ফকিরহাটে বিপুল পরিমানে সরকারী জমি উদ্ধার

২১০টি ভুমিহীন পরিবার পাচ্ছেন আপন ঠিকানা

পি. কে.অলোক,ফকিরহাট

আপডেট : ১০:২৭ পিএম, বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২২ | ৮৯৯

ফকিরহাটে ১০কোটি টাকা মূল্যের অবৈধ দখলীয় সরকারী খাস জমি উদ্ধার করেছেন উপজেলা ভূমি অফিস। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিধান কান্তি হালদারের নেতৃত্বে উপজেলার বিভিন্ন মৌজা থেকে এসব জমি উদ্ধার করে তা ভুমিহীনদের বসবাসের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে ভুমিহীন ও নিঃস্ব এবং হতদরিদ্র পরিবার গুলি পেতে যাচ্ছেন মাথা গোজার শেষ আশ্রয়স্থল। এধারা অব্যাহত রাখলে মডেল এ উপজেলায় কোন গৃহহীন ও ভুমিহীন থাকবেনা বলে সচেতন মহলের ধারনা।

উপজেলা ভূমি অফিস সুত্রে জানা গেছে, ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমানে সরকারি খাস জমি দীর্ঘদিন ধরে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তা ভোগদখল করে আসছিল। এসব জমির মধ্যে বিলান, ডাঙ্গা, কৃষি ও চর ভরাটের খাস জমি অন্তর্ভূক্ত ছিল। এসব জমি উদ্ধারের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি), নায়েব ও সার্ভেয়ারদের সমন্বয়ে একটি দল সরকারি সম্পত্তি সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও উদ্ধার কার্যক্রমের আওতায় খাস জমি চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেন। তাদের এ কার্যক্রমকে সহায়তা করতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশের তত্ত¡াবধানে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করেন।

সে মোতাবেক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিধান কান্তি হালদারের নেতৃত্বে গত জানুয়ারী-২০২১ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট ৩৬.৩৮ একর সরকারী খাস জমি উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় মৌজা দর অনুযায়ী উদ্ধারকৃত এ জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০কোটি ১০লক্ষ ৫০হাজার ৪৫৫টাকা।

উপজেলার সুনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ফকিরহাট সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও মানসা-বাহিরদিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আওতায় থাকা ভলিউম বই ও খতিয়ান পর্যালোচনা করে খাস জমি চিহিৃত করে উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়েছিল।


সুত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ফকিরহাট ভূমি অফিস থেকে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে প্রেরিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উদ্ধারকৃত সরকারী খাস জমির একটি বড় অংশ সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃহ নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। যার মধ্যে ১৩০টি ঘর ইতিমধ্যে তৈরি করে ভূমিহীনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।


এছাড়া বর্তমানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮০টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। তবে উদ্ধারকৃত জমির মধ্যে ১.৭৮ একর পূনঃরায় বেদখল হয়ে গিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।


এ বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন মামলা ও আদালতের নির্দেশে মূলত এসব জমি সরকারের হাত থেকে বেদখল হয়েছে।

জমি উদ্ধার ও ভূমিহীনদের বরাদ্ধের বিষয়ে আলাপ করা হলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, ফকিরহাটে কোন মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না এমন লক্ষ্য নিয়ে মূলত কাজটি শুরু করা হয়েছে। ভূমিহীনদের আবাসনে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। তা বাস্তবায়নে আমরা সমন্বিত ভাবে কাজ করছি। স্থানীয় ভূস্বামীদের হাত থেকে অনেক জমি উদ্ধার হয়েছে। এ উদ্ধার কাজ অব্যাহত রেখে সকল ভূমিহীনকে তা বরাদ্ধ দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, “উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে খাস জমি ভোগ করা প্রভাবশালী ও ভূমিস্বামীদের কাছে স্পস্ট একটি বার্তা গিয়েছে। সরকারি জমি কেউ জোর জবরদস্তি ভোগ দখল করতে পারবেন না। এ জমি উদ্ধার করে ভূমিহীনদের মধ্যে বন্টন করে আমরা সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য কমানো ও এসডিজি অর্জনে সরকারকে সহায়তা করার চেষ্টা করছি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিধান কান্তি হালদার বলেন, সরকারি সম্পদ সংরক্ষণের জন্য খাস জমি উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়। উদ্ধার কাজ বেগবান করতে উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা বেগম বলেন, খাস জমি উদ্ধার একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া হলেও অনেক কারণে তা থমকে ছিল। ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কারণে এ উদ্ধার কাজ আরো বেগবান হয়েছে। জমি উদ্ধার করে বেশ কিছু জমিতে গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এধারা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত