করোনা সংক্রমণে জেলার দ্বিতীয়স্থানে থাকা শরণখোলায় চিকিৎসক সংকট

দেড় লক্ষাধিক মানুষের জন্য চিকিৎসক ৫জন,ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৫:৩৩ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১১ জুন ২০২০ | ৬৬৫

করোনা সংক্রমণে জেলায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার ৫০শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চিকিৎসক সংকটে পড়েছে। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু সেখানে রয়েছে মাত্র পাঁচজন চিকিৎসক। চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। সামান্য সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

এদিকে, করোনার এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে পাঁচজন চিকিৎসকের যেখানে হাসফাঁস অবস্থা! তার মধ্যেই সিরাজুল ইসলাম নামের এক চিকিৎসককে বদলি করায় হতাশ হয়েছে শরণখোলাবাসী। এতে চরমভাবে ভেঙে পড়েছে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা।

তাছাড়া, শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসক বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে জেলাসদরসহ অন্য আট উপজেলাতেই পর্যাপ্ত এবং কোনোটিতে অতিরিক্ত চিকিৎসক রয়েছেন। কিন্তু জেলার সর্ব দক্ষিণে সুন্দরবন ঘেঁষা দুর্গম এই উপজেলাতে বিশেষজ্ঞ দুরের কথা ৫-৬ জনের বেশি সাধারণ চিকিৎসকও দেওয়া হয়নি কোনোদিন। যার ফলে, উপজেলার মানুষ সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। জটিল কোনো রোগ-ব্যাধি হলে এমনকি সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসা না পেয়ে অধিক অর্থ ব্যয় করে ছুঁটছে বাগেরহাট, খুলনাসহ বিভিন্ন স্থানে। বছরকে বছর চিকিৎসক নিয়োগে বৈষম্য এবং সংকট থাকায় চরম ক্ষুব্ধ মানুষ।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সদর হাসপাতালে ২২ জন, ফকিরহাটে ১৭ জন, মোল্লাহাটে ১১ জন, চিতলমারীতে ১২ জন, রামপালে ১২ জন, মোংলায় ১২ জন, কচুয়ায় ১৩ জন, মোরেলগঞ্জে ১২ জন ডাক্তার রয়েছেন। অথচ শরখোলায় রায়েছে মাত্র পাঁচ জন।

শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, পাঁচ জন চিকিৎসকের মধ্যে থেকে করোনা পরিস্থিতি সামলামে রিজার্ভ (সংরক্ষিত) রাখা হয়েছে দুইজনকে। গত তিন দিন ধরে একজন শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তিনি চিকিৎসা দিতে পারছেন না। তাছাড়া, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি নিজে কোনো রোগী দেখেন না।

এমন সংকটময় মুহূর্তে ছয় মাস আগে ডা. সিরাজুল ইসলাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করার পর তার সেবা দিয়ে রোগী ও সাধারণ মানুষের মাঝে গ্রহনযোগ্যতা অর্জন করেন। কিন্তু গত বুধবার (৩ জুন) আকষ্মিকভাবে খুলনার উপ-পরিচালকের দপ্তর থেকে তাকে র‌্যাব-৬ এর করোনা আইসোলেশন সেন্টারে বদলি করা হয়। এ অবস্থায় বর্তমানে করোনা সংক্রমণের দিক থেকে জেলার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা শরণখোলায় চিকিৎসক সংকটে মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন মুক্তা ও রায়েন্দা ইউপির চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, চিকিৎসক সংকট ও করোনা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ডা. সিরাজুল ইসলাম সাধারন মানুষের কাছে একজন ভাল চিকিৎসক হিসেবে পরিচিতি পান। তার আন্তরিক চিকিৎসাসেবার কারণে ডাক্তার শূণ্যতা অনুভব হয়নি। এই মুহূর্তে তাকে বদলি করায় এলাকাবাসীর ক্ষতি হয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাহিমা আক্তার হাসি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিনের পর দিন ডাক্তার সংকট থাকার কারণে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অবিলম্বে চিকিৎসক নিয়োগের বৈষম্য দুর করার জন্য সরকারের দাবি জানাই।

শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফরিদা ইয়াসমিন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, আমি গত আট মাস আগে যোগদান করে এখানে মাত্র দুইজন ডাক্তার পেয়েছি। এখন পাঁচ জনের মধ্যে থেকে করোনা কারণে পালাক্রমে দুইজন ডাক্তারকে রিজার্ভ রাখতে হয়। যে কারণে চিকিৎসাসেবায় সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডাক্তার হুমায়ুন কবির বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, প্রতিটি উপজেলায় একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, একজন আবাসিক মেডিলে অফিসার, একজন ডেন্টিস্ট ও পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু সারা দেশেই চিকিৎসক সংকট রয়েছে। শরণখোলার বিষয়ে উর্ধ্বতন মহলে জানানো হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত