ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি দল

মোংলায় পশুর চ্যানেলে ড্রেজিং প্রকল্পের বালুভরাট নিয়ে এলাকাবাসীর সাথে বিরোধ

মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ০৮:৪০ পিএম, সোমবার, ৩০ আগস্ট ২০২১ | ৭৯৫

মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ইনারবার ড্রেজিং প্রকল্পের বালু ডাম্পিং নিয়ে চীনা কোম্পানি ও গ্রামবাসি সাথে বিরোধের ফলে ত্রি-মুখী অবস্থান বিরাজ করছে। কৃষি জমি ও মৎস্য খামার নষ্ট করে ক্ষতিপুরন না দিয়ে জোরপূর্বক বালু ডাম্পিংয়ের ফলে ফসলি জমি ও জলাভূমির ক্ষতি হচ্ছে। যার ফলে হুমকির মুখে পড়বে জীববৈচিত্র। বালু ঝড়ের আগ্রাসনে বসবাসের অনুপযোগি পরিবেশের শংঙ্কায় চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন ওই এলাকায় বসবাসকারী গ্রামবাসি। দীর্ঘদিন চিঠি চালাচালী আর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিলে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসলে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সহস্রাধিক নারী-পুরুষ বালু ডাম্পিংয়ের স্থানে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানায়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপুরনসহ সুষ্ঠ-সমাধানের আশ্বাস জেলা প্রশাসক।


দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজ আগামন-নির্গমনে চ্যানেল সচল রাখতে আর মোংলা সমুদ্র বন্দরকে উন্নয়নে ৭ শ’ কোটি টাকার আউটার ড্রেজিংয়ের পর এবার পশুর নদীতে ইনার বার ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু করে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। চীনা কোম্পানী “জেএইচসিইসি এবং সিসিইসিসি” ঠিকাদার হিসেবে পশুর চ্যানেল খননের কাজটি করে যাচ্ছে। গত ১৩ মার্চ এ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আঃ খালেক ও উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। একাজের ব্যায় ধরা হয়েছে ৭শ ৯৩ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।


মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর চ্যানেলের ড্রেজিং করার জন্য এ প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিংকৃত মাটি পশুর নদীর তীরবর্তী জমিসমূহে ফেলার জন্য ১২ একরের মধ্যে মালিকানা ৭শ একর জমি হুকুম দখলে নেয়ার পরিকল্পনা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। উপজেলার ৬নং চিলা ইউনিয়নের ১১ নং চিলা মৌজার বিভিন্ন জমির মালিকের প্রায় সাড়ে ৩শ একর জমি রয়েছে। বাকি সাড়ে ৩শ একর রয়েছে কয়েকটি কোম্পানীর ক্রয়কৃত জমি। কিন্তু কোম্পানীর ও সাড়ে ৩শ একর এলাকাবাসী ওই জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও তাদের না জানিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও চায়না কোম্পানীর লোকজন ইচ্ছা মাফিক ঠিকাদার কোম্পানীর মাধ্যমে ইতিমধ্যে ভেরীবাধ নির্মান শেষে বালু ভরাটের কাজ শুরু করে দেয়। যেসকল জমিতে মৎস্য চাষ চলা অবস্থায় তাদের সেই ঘেরের মধ্যে বালু ভরাট করে ব্যাপক ক্ষতি করে দিয়েছে। এছাড়াও মাছের ঘেরের মধ্যে এখন চলছে ধান চাষ, সেই ধান চাষের ভিতরে বালু ফেলে ধান ও মাছ বিনষ্ট করে ফেলছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।


যে সকল জমিতে বালু ভরাট করে ফেলছে যেমন, গ্রামবাসীর মৎস্য ঘের, বসত বাড়ী ও কৃষি জমি, সে সকল জমির অধিগ্রহণ করা ছাড়াই এবং ওই জমির মালিকদের অনুকুলে কোন ক্ষতিপুরণ পরিশোধ না করে অন্যায়ভাবে জোর পূর্বক মৎস্য ঘেরে পানি অপসারণ করে মাটি কেঁটে তাতে ডাইক নির্মাণ করে বালু ভরাট করছে বলে গ্রামবাসীর দাবি। এছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের লিখিত নিয়মানুযায়ী রাস্তা লেভেল থেকে যেখানে ৬ ফুট উচু করার কথা থাকলেও সেখানে ২৫ থেকে ৩০ ফুট উচু করে মাটি ভরাট করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এভাবে উচু করে জমিতে মাটি বা বালু ফেললে আগামী ১০০ বছরেও উক্ত জমিতে কোন প্রকার ফসল ফলানো সম্ভব হবে না এবং এলাকায় বসবাস করাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে দাবী এলাকাবাসীর অনেকেরই।

সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের ফলে এবং জোর পুর্বক বালু ডাম্পিং এর অভিযোগে সোমবার দুপুুরে জেলা প্রশাসকের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসে। এমন খবরে চিলা ইউনিয়নের কোলাবাড়ী এলাকায় কয়েক সহস্রাধিক গ্রামবাসী নারী পুরুষ সমবেত হয়।

এসময় ওয়েষ্টান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাঃ লিঃ এর প্রতিনিধি মোঃ লুৎফর রহমানসহ ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই জেলা প্রশাসককে আকুতী-মিনতী করে জানান, কয়েকশ একর কোম্পানীর জমি। এছাড়া মৎস্য চাষের এবং ধান চাষের মৌশুম চলছে, তাদের জীবন ধারনের জন্য মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে ও পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার একমাত্র সহায় সম্বল টুকু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসার উপক্রম হচ্ছে। আমাদের ন্যয্য পাওনা না দিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করে অন্যায় ভাবে আমাদের উপর জুলুম করছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এসময় জেলা প্রশাসকের সাথে পুলিশ সুপার, বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক ও উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।


বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ আজিজুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে জানান, গ্রামবাসীর অভিযোগে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে দেখলাম, তাদের অভিযোগ সত্য। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সরকারের নিয়মানুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায্য পাওনাদি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সবার সম্মিলভাবে তা পরিশোধ এবং সকল সমস্যা তার নিজ হাতে সমাধান করার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।


মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক মোঃ শওকাত হোসেন বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী জমির মালিকগণ তাদের কাগজপত্র অনুযায়ী জমির ক্ষতিপুরনের টাকা দেয়া হবে এবং যেসকল জমিতে বেশী বালু ভরাট করা হয়েছে তাদেরও ক্ষতিপুরন দেয়া হবে বলে জানায় বন্দরের এ কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত