অঙ্গীকার একটাই বাল্যবিয়ে রোধ, ওরাও বাল্যবিয়ের শিকার

এস এস সাগর

আপডেট : ০৬:১১ পিএম, শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৯৮৬

ওরা তিনজনই বাল্যবিয়ের শিকার। কম বয়সে বিয়ে হলেও দক্ষ হাতে সংসার সামলিয়েছেন। নিজেদের সংসারকে সাজিয়ে তাঁরা সমাজ সেবায় নেমেছেন। জয় করেছেন ভোটারদের ভালবাসা। বিজয়ী হয়েছেন ভোটযুদ্ধে। ওরা বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার ৬ নং চরবানিয়ারী ইউনিয়নের নবনির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য। তিনজনই ওই ইউনিয়নের নতুন মুখ। তাদের অঙ্গীকারও একটাই, বাল্যবিয়ে রোধ। আমাদের আজকের আয়োজন ভোটযুদ্ধে জয়ী ওই তিন নারীকে নিয়ে।


কবিতা রানা (৪০)। বিয়ে হয় ১৯৯৪ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে। স্বামী কৃষক নীতিশ চন্দ্র রানা। চরবানিয়ারী ইউনিয়নের খলিশাখালী গ্রামে তাঁদের বসাবাস। দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে সবুজ রনা এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মেয়ে জয়তী রানা অষ্টম শ্রেনীতে পড়ে। ছেলে অসুস্থতার সময়ে দারিদ্রতার কঠিন সময় পার করেছেন। ছেলের চিকিৎসার জন্য ছুটেছেন খুলনা, ঢাকা, ভারতের কোলকাতা ও ভেলোরে। ছেলের সুস্থ্যতার পর অক্লান্ত পরিশ্রম করে গুছিয়েছেন সংসার। শুধু সংসার গুছিয়ে বসে থাকেননি কবিতা। সমাজের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে অংশ গ্রহণ করেন ২০ সেপ্টেম্বরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার ৬ নং চরবানিয়ারী ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নির্বাচন করেন। দুই প্রতিদ্বন্দিকে হারিয়ে এক হাজার ১৫৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর তিনটি ওয়ার্ডে ভোট ভোটার সংখ্যা ৩ তিন হাজার ৪৭০ জন। ভোট পড়েছে ২ হাজার ৭২২ টি।

নবনির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য কবিতা রানা বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, জীবনে অনেক যুদ্ধ করেছি। জয়ী হয়েছি। এখন যুদ্ধ শুধু সমাজের অবহেলিত ও অসহায় মানুষের জন্য। অবশ্যই বাল্যবিয়ে রোধ হবে আমার প্রথম অঙ্গীকার।

কানন কিত্তুর্নীয়া (৫০)। বিয়ে হয় ১৬ বছর বয়সে। পেশায় গৃহিনী। স্বামী গুরুদাস মন্ডল স্কুল শিক্ষক। বাস করেন চরবানিয়ারী ইউনিয়নের খড়মখালী গ্রামে। দাম্পত্য জীবনে দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে সাথি মন্ডল এমবিএ পাশ করেছেন। ছোট মেয়ে জুঁথি মন্ডল এমএ পরীক্ষা দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে পলাশ মন্ডল চিকিৎসা সহকারি (মেডিকেল এ্যাসিস্টেন্ড) পাশ করেছেন। নিজের সন্তানদের ও সংসারকে সাজিয়ে কানন কিত্তুর্নীয়া সমাজ ও সমাজের মানুষকে আলোকিত করতে মাঠে নেমেছেন। তাইতো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ। ৬ নং চরবানিয়ারী ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নির্বাচন করেন। তিন প্রতিদ্বন্দিকে হারিয়ে এক হাজার ২৮০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর তিন ওয়ার্ডে ভোট ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ১৫০ জন। ভোট পড়েছে ২ হাজার ৯১৫ টি।


নবনির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য কানন কিত্তুর্নীয়া বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, সংসারের পাশাপাশি সব সময়ই মানুষের পাশে রয়েছি। মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। বাকি জীবনটাও তাই করব। তবে বাল্যবিয়ের দিকে বেশী নজর দিবো। যাতে সমাজ থেকে চিরতরে বাল্যবিয়ে দূর হয়।

লিপিকা রানী বিশ্বাস (৩৮)। বিয়ে হয় ১৭ বছর বয়সে। স্বামী মৃত সুবোধ বিশ্বাস। বাস করেন চরবানিয়ারী ইউনিয়নের চরবানিয়ারী উত্তরপাড়া গ্রামে। এক মেয়ে এক ছেলে। মেয়ে অমিতা বিশ্বাস বিবাহিত। তাঁরও এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে অমিত বিশ্বাস এইচএসসি পরীক্ষার্থী। স্বামী শোককে কাটিয়ে সংসার গুছিয়ে লিপিকা বিশ্বাসও ছুটে চলেছেন সমাজ উন্নয়নে। তাইতো ২০ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে ৬ নং চরবানিয়ারী ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নির্বাচন করেন। তিন প্রতিদ্বন্দিকে হারিয়ে এক হাজার ৪৫০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।


নবনির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা সদস্য লিপিকা বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, আগে থেকেই রাজনীতির সাথে আছি। চিতলমারী উপজেলা শ্রমিকলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করছি। ভবিষ্যতে মানুষের আরো কল্যাণে নির্বাচনে আসা। কাজ করব মানুষের উন্নয়নে ও বাল্যবিয়ে রোধে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত