পদ্মা সেতুর উদ্বোধনঃ ঘুরে দাড়াবে বাগেরহাটের পর্যটন শিল্প, বাড়বে রাজস্ব আদায়

মামুন আহমেদ

আপডেট : ১২:০৯ এএম, বুধবার, ২২ জুন ২০২২ | ৭১৭

ষাটগম্বুজ মসজিদ

পর্যটন শিল্পে সম্ভাবনাময় জেলা বাগেরহাটে রয়েছে বিশ্বঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবন। পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি-বিদেশী পর্যটকদের আগমন ঘটে এ জেলায়। সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও দেশী-বিদেশী পর্যটকদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় জেলা বাগেরহাটে পর্যটন শিল্পের তেমন বিকাশ ঘটেনি দীর্ঘদিন। তবে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এবার নতুন আশায় বুক বাঁধছেন পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা।

পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাগেরহাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য যাতায়াতের প্রধান ব্যবস্থা হচ্ছে সড়ক পথ। আর এই সড়ক পথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা না থানায় ব্যবসা-বানিজ্যে পণ্য পরিবহনে যাতায়াতে মাওয়া-ঘাটে যানজট, প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে ঘন্টারপর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকাসহ নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হত। সময় মতো পৌছানো যেতো না গন্তব্যে। তবে পদ্মা সেতু চালুর মধ্য দিয়ে সেই চিরচেনা যাত্রা একেবারেই পাল্টে যাবে দক্ষিনের জেলা বাগেরহাটের। ঘুরে দাড়াবে সম্ভাবনাময় বাগেরহাটের পর্যটন শিল্প। সরকারের রাজস্ব বাড়বে কয়েকগুন।



যা বলছেন টুরিস্ট গাইড ও ব্যবসায়ীরা
বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইইনিয়নের বাসিন্দা ট্যুরিস্ট গাইড নিয়ামুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, বিশ^ ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবন দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সমাগম থাকে প্রায় বছর জুড়ে। পর্যটন মৌসুম বাদেও বছরের প্রায় সব সময়ই কম-বেশি দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে বাগেরহাটে। বাগেরহাটের আসতে মাওয়া ঘাটে জ্যামসহ নানা কারনে ইচ্ছা থাকলেও পর্যটকরা সহজে আসতে পারতো না। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জেলার পর্যটন স্পট গুলোর আশপাশে উন্নত মানের কোনো খাবার হোটেল ও থাকার ব্যবস্থা না থাকাসহ বিভিন্ন কারনে পর্যটকদের বিড়াম্বনায় পড়তে হতো। আশা করছি পদ্মা সেতু চালুর পর এ সমস্যা গুলো আর থাকবে না। ভ্রমন পিপাসুরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের ভ্রমন শেষে ফিরে যেতে পারবে। এছাড়া পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পেলে সরকারের পাশাপাশি ব্যাক্তি উদ্যোগে নানা স্থাপনা তৈরী হবে। হাজার হাজার বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।


বাগেরহাট খানজাহান আলী (রঃ) মাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী মোঃ কামরুজ্জামান বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, পর্যটন মৌসুম ছাড়া বাগেরহাটে পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকে। এ কারনে হোটেল ব্যবসায়ীদের আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। পদ্মা সেতু খুলে দিলে, বছর জুড়ে পর্যটকদের আগমন ঘটবে বাগেরহাটে। চাপ থাকবে হোটেল-মোটেল গুলোতে। নতুন নতুন হোটেল-মোটেল তৈরী হবে, বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগও। কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পাবে সরকার।



রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে ষাটগম্বুজ মসজিদে
পদ্মা সেতু খুলে দেয়া সরকারি রাজস্ব আদায় কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে দাবী করছেন বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ। তিনি বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হলে দেশি-বিদেশী পর্যটকদের চাপ বাড়বে মসজিদের শহর বাগেরহাটে। এতদিন সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় দর্শনার্থীদের আগমন কম ছিলো। এখন পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হলে দর্শনার্থীরা দিনেদিনে ভ্রমন করে আবার ফিরে যেতে পারবে। এ অর্থ বছরে ষাটগম্বুজ মসজিদে দেশি-বিদেশী পর্যটক এসেছে প্রায় দুই থেকে আড়াই লক্ষ, আর রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা। পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হলে পর্যটকদের সংখ্যা দুই থেকে তিন গুন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ও দুই থেকে তিন গুন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।


পর্যটকদের চাপ সামলাতে পূর্ব সুন্দরবনে নতুন চারটি পর্যটন স্পট
পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই চাপ বাড়বে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে। এ কারনে পর্যটকদের কথা বাড়তি বিনেদন দিতে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ও পশ্চিম সুন্দরবনে তৈরী করা হচ্ছে চারটি নতুন পর্যটন স্পট। নতুন এ পর্যটন স্পট গুলোর নির্মান কাজ শেষ হলেই ঘুড়তে আশা দেশি-বিদেশী পর্যটকরা সুন্দরবনের রুপ-বৈচিত্র উপভোগ করার পাশাপাশি বাড়তি আনন্দ পাবেন বলে দাবী করছেন বাগেহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন। তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, পর্যটন শিল্পের বিকাশে পূর্ব শর্ত হচ্ছে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সুন্দরবনে দর্শনার্থীদের আগমন কম ছিলো। তবে পদ্মা সেতু চালু হলে এ সমস্যা আর থাকছে না। দেশি-বিদেশী পর্যটকরা সহজে সুন্দরবনে আসতে পারবে। এ কারনে পর্যটকদের চাপ সামাল দিতে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগে দুটি ও পশ্চিম সুন্দরবনে দুটিসহ মোট চারটি নতুন ট্যুরিস্ট স্পট তৈরী করা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে যে ট্যুরিস্ট স্পট গুলো রয়েছে সে গুলো ওয়াচ টাওয়ার, ফুট ট্রেইলার, গোল ঘর ও পাবলিক টয়লেটসহ অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন করা হচ্ছে।


সরকার কি পরিমান রাজস্ব পাবে এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর সুন্দরবনে এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার পর্যটক ঘুড়তে আসে। এ অর্থ বছরে পর্যটন খাত থেকে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। পদ্মা সেতু খুলে দেয়ায় পর্যটক দ্বিগুনের পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ও দ্বিগুন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।



পর্যটন বান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে বাগেরহাটকে
শুধু ষাটগম্বুজ মসজিদ বা সুন্দরবন নয়, বাগেরহাটে দেখারমত আরও অনেক স্থাপনা রয়েছে দাবী করেছেন বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান। তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টিফোরকে বলেন, মসজিদের শহর বাগেরহাটকে দেশি-বিদেশী মানুষের কাছে আরও পরিচিত করতে আমাদের সকলের এগিয়ে আসতে হবে। দীর্ঘদিন আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আবাসন সুবিধা না থাকায় বাগেরহাট ভ্রমনে দর্শনার্থীদের আগ্রহ কম ছিলো। কিন্তু স্বপ্নে পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পর সহজে বাগেরহাটে আসতে পারবে পর্যটকরা। এর আগে ফেরি ঘাটেই ৭/৮ ঘন্টা ব্যায় হয়ে যেতো, এখন মাত্র ৩ ঘন্টার মধ্যেই পর্যটকরা বাগেরহাট আসতে পারবে। দেশি-বিদেশী পর্যটকদের কাছে বাগেরহাটকে আরও আকর্ষনীয় করে তুলতে সরকারি ভাবে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতি মধ্যেই পর্যটন করপোরেশনের অর্থায়নে ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি তিন তারকা মানের হোটেল ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। ষাটগম্বুজ মসজিদের সামনে বিশ্রামাগার নির্মাণ, মসজিদ সংলগ্ন ঘোড়াদিঘিকে নান্দনিক করতে ওয়াকওয়ে তৈরি করা, বাগেরহাটকে পর্যটক বান্ধব করার জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১শ জনকে ট্যুরিস্ট গাইড হিসাবে প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে।

তিনি অরও বলেন, শুধু সরকারি ভাবে নয়, ব্যাক্তি উদ্যোগে দৃষ্টি নন্দর হোটেল-মোটেলসহ নানা স্থাপন তৈরী করার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হতে হবে। এর ফলে লাখো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এখানকার মানুষের জীবনমান আরও বৃদ্ধি পাবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত