মোংলা বন্দরে সহকারী প্রকৌশলী পদে ড্রাইভার

বিশেষ প্রতিনিধি

আপডেট : ০২:৩৮ পিএম, শুক্রবার, ২৫ আগস্ট ২০১৭ | ১৯১০

ছবি-বাগেরহাট২৪.কম

মোংলা বন্দরে একজন ড্রাইভারকে প্রথম শ্রেনির সহকারী প্রকৌশলী (নৌ) পদে বিধি বহির্ভুত ভাবে পদোন্নতি দেয়ার অভিযোগের তদন্তে বেরিয়ে আসে একজনকে নয়, তিনজনকে অবৈধ ভাবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।

এসব পদোন্নতি বৈধ করতে নিয়োগবিধি সংশোধনের প্রস্তাব করেছে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভা। ওই সংশোধনী অনুমোদনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এ তিনজনের সঙ্গে পদোন্নতি দেয়া আরো ৫৩ জনের পদোন্নতিকে প্রশ্নবিদ্ধ উলে­খ করে তা খতিয়ে দেখা ও পদোন্নতির সঙ্গে জড়িত কর্তৃপক্ষকে জবাব দিহিতার আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে ওই তদন্তে।

তবে, এখন পর্যন্ত ড্রাইভারসহ তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের প্রথম শ্রেণিতে বিধি বহির্ভুত ভাবে পদোন্নতি দেয়ার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। এখন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী তাদের পদোন্নতি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

মোংলা বন্দর সূত্রে জানায়, মোংলা বন্দরে ২০১৪ সালে বন্দরের বিভিন্ন পদে ৫৬ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়। ওই সময়ে বন্দরের ৩য় শ্রেনির কর্মচারী ড্রাইভার সোহেল রানাকে সহকারী প্রকৌশলী (নৌ) পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ওই পদোন্নতি চ্যালেঞ্জ করে ইনষ্টিটিটিউ অব ডিপ্লোমা মেরিন ইঞ্জিয়িার (আইডিএমইবি) সদস্যরা।

ওই সময়ে মোংলা বন্দরের অভ্যন্তরীন দু’টি তদন্ত কমিটি ঐ নিয়োগ অবৈধ উলে­খ করেন। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে সোহেল রানাকে চাকুরি থেকে অপসারণ করা হয়। পরে নৌমন্ত্রীর স্বাক্ষর জাল করে আবারও চাকুরিতে ফেরেন সোহেল রানা।

মোংলা বন্দরের এসব ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে মংলা বন্দরের বোর্ড সভার এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।

তদন্তে বলা হয়, বন্দরের চাকুরি বিধি ১৯৯১ অনুযায়ী সহকারী প্রকৌশলী নৌ পদে সোহেল রানা, আবুল কালাম আজাদ ও মজিবুর রহমানের পদোন্নতি নিয়োগ বিধিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। ইতোমধ্যে সোহেল রানার পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ ও মুজিবর রহমানের পদোন্নতির আদেশ বাতিল করা প্রয়োজন এবং তাদের নেয়া অতিরিক্ত বেতন ভাতাদি ফেরত নেয়া ন্যায় বিচারের স্বার্থে বাঞ্চনীয়।

নিয়োগ বিধি সংশোধনের প্রস্তাবের বিষয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, সোহেল রানাকে পুনঃ নিয়োগের বোর্ড সভায় তার পদোন্নতি বৈধ করার জন্য নিয়োগ বিধি পরিবর্তন আনা হয়েছে যা বিধিবহির্ভূত। কারন নিয়োগ বিধি সংশোধনের পর কার্যকর আগে নিয়োগ পাওয়াদের ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। সংশোধনী প্রস্তাবে পদোন্নতি দেয়া আইনের পরিপন্থি।

নিয়োগ বিধি সংশোধনের প্রস্তাবের বিষয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে মংলা বন্দরের ৫৬ জনকে পদোন্নতি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে বলা হয়েছে, তিনজনের পদোন্নতি বিধিমালা পরিপন্থি ও অবৈধ হওয়ার পদোন্নতি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ঐ বিধিবর্হিভূত কাজের জবাবদিহি করবেন। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে, এখন পর্যন্ত ড্রাইভারসহ তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের প্রথম শ্রেণিতে বিধি বহির্ভুত ভাবে পদোন্নতি দেয়ার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এ কে এম ফারুক হাসান বলেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে পদোন্নতি বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একটি চিঠি আমার কাছে এসেছে। যে সময় এসব পদোন্নতি দেয়া হয়েছে, তখন আমি মংলা বন্দরে কর্মরত ছিলাম না। তাই সব কিছুই আমার জানা নেই। তবুও প্রতিবেদন অনুযায়ী আবার সব পদোন্নতি রিভিউ করা হবে। আমাদের নেয়া পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত