মোংলায় চাঁদপাই নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক উদ্ধারের নামে গৃহবধুকে মারধরের অভিযোগ 

মাসুদ রানা,মোংলা 

আপডেট : ১০:২৬ পিএম, শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২ | ৪৫০

মোংলা জয়মনি এলাকার স্থানীয় সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে অসহায় এক দিন মজুর পরিবারকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে গিয়ে এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়েছে নৌপুলিশ বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইয়ারা ও মাদক উদ্ধারের নামে বসত ঘরে ঢুকে গৃহবধুকে মারধর, অশালীন আচরণ ও গায়ের পোশাক টেনে শ্লীলতাহানির অভিযোগ চাদপাঁই নৌপুলিশের বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনির ঘোল বটতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এব্যাপারে সন্ত্রাসী বাবু খাঁন সহ কয়েকজন নৌ-পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বাগেরহাট পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে জয়মনির ঘোলে জনমনে আতঙ্ক ও এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী গৃহবধু তানিয়া বেগম জানায়, জয়মনি এলাকার ওয়ার্ড আওয়ামীলীরে সভাপতি খালেক খানের ছেলে মিরাজুল খাঁন বাবু একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এলাকায় ত্রাস সৃস্টি করে গরিব ও অসহায় লোকদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিনিয়ত চাঁদা আদায় করছে সে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলাসহ মোটা অংকের টাকা পাওনার নামে নিরিহ মানুষদের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেণ।
গত ৫ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জয়মনির বটতলা এলাকার দিন মজুর আঃ রাজ্জাক শেখ’র ছেলে তামিম শেখ’কে পথ রোধ সহ মারধর করে এবং তার কাছ থেকে জোর পুর্বক ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় ব্যাবহৃত নতুন একটি বাজাজ ডিসকভার মোটরসাইকেলও কেড়ে নেয় বাবু। বিষয়টি তামিম তার পরিবারের সদস্যদের জানালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আকবার হোসেন সহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের জানানো হলে বাবু অরো ক্ষিপ্ত হয়। শুক্রবার রাতে আঃ রাজ্জাক শেখ ও তামিম শেখ’র বাড়ীতে ইয়াবা ও মাদক রেখে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করে সন্ত্রাসী বাবু খাঁন ও তার লোকজন। রাত ১১টা ৪০ মিনিটের সময় বাবু ও তার দলবল নিয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করে। এসময় রাজ্জাক শেখ’র স্ত্রী তানিয়া বেগম বুঝতে পেরে ডাক চিৎকার শুরু করলে বাবু সহ তার লোকজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। ওই রাতেই ঘটনাটি মোংলা থানা, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয়দের অবহিত করেন রাজ্জাক ও তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্ত দিন মজুর রাজ্জাকের পরিবারকে ফাসাঁতে না পেরে জয়মনি চাদপাঁই নৌ-পুলিশকে ম্যানেজ করে সন্ত্রাসী বাবু খান। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হঠাৎ নৌপুলিশের ওসি সহ ১০/১৫ জনের একদল পুলিশ তার বাড়ী ঘেরাও করে। রাজ্জাক বাড়ীতে না থাকার সুবাদে ইয়াবা ও মাদক উদ্ধারের নামের ঘরে ঢুকে গৃহবধু তানিয়াকে অকথ্য ভাষায় গালাগালী ও মারধর শুরু করে এবং ঘরে থাকা আসবাব পত্র মুল্যবান মালামাল ভাংচুর করে নৌপুলিশের সদস্যরা। এসময় গৃহবধু তানিয়া ডাক-চিৎকার দিলে পুত্রবধুকে বাঁচাতে শ্বাশুরী রহিমা বেগম, শ্বশুর নুর আলী শেখ সহ অন্যান্যরা এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারধর করে এবং তানিয়ার পড়নের পোষাক টেনে হেছড়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে বলে তানিয়া অভিযোগ করেন নৌপুলিশের বিরুদ্ধে। পরে বসত বাড়িতে তল্লাশী করে কিছু না পেয়ে অহেতুক গরীব লোকদের হয়রানী ও নির্যাতনের ঘটনায় এলাকাবাসীর তোপের মুখে দ্রুত বাড়ী থেকে বেড়িয়ে যায় নৌপুলিশেল ওসি সহ অন্যান্য সদস্যরা। এব্যাপারে শনিবার দুপুরে তানিয়া বেগমের শ্বশুর নুর আলী শেখ বাদী হয়ে সন্ত্রাসী মিরাজুল খাঁন ওরফে বাবু, মোংলা জয়মনি নৌ-পুলিশের ওসি মোঃ জাহাঙ্গির হোসেন সহ প্রায় ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে একটি অভিযোগ দাখিল করেণ।
এব্যাপারে বাবু খাঁন জানায়, আমি টাকা পাবো তাই গাড়ী আটকে রেখেছি যা চেয়ারম্যান জানে তবে অন্য সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে জানায় তিনি।
চিলা ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আকবার হোসেন জানান, তামিমের কাছে বাবু টাকা পাবে বলে আমাকে জানিয়েছে, তবে মোটরসাইকেলের ব্যাপারে আমার জানা নাই।
জয়মনি বটতলা এলাকার প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানায়, বাবু স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আকবার হোসেন ও নতুন যোগদান করা নৌপুলিশের ওসি’র ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ওই এলাকার ব্যাবসায়ী মাসুদ খান সহ প্রায় ৮/১০ জনের কাছ থেকে মিথ্যা অজুহাত দিয়ে মারধর ও গাড়ী আটকিয়ে জোর পুর্বক টাকা আদায় করারও অভিযোগ রয়েছে। সন্ত্রাসী বাবু খাঁনের ভয়ে অনেকেই বাড়ী থেকে বের হতে পারছেনা।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধু তানিয়া বেগম জানান, ৫ জুলাই ছেলে তামিমের মোটরসাইকেল আটকে রাখছে বাবু। চেয়ারম্যান সহ অনেকের কাছে গিয়েছি কিন্ত কেউ বাবুর কাছে যেতে সাহস পাচ্ছেনা। শনিবার সকালে বাবু খাঁন আমাদের বাড়ীর পাশে দাড়িয়ে থাকে এবং ওসি ও ১০/১৫ নৌপুলিশ সদস্য আমাদের বসত ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে ঘরের বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করতে থাকে। এ সময় আমি ও আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী মালামাল ভাংচুর করতে বাধা দিলে তারা উত্তেজিত হয়ে আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করে। পরে ডাক চিৎকার দিলে আমার পরোনের পোষাক টেনে শ্লীলতাহানী ঘটানোর চেষ্টা করে নৌপুলিশের সদস্যরা।
চাদপাঁই নৌপুলিশের ওসি মোঃ জাহাঙ্গির হোসেন খাঁন জানান, গোপন সংবাদ পেয়ে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযানে যাওয়া হয় কিন্ত কোন ইয়াবা বা অন্য কোন মাদক পাওয়া যায়নি। আমাদের অভিযানের খবর পেয়ে তারা মাদকগুলো লুকিয়ে ফেলার কারনেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া তানিয়া বেগম নামের গৃহবধুকে গালমন্দ বা মারধর করার ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে জানায় তিনি।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত