রমজান ও ঈদকে টার্গেট করে সুন্দরবনকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যাবহার করছে চোরাকারবারীরা

শুল্কফাঁকী দিয়ে চোরাই পথে আসছে ভারতীয় শাড়ী কাপড়: দেশীয় ব্যাবসায়ীরা হতাশ

মো.মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৮:৫১ পিএম, শনিবার, ১৩ মার্চ ২০২১ | ১৪৭১

শুল্কফাঁকী দিয়ে চোরাই পথে আসছে ভারতীয় শাড়ী কাপড় ও থ্রীপিচসহ অন্যান্য প্রসাধনী সামগ্রী। ইতিপুর্বে সড়ক পথে অনেক শাড়ী কাপড় ও অন্যান্য পন্যের চালান আটক হওয়ায় এবং আগত পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদকে টার্গেট করে সড়ক পথ ছেড়ে এখন সুন্দরবনের রুট নিরাপদ হিসেবে ব্যাবহার করছে চোরাকারবারীরা। তাই অবৈধ পথে আসা ভারতীয় পোষাকে সয়লাব হতে শুরু করেছে দক্ষিনাঞ্চলের বাজার গুলো। যার ফলে দেশীয় ব্যাবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছে, চাহিদা কমছে দেশিয় কাপড়ের বাজারে। প্রশাসনের তৎপতায়ও থামছেনা চোরাকারবারীদের দৌরাত্ব। এরই মধ্যে চোরাই পথে আসা ভারতীয় শাড়ি কাপড়ের একটি বড় চালান সুন্দরবনের চরাপুটিয়া এলাকা থেকে আটক করেছে কোস্টগার্ড। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাচারের সাথে জড়িত মাফিয়াদের চিহ্নিত করতে না পারায় থামছে না অবৈধ ওই কর্মকান্ড।


প্রতি বছর ঈদ, পুজা, বড়দিন সহ নানা উৎসব আয়োজনে নতুন কাপড়ের চাহিদা বাড়ে বাজারের দোকান গুলোতে। আর লোকজনের এমন চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে বাংলাদেশের বাজারের প্রবেশ করে ভারত সহ বিভিন্ন দেশের কাপড়ের বড় বড় চালান।


১২ মার্চ গভীর রাতে মোংলা বন্দরের পশুর নদীর সুন্দরবনের চরাপুয়িা এলাকা থেকে একটি দেশীয় ট্রলার বোঝাই প্রায় কোটি টাকা মুল্যের ভারতীয় শাড়ী কাপড়ের একটি বড় চালান জব্দ করে মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন। জব্দকৃত মালামাল আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কোস্টগার্ড হেফাজতে রয়েছে। বিপুল সংখ্যক ভারতীয় এ মুল্যবান শাড়ী কাপড়ের গাইডগুলো মোংলা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রক্রিয়া চলছে, যা পরবর্তীতে কি পরিমাণ কাপড়ের পণ্য ও তার মুল্য নির্ধারন করা হবে বলেও জানায় কোস্টগার্ড সদস্যরা।

তবে রাতে সুন্দরবনের গহিন থেকে এসকল ভারতীয় পন্যগুলো জব্দ করলেও পাচারের সাথে জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি কোস্টগার্ড। ভারতীয় শাড়ীর চালান জব্দের ঘটনায় কোস্টগার্ডের উপর মোংলাসহ দক্ষিনাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা খুশি। তবে বার বার শুধু মাত্র শাড়ী, থ্রীপিচ ও সার্টপিচ কাপড় আটক হয়, কিন্তু পাচারকারী থাকে ধরা ছোয়ার বাহিরে এ নিয়ে ব্যাবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।


মোংলা বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী ফেন্সি ক্লথ ষ্টোরের মালিক ও মোংলা বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মোঃ খোকন মিয়া বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, নিয়মিত চোরাই পথে আসা কাপড়ের চালান জব্দ হচ্ছে কিন্তু কারা এর সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে না। তবে সুন্দরবনে বনরক্ষীদের চোঁখ আড়াল করে কি ভাবে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য পাচার করছে তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর সাথে বনরক্ষিরা কেউ জড়িত আছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর কাছে জোর দাবী ব্যাবসায়ীদের।


বেশ কয়েক বছর ধরে অহরহ ঘটছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে কাপড়ের চালান আসার ঘটনা। এ কারনে যারা ভারতীয় শাড়ী কাপড় বিক্রি করছেন তারাই কেবল ব্যবসা করছেন। কারন শুল্ক ফাঁকি দেয়ার কারনে কম মুল্যে ভারতীয় শাড়ি ও থ্রি পিচ বিক্রি বেশি হচ্ছে। আর দেশীয় কাপড়ের পন্য বিক্রি করতে না পারায় বাকী ব্যাবসায়ীরা লোকসানের কবলে পড়ছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশী মানুষের কাছে ধিরে ধিরে কমছে দেশীয় কাপড়ের চাহিদা।


মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম হাবিবুল আলম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, সুন্দরবন ও খুলনাসহ তৎসংলগ্ন এলাকায় সরকারের শুল্কফাঁকী দিয়ে অবৈধভাবে বিদেশী কাপড়ের চোরাচালান আটকের ফলে বাগেরহাট, মোংলা, খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা এলাকায় কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। যার কারনেই ১২ মার্চ প্রায় কোটি টাকার চালান আটকের সাফল্য টহলেরই অংশ। পাচারকারীরা নিজস্বার্থ ও বেশী মুনাফা লাভের আশায় সরকারী কর ফাঁকি দিয়ে গোপন পথে বিদেশী শাড়ি কাপড় চোরাচালানী বা আমদানি করছে যা একবারেই কাম্য নয়। ভারত থেকে অবৈধভাবে মালামাল বাংলাদেশে প্রবেশ করা শুন্যের কোটায় নামিয়ে আনা হবে, এ লক্ষে কাজ করছে কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যরা। তিনি দাবি করেন, আগের তুলনায় এখন অনেকটা কমে গেছে চোরাই পথে মালামাল আসার ঘটনা। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে আসা মালামাল জব্দ হলেও কেন ওই পাচারের সাথে জড়িতরা আটক হন না এমন প্রশ্নের জবাবে জোনাল কমান্ডার জানান, তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারের সাথে জড়িতরা যানবাহন ও পণ্য ফেলে সুন্দরবনের গহিনে দ্রুত পালিয়ে যায় তাই তাদের আটক করা সম্ভব হয় না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত