত