আমরা কবে মানুষ হবো!

খোন্দকার নিয়াজ ইকবাল

আপডেট : ১১:৫৪ পিএম, রোববার, ২৪ মে ২০২০ | ১৬৬১

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের দামাল ছেলেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলো স্বাধীনতা অর্জনে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশ স্বাধীন হয়েছিলো একথাটি সবারই জানা। স্বাধীনতার পরে জাতির পিতা দেশের ও দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করেন। একে একে দেশকে পুনর্গঠনের জন্য প্রতিটি বিভাগে স্বচ্ছতা,জবাবদীহিতার চেষ্ঠা চালান। তারই মধ্যে তৎকালীন সুবিধাবাদীরা নিজেদের কু-কর্ম চালিয়ে যাবার লক্ষে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ঠ দেশের মানচিত্রের উপরে কালিমা লেপন করে জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করে।

দ্বীর্ঘ ৩০ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশের হাল ধরেন। চেষ্ঠা করেন মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন সহ দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবার। আবারো ষড়যন্ত্রে বাঁধাগ্রস্থ হলো দেশ। এরপর তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে পুনরায় সরকার গঠন করে আজ তিনি ৪র্থ বারের প্রধানমন্ত্রী। এরপরেও থেমে নেই ষড়যন্ত্র, বারবার চেষ্ঠা করা হয় হত্যার।

দেশের উন্নয়নে নিচ্ছেন একেরপর এক কার্যকরী পদক্ষেপ। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন মধ্যম আয়ের দেশে। এখন স্বপ্ন দেখছেন উন্নত দেশের কাতারে দাড় করানোর। নানা দুর্যোগ পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। চেষ্ঠা করছেন আমাদেরকে বদলানোর,আমাদের কর্ম,চরিত্র,মানুষিকতা,ভাতৃত্ববোধ আরো উন্নত করতে।

আমরা কি নিজেদের বদলাতে পেরেছি?


সম্প্রতি মহামারীতে সারাবিশ্ব যখন হতাশ তখনো তিনি মানুষের পাশে দাড়িয়ে সব ধরনের সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। দ্রæত সময়ের মধ্যে নির্মান করতে চেষ্ঠা করছেন করোনা চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল,প্রতিষেধক। এছাড়া দেশের প্রতিটি হাসপাতালকে আরো আধুনিক হাসপাতালে রুপান্তরিত করার চেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন দেশের অবস্থা।

দেশে সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন ঘোষনা করে, মানুষের ঘরে ঘরে খাবার উপকরণ সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌছে দেয়ার উদ্যোগ নিলেন। শিশুদের সুরক্ষায় বন্ধ করে দেয়া হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সংক্রমণ ঠেকাতে জরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকী সরকারী, বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে সাধারন ছুটি ঘোষনা করা হলো। পরে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে খুলে দেয়া হলো শিল্প-কারখানা। দেশ ব্যাপি যাতে করোনা ভাইরাসটি ছড়িয়ে না পড়ে এজন্য গণপরিবহন ও বন্ধ করে দেয়া হলো।

সকল অনিয়ম.দুর্নীতির ছায়া থেকে দুরে রাখতে মানুষের সাহায্যের টাকা যাতে প্রতিটি মানুষের নিজ হাতে পৌছে যায় তার জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান শুরু করেছেন।

সবকিছুই করছেন আমাদের মঙ্গলের জন্য,আমাদের উন্নতির জন্য,আমাদের সুরক্ষার জন্য,আমাদের বাঁচানোর জন্য। আমরা কি আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি? আমরা কি মেনেছি সরকারের নির্দেশ?

শিশুদের সুরক্ষায় বন্ধ করে দেয়া হলো, আমরা কি করেছি, স্কুল ছুটি পেয়ে সন্তানকে নিয়ে বেড়াতে বেড়িয়েছি, দাদা বাড়ী,নানা বাড়ী সহ আত্বীয় স্বজনের বাড়ী বেড়াতে গিয়েছি।

সংক্রমণ ঠেকাতে জরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকী সরকারী, বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোতে সাধারন ছুটি ঘোষনা করা হলো, আমরা কি করেছি? লম্বা ছুটি পেয়ে আমাদের নিজেদের আত্বীয় স্বজনের বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া থেকে শুরু করে সামাজিক কর্মকান্ড বাড়িয়ে দিয়েছি। কেউ কেউ নিজের বা পরিবারের অন্যকারোর বিয়ের কাজটি সেরে ফেলেছেন।

বড় বড় ঘন বসতিপুর্ণ শহর থেকে নিজের,শিশুর বা পরিবারের বৃদ্ধ মানুষটির নিরাপত্তা না ভেবে ভিড়ের মধ্যে কোন ধরনের সুরক্ষা সামগ্রি ছাড়াই ছুটে চলেছি আমরা। পথে পথে আইনশৃংখলা বাহিনীকে ফাঁকি দেবার প্রতিযোগীতায় মেতেছি আমরা। কেউ কেউ গর্বের সাথে ফাঁকি দেবার ঘটনাটিও অন্যের সাথে আদান-প্রদান করছি। এ করে আমরা নিজেরাই ফাঁকির মধ্যে পড়েছি,পড়ছি। একবারও কি ভেবেছেন কাকে ফাঁকি দিলেন।

এদিকে আমাদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নিজেদেরকে ঝুকির মধ্যে ফেলেছেন, আত্রান্ত হয়েছেন, ইতোমধ্যে হারিয়ে ফেলেছি বেশ কয়েকটি তাঁজা প্রাণ। আমাদের দুর্দশা ও প্রয়োজন সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি নাগরিককে পৌছে দিতে তৎপর ছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা, এজন্য হারাতে হয়েছে কয়েকটি প্রাণ, আক্রান্ত হয়েছেন কয়েকজন।

সরাসরি যাদের যত্ন ও চিকিৎসায় আক্রান্তরা সুস্থ্য হয়েছেন, সেই করোনা যোদ্ধা চিকিৎসকরাও তাদের নিজেদের জিবনবাজী রেখে প্রাণপণ চেষ্ঠা করছেন আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে। এজন্য তাদরে প্রাণও দিতে হয়েছে।

সব কিছুই করা হয়েছে আমাদের জন্য, আমরা কি তা একবার ও ভেবেছি? কোন পরামর্শ ও কি আমরা মেনেছি? এখন ও একদিকে সরকারী ত্রানের জন্য ছুটছি অন্যদিকে পরিবার পরিজন নিয়ে মার্কেট থেকে মার্কেটে ঘুরছি পোশাক,প্রসাধনীর জন্য।

শেষে একটি ঘটে যাওয়া কাহিনী নিয়ে বলছি, এক সময়ে আমাদের বাড়ীতে প্রায় রাতেই ডাকাতি হতো। ডাকাতের ভয়ে আমাদের বাড়ীর অধিকাংশ মানুষ শহর কেন্দ্রীক হয়ে যায়। তারপরে কেউ কেউ বাড়ীর ও সম্পদের মায়া ছেড়ে যেতে না পারায় বাড়ীতেই থাকতেন। আর অধিকাংশ রাত নির্ঘুম কাটাতেন। ডাকাতরা সম্পদের জন্য মারপিট ও করতো। একদিন রাতে আমার এক দাদা (দাদার ভাই) বেশকিছু কাঁচা টাকা (পুরনো আমলের টাকা) একটি কাপড়ের ব্যাগে নিয়ে পাশের এক গরিব মানষের বাড়ীতে উঠলেন। তারা দাদাকে দেখে হতবাক, দাদা বললেন, আজ রাতে তোমাদের ঘরে ঘুমাবো। যথারীতি তারা তাদের ঘরের সবচেয়ে ভালো বিছানা আয়োজন করলেন। দাদাও আলো নিভিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হঠাৎ তারা জোরে জোরে স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে বলতে লাগলেন তাদের দুর্দশার কখা, না খেয়ে থাকার কথা. তাদের অর্থের প্রয়োজনীয়তার কথা । দ্বীর্ঘক্ষণ এভাবে চলতে থাকলে হঠাৎ দাদা বিছানা দিয়ে উঠে ঘর থেকে বের হয়ে যান, তখন ঐ গৃহস্থ দাদাকে না যাবার জন্য অনুরোধ করেন। তারপরেও দাদা চলে আসলেন এবং বললেন অন্য জায়গায় গেলেও একি সমস্যা সবারই প্রয়োজন সম্পদ ও টাকা। নিরাপদ কোথাও নাই, নিরাপদ নিজের মধ্যে, নিরাপত্তা নিজের মধ্যে তৈরী করতে হবে। অন্যকে ফাঁকি দিতে গিয়ে, নিজেকে ফাঁকির মধ্যে ফেলছি!

বাড়িয়ে ফেলছি সংক্রমণ,আক্রান্ত হচ্ছি আমরাই। এ দায় কার? আমাদের। এরপর আবারো বলি আমরা কবে মানুষ হবো? আর ফাঁকি নয়,সরকারী নির্দেশ মেনে চলি, নিজের ও নিজের পরিবার, সমাজ,দেশকে সুরক্ষিত রাখতে সরকারকে সহযোগীতা করি।


খোন্দকার নিয়াজ ইকবাল
সভাপতি
কচুয়া প্রেসক্লাব,বাগেরহাট।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত