দেড় মনের টাকায় একজন শ্রমিক

চিতলমারীতে ধান এখন কৃষকের ঘাড়ের বোঝা

এস এস সাগর

আপডেট : ০৩:৩৯ পিএম, বৃহস্পতিবার, ৭ মে ২০২০ | ৬৩২

চিতলমারীতে যে ধানকে ঘিরে কৃষকের বেঁচে থাকার স্বপ্ন ও আশা। সেই মাঠ ভরা ধানই এখন তাদের ঘাড়ের বোঝা হয়ে দাঁড়িছে। একদিকে মরণঘাতি করোনার থাবা, অন্যদিকে কাল বৈশাখীর হানা সব ভরসাকে লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে। শ্রমিকের সীমাহীন অভাবে ধান চাষিরা মূষঢ়ে পড়েছেন। এখানে বর্তমানে দেড় মন ধানের টাকায়ও একজন কাঙ্খিত শ্রমিক মিলছে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনটাই জানিয়েছেন এ উপজেলার বেশ কয়েকজন ধান চাষি।


কুরমনি গ্রামের ধান চাষি অনুকুল বসু, বুদ্ধ বসু, খোকন রানা, রঞ্জন বসু, শচীন বিশ্বাস, গোসাই বিশ্বাস, সুরশাইলের মুন্না শেখ, সুধাংশু মন্ডল, সুমন ফরাজী, পাটরপাড়ার ইউনুস বিশ্বাস, শ্রীরামপুরের তাপস ভক্ত ও ডুমুরিয়ার বিপ্লব বাড়ৈসহ অনেক কৃষক জানান, এ উপজেলায় এখন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ভরা মৌসুম চলছে। প্রতিবছর বিভিন্ন অঞ্চলের পরবাসি দাদারা (ধান কাটা শ্রমিক) দলবেধে এসে ধান কেটে মাড়াই ও ঝেড়ে শুকনা করে গোলায় ভরে দিয়ে যেত। কিন্তু এবার করোনার কারণে তারা কিছুতেই আসতে রাজি হচ্ছেন না। তাই মাঠের পাকা বোরো ধান নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন। অন্যদিকে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টির দাপটে ক্ষেতের ধান ঝরে ও পানিতে পড়ে তারা চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তবুও কাঙ্খিত ধান কাটা শ্রমিক মিলছে না।


তারা গ্লানি ভরা কণ্ঠে আরও জানান, এখানে বর্তমানে প্রতিমন ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৪০ টাকা দরে। অথচ একজন ধান কাটায় অযোগ্য শ্রমিকেরও মুজুরি দিতে হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা। সাথে দুই বেলার খাবার। কাজ করে সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত। তাতে কৃষকের চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই মাঠ ভরা পাকা ধানই এখন তাদের ঘাড়ের বোঝা হয়ে দাঁড়িছে।

অপরদিকে, খড়মখালি গ্রামের ধান চাষি পরিমল মজুমদার, কংকন মজুমদার, মনিমহোন হীরা, অসীম বিশ্বাস, কৃষ্ণ রানাসহ অনেকে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ধানের দাম আছে ৬০০ টাকা মন। আর শ্রমিক আনতে গেলে কেউ ৯০০ টাকার কমে কাজে আসতে চায় না। এবার ধান চাষ করতে আমাদের একর প্রতি খরচ আছে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। খুব ভালো ফলন হলে প্রতি একর জমিতে ৭৫ থেকে ৮০ মন ধান উৎপাদন হয়। হাজার টাকার কমে ধানের মন বিক্রি করলে চালান উঠবেনা।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ২১ টি ব্লক রয়েছে। এখানে এ বছর প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে বেরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের ফলন হয়েছে বাম্পার। কমপক্ষে ২৫-৩০ হাজার কৃষক পরিবার এই বোরো ধানের চাষের সাথে জড়িত। এখানে এ বছর ৮০ হাজার মেট্রিকটন ধান কৃষকের ঘরে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু করোনার কারণে এবার অনেক চাষিই করোনার ভয়ে বাইরের ধানকাটা শ্রমিক আনতে রাজি না। আবার অনেক শ্রমিক আবার আসতে রাজি না। যার কারণে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত