গ্রামের মেয়ে

সিকদার মনজিলুর রহমান

আপডেট : ১০:৪৬ পিএম, শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০২২ | ৯০১

বাবা প্রয়াত। মহামারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মা রেহানা খাতুনও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বাবার মৃত্যুর পর মায়ের একক অভিভাবকত্বে বাবা ও মায়ের আদরে বেড়ে উঠেছে দুই ভাইবোন রায়হান ও রাখি।

মাত্র ক’ দিন আগেও বাবা-মায়ের ৫০ তম বিবাহবার্ষিকী উদযাপন করেছিলো সকলে মিলে। ঘরভর্তি মানুষ,বেলুন দিয়ে সাজানো, দেওয়ালে মা-বাবার ছবি। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছিল তারা । রায়হান ও রাখি দুই ভাইবোন ঘরের বারান্দায় বসে মলিন মুখে ভাবছে হঠাৎ কি যে হয়ে গেল ? পৃথিবী থেকে মা-বাবা একে একে সবাই তাদের ছেড়ে চলে গেলেন । বুকে একটা কষ্টের দীর্ঘশ্বাস টেনে রাখি ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, কি যে মহামারি দেশে এলো ভাইয়া, আর আমরাও এতিম হলাম । আরো কতজন মানুষ যে এতিম হবে?

রায়হান সে কথার কোন জবাব না দিয়ে সেও একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

মহামারী করোনায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজীর পড়ুয়া রায়হান নিজ রুমে অনলাইনে ল্যাপটপে বসে ক্লাশ করছে। এমন সময় ছোট বোন রাখি রুমে ঢুকে রায়হানের কাঁধে হাত রেখে , জিজ্ঞেস করল , কী করছ ভাইয়া ?

এই তো অনলাইনে একটা ক্লাশ করছি ।

তুমি আছ তোমার ক্লাশ নিয়ে । বাবা, মা সবাই চলে গেলেন । আমার তো বাড়িতে কিছুই ভাল লাগছে না। চলনা কোথাও একটু ঘুরে আসি ।

এই করোনার মধ্যে কোথায় যাবি ? বোন ।

মা বলেছিলেন ,ফকিরহাটে কাজী আমজাদ হোসেন নামে বাবার একজন বন্ধু আছেন । বাবা আর তিঁনি একই সাথে বাগেরহাট পিসি কলেজে পড়তেন। খুব ভালো মানুষ । চলনা, তাঁদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসি ।

আমিও শুনেছি ।

বাঁশতলী বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার একটি গ্রাম, একটি ইউনিয়ন পরিষদও । গ্রামের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে মোংলা পোর্টের দিকে। এই ইউনিয়ন পরিষদের আজীবন চেয়ারম্যান ছিলেন হাজী মেহের হাওলাদার । এলাকায় ভালো কোন কলেজ না থাকায় একমাত্র ছেলে আবু হানিফ হাওলাদারকে ভর্তি করে দিলেন জেলার প্রসিদ্ধ কলেজ বাগেরহাট পিসি কলেজে। হানিফ যখন কলেজ পড়তে যান তখনই পরিচয় হয় ফকিরহাটের কাজী আমজাদ হোসেনের সাথে । দু’জন কলেজের একই হোস্টেলে থাকতেন । কলেজে পড়াকালিন আমজাদ হোসেন ডিভি লটারি পেয়ে আমেরিকা চলে যান । বন্ধু আমজাদ হোসেন আমেরিকা চলে গেলে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন আবু হানিফ । ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্ট বের না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ফিরলেন তিনি। এরই মধ্যে হঠাৎ বাবা মারা গেলেন। স্থানীয়দের অনুরোধে নির্বাচনে বাবার স্থলাভিষিক্ত হলেন আবু হানিফ। কলেজে আর ফেরা হলো না। নির্বাচিত হলেন এলাকার চেয়ারম্যান। এর পরে বিয়ে করে পুরো সংসারী হলেন আবু হানিফ। এই সংসারেরই দু'সন্তান রায়হান ও রাখি। বাবার মৃত্যুর পর এলাকাবাসীর আবেগ আর আশির্বাদে ভালো ভালোয় চেয়ারম্যানের দু’টি মেয়াদ পার করলেন এলাকার স্বনাম ধন্য চেয়ারম্যন হাজী মেহের হাওলাদের উত্তরসূরী আবু হানিফ হাওলাদার। তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচনের প্রস্ততি নিচ্ছেন আবু হানিফ ঠিক এমনই সময়ে নির্বাচনী সহিংসতায় আততায়ীর গুলিতে খুন হন হানিফ হাওলাদার ।

রাখি সেদিন সন্ধ্যার দিকে গৃহপরিচারিকা আলেয়া বেগমের সাথে গল্প করছিলো এমন সময় রায়হান এসে বলল; কী করছিস বোন ?

খালার সাথে বসে বসে গল্প করছি। কেন কিছু বলবে, ভাইয়া ?

বলছিলাম কি,‘ চল আগামি সোমবার আমরা ফকিরহাটের ঐ আমজাদ চাচার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসি। আমাদের চিংড়ির ঘেরে কাজ করে না সেলিম ওর মামাতো ভাই ফারুক সিএনজি চালায় । আসা যাওয়ার জন্য তার সিএনজি ভাড়া করেছি ।

সোমবার দুই ভাইবোন ফকিরহাট কাজী বাড়ির অভিমুখে রওয়ানা দিল। রামপাল থেকে বেরিয়ে খুলনা মোংলা মহাসড়ক ধরে সোজা কাটাখালি হয়ে ফকিরহাট উপজেলা সদরে গিয়ে পোঁছিল ।

সিএনজি ড্রাইভার ফারুক হানিফের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,অজানা গন্তব্যে আমরা কোন দিকে যাব ভাই ? ফকিরহাট তো পৌঁছে গেলাম।

জবাবে হানিফ বলল,এক কাজ কর ।

কী কাজ ?

সামনে উপজেলা পরিষদ ভবন । সেখানে গিয়ে আমরা অনুসন্ধান করি কাজী আমজাদ হোসেন নামে কোন ব্যক্তিকে তারা চিনেন কী না ?

উপজেলা চেয়ারম্যানের চেম্বারে ঢুকতে গিয়ে দেখেন তিনি চেম্বারে নাই।

অফিস সহকারি জিজ্ঞেস করলেন,আপনারা কি চান?

আমাদের বাড়ি রামপাল। এ উপজেলায় কাজী আমজাদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির খোঁজে এসেছি। তিনি বাবার বন্ধু ।

চেয়ারম্যান সাহেব তো নাই। তবে একটা কাজ করেন আমাদের এখান থেকে বেরিয়ে ডানদিকের সোজা কয়েক কিলোমিটার গেলে ফকিরহাট ইউনিয়ন পরিষদ পাবেন। সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারেন। তারা হয়ত সঠিক ইনফরমেশন দিতে পারবেন।

ঠিক আছে,থ্যাংক ইয়্যু ব্রাদার বলে, রায়হান তার দেয়া ডাইরেকশন মতো সিএনজি চালাতে বলল।

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ডাইরেকশন দিল, আমাদের পরিষদের সামনে যে বোর্ড রাস্তা দেখছেন এই রাস্তায় ডানদিকে টার্ন নিয়ে সোজা চলে গেলে কিছুদুরে পাবেন কাঁঠালতলা কাজী আজহার উদ্দিন হাই স্কুল । স্কুল পার হলেই গ্রামের ভিতরে সুন্দর সুন্দর দুটি বাড়ি দেখতে পাবেন । প্রথমটি কাজী আজহারের এবং পরেরটাই কাজী আমজাদ হোসেনের বাড়ি। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। বাড়ি দু’টো এলাকায় সচিব কাজী বাড়ি ও আমেরিকান কাজী বলে পরিচিত । কাজী আজহার একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব এবং আমজাদ হোসেন আমেরিকা ফেরত । চিনতে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না।

ডাইরেকশন অনুযায়ী দুই ভাইবোন কাজী আমজাদ হোসেনের বাড়ি গিয়ে পোঁছিল।

দোতালা নান্দনিক বাড়িটি দেখে রাখি মুগ্ধ হয়ে রায়হানকে বলল, কি সুন্দর বাড়ি তাই না,ভাইয়া ! একেবারে বিদেশি স্টাইল । বাড়ির পিছনে সুন্দর ফুলফলের বাগান ।

হ ,চাচার রুচি আছে। আমেরিকা ছিলেন না ।

প্রতিদিন সকাল বিকেল বাড়ির বাগান পরিচর্যা করা কাজী আমজাদ হোসেনের অভ্যেস। বাড়ির পেছনে বিস্তর জায়গায় হরেক রকমের শাক-সব্জি, ফলফুলের বাগান। বাগানের মালির সাথে তিনিও এগুলোর পরিচর্যা করে থাকেন।

রায়হান দূর থেকে দেখল একজন বয়স্ক লোক বাগানে গাছে পানি দিচ্ছেন । বাগানের মালি টালি কেউ হবেন ? সে এগিয়ে গেল তার কাছে। তিনিও তার দিকে ঘুরে তাকালেন। গাছে পানি দিতে দিতেই জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কাকে চাও?

রায়হান উত্তর দিল,আমরা আমাদের চাচাজানরে খুঁজতেছি ?

তোমাদের চাচাজান? কে তোমাদের চাচাজান ?

ঐ যে,কাজী আমজাদ হোসেন সাহেব ।

ভ্র কুচকে জিজ্ঞেস করলেন ,কাজী আমজাদ সাহেব তুমি তাকে চেন ?

চিনব না কেন ? তাঁকে ডাকেন ?

আবারও জিজ্ঞেস করলেন তোমরা তাঁকে চিন ?

হ্যাঁ,চিনি ।

এবার তিনি রেগে গিয়ে বলে উঠলেন, তাঁর সাথে কথা বলবে ? জলজ্যান্ত আমজাদ হোসেন সামনে আর বলছে তাঁকে ডাকেন ? গেট আউট ফরম হেয়ার ,বাটপার । গেট আউট । এমন সময় তিনি উচ্চস্বরে ডাক দিলেন, আব্দুল, আব্দুল ?

বাগানের ভিতর থেকে সাড়া এলো , জ্বী, চাচা ।

এ দিকে আয় তো। দেখ, কোথা থেকে দূ’টো বাটপার এসেছে । এদেরকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের কর তো।

উচ্চস্বরে চিৎকার শুনে রাখি ভীত হয়ে আজহার সাহেবের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, আমাদের মাফ করে দেন চাচাগো ! শুধুমাত্র আপনার নাম শুনেছি কোনদিন চোখে দেখি নি ।

এমন সময়ে কাস্তে হাতে মাথায় গামছা বাঁধা এক যুবক দৌঁড়ে এসে সেখানে হাজির হলো ।

তাকে উদ্দেশ্য করে আজহার সাহেব বললেন , আরে দাঁড়িয়ে দেখছিস কী ? মেয়েটিকে ধর, ধরে তোল ।

রায়হান থ মেরে বোনের কান্ড দেখছিল । বোন হঠাৎ করে এমন বিহ্বল হলো কেন?

কাস্তেটা পাশে রেখে মেয়েটাকে তুলতে তুলতে আব্দুল জিজ্ঞেস করলো, তোমরা কারা ?

আমরা পিতামাতাহীন এতিম দুই ভাইবোন।

এতিম ভাইবোন ? তবে এখানে কেন ? তোমাদের বাড়ি কোথায় ?

রামপাল ।

জিজ্ঞাসু প্রশ্নে আজহার সাহেব বললেন , রামপাল ?

রায়হান জবাব দিল জ্বী, রামপাল। রামপালের আবু হানিফ হাওলাদারের কথা মনে নাই ? আপনারা একই সাথে পিসি কলেজে পড়তেন ?

আবু হানিফ হাওলাদার চেয়ারম্যানের ছেলে ?

রায়হান জবাব দিল রামপালে আবু হানিফ হাওলাদারের কথা মনে নাই ? আপনার সতীর্থ। পিসি কলেজে পড়তেন ?

আবু হানিফ হাওলাদার চেয়ারম্যানের ছেলে ?

জ্বী । উনিই তো আমাদের বাবা ।

বল কী ? তোমরা হানিফের ছেলেমেয়ে আগে বলবে তো ?

বলার সে সুযোগ পেলাম কই ? এর আগেই তো আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিতে চাইলেন।

কী নাম তোমার ?

রায়হান ।

রাখির দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করনে, তোমার নাম কি ? মা !

রাখি । আমার নাম রাখি চাচাজান ।

তোমাদের মা কই ? তিনি আসেন নাই ?

রায়হান কেঁদে কেঁদে বলল, না চাচাজান, তিনি আসেন নি। করোনায় তাঁকে নিয়ে গেছে ।

হায় হায়, তোমরা হানিফের ছেলেমেয়ে বলে বিলাপ করতে করতে তাদের বুকে টেনে নিয়ে বললেন, হানিফ আমার শুধু বন্ধু নয়,পরম আত্নীয়ও । তোমরা তারই সন্তান আজ আমার বাড়িতে। আমি তাদের অবহেলা করছি । আমেরিকা বসেই তোমার বাবার খুনের খবরটা শুনেছি । দেশে ফিরে ভেবেছিলাম একবার তোমাদের বাড়ি যাব । এরই মধ্যে বড় ছেলেটা হঠাৎ মারা গেল। আর যাওয়া হয়ে উঠেনি ।

চাচা,ভুল আপনার নয়,আমাদের । আপনাকে দেখে আমাদের মনে হয়েছিল বাগানের মালি । তাই আমরা কোন পরিচয় আপনাকে দেই নি। ভেবেছিলাম আপনাকে সামনে পেলে তখনই পরিচয় দিব।

শোন বাবা, আমি আমেরিকায় ছিলাম। সেখানে কোন কাজই ছোট করে দেখা হয়না। বাড়ির ঘাস কাটা, ময়লা ফেলা, বাজারঘাট করা সবই নিজেরা করে । আমিও তাদের দেখে দেখে শিখেছি নিজের কাজ নিজে করতে কোন শরম নাই । বরং গর্বের বিষয়। আমাদের দেশে কেউ গাড়ি কিনলে দেখবে ড্রাইভার রেখে গাড়ি চালাবে। সে দেশে নিজের গাড়ি নিজেই চালায়। প্রতি পরিবারের দু’ চারটে গাড়ি আছে। আব্দুল নামের যে ছেলেটা তোমার বোনকে টেনে তুলল সে আমার বাগানের মালি । মালির সাথে মিলেমিশে বাগানে কাজ করি। আর এখানে দাঁড়িয়ে আর গল্প নয় । চল,চল বাড়ির ভিতরে চলো । তোমাদের চাচির সাথে পরিচয় করিয়ে দেই ।

প্রতিদিনের অভ্যেসমত সেদিন বিকেলে আমজাদ সাহেব ফুলের বাগান পরিচর্যা করছিলেন ,এমন সময় স্ত্রী নূরজাহান বেগম চা,পান-সুপারি সাজিয়ে থালা হাতে বাগানে গেলেন স্বামীর সাথে সময় দিতে ।

আমজাদ সাহেব স্ত্রীর দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন ,তুমি এসেছো ? ঠিক আছে । ক’দিন ধরে ভাবছি তোমাকে একটা কথা বলব,বলতে বলতে বাগানের পাশে একটি বেঞ্চে গিয়ে বসলেন ।

স্ত্রীও পাশে এসে বসে জিজ্ঞেস করলেন কী?

আমজাদ সাহেব মুখে পান গুজে দিতে দিতে এদিক সেদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ওরা কই ?

ওরা কারা ?

ওরা দুই ভাইবোন । রায়হান আর রাখি ।

রাখি মেয়েটাকে আমার খুব পছন্দ। ওকে আমাদের পুত্রবধূ করলে কেমন হয়?

আপনার ছেলে কী রাজী হবে ?

আরমান তো আমার ছেলে । আমার ছেলেরে আমি যা বলব তাই শুনবে,তাই না ? সেকি আমার অবাধ্য হবে?

আজকালকার পোলাপান। তারও তো পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে ?

দিলা। মেজাজটা খাটা কইরা দিলা। পোলার মা হইছো ঠিকই । কিন্তু পোলা কিভাবে সুখী থাকবে সেই কথা চিন্তা করোনা কখনও । আরে ছেলে আমার ঢাকায় থাকে। ভার্সিটিটে পড়ে । বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা মারে । সবই স্বাভাবিক। আল্ট্রা মডান মেয়েদের সাথে প্রেম করলেও কিছু যায় আসে না। এ বয়সে ছেলেমেয়েরা এ সব ভুল করে থাকে। তাই বলে সে সব ভুল আমি মেনে নিব নাকি ? আমার ছেলেকে গ্রামের মেয়ের সাথে বিয়ে দিব। রাখি অত্যন্ত ভালো মেয়ে । ওর সাথেই তার বিয়ে দিব। তুমি শুধু দাঁড়ায় দাঁড়ায় দেখবা।

আমার তো মনে হয় কোন অঘটন ঘটবে ? ছেলে ভার্সিটিটে পড়ে। সে কি গ্রামের মেয়ে বিয়ে করতে রাজী হবে?

আরে,গ্রামের মেয়েই তো ভাল। গ্রামের মেয়ে বিয়ে করলে তোমার ছেলে সুখে থাকবে ,আমাদের কাছাকাছি থাকবে । তোমার সংসারের কাজে সাহায্য করবে । শ্বশুর শাশুড়িকে শ্রদ্ধা করবে। শহরের মেয়ে বিয়ে করলে তো ছেলেরে আমাগো কাছ থাইকা কাইড়া নিয়া যাবে । শহরে বাসা নিয়ে থাকবে ।

আপনি যা ভালো বুঝেন তাই করেন । উয়িকেন্ডে তো সে বাড়ি আসবে । তার সাথে কথা বলে দেখেন । বাড়িতে আমার অনেক কাজ পড়ে আছে বলে নূরজাহান বেগম বাগান ত্যাগ করলেন।

আরমান আর মানিক মামাতো ফুফাতো ভাই । একই সাথে ইউনিভার্সিটিতে পড়ে । মানিক বৃহস্পতিবার বিকেলেই ঢাকা থেকে বাড়ি চলে এসেছে । পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ক্লাশ শেষে আর ঢাকায় বসে থাকতে হয়না । সেতু পার হয়েই ফুড়ুৎ করে বাগেরহাট আসা যায় । বাড়ি এসেই মামামামির সাথে দেখা করতে এসেছে ।

মানিককে দেখেই আমজাদ সাহেবের চক্ষু চড়ক গাছ । তিনি উচ্চস্বরে তাকে জিজ্ঞেস করলেন , কিরে মানিক তুই একা কেন? আরমান কই ? আরমান আসে নাই ?

মামার অগ্নীশর্মা ভাব দেখে মানিক ভয়ে সরে গিয়ে বলল,আসে নাই বললে তো ভুল হবে মামা। ওতো আর আসবেই না।

কচ কী ? কী কস? বস , বইসে ক’। ব্যাপার কী ?

গত তিন মাস আগে ইডেন কলেজের এক মেয়ের সাথে আরমানের ফেসবুকে পরিচয় হয় । পরিচয় হয়েই আরমান ঐ মেয়েটার প্রেমে পড়ে যায় । সেই মেয়ে আরমানকে নিয়া মার্কেটিং করে, সপিং করে। কি করে না কি কইরা বেড়ায় আল্লাহই ভালো জানেন ? আর সময় পেলে রেন্ট এ কার নিয়া দুইজনে পদ্মা সেতুতে ঘুইরা বেড়ায় । আরমান নাকি ঐ মেয়েকে বিয়েও করবে।

মানিকের মুখে এসব কথা শুনে আমজাদ সাহেবের মেজাজ বিগড়াইয়া গেল। তিনি সেখান থেকে উঠে আস্তে আস্তে স্ত্রী নূরজাহানের রুমের দিকে গেলেন। টের পেলেন নূরজাহান ছোট মেয়ে সেলিনা ও হবু পুত্রবধূ রাখিকে নিয়ে গল্প করছেন।রুমের কাছে গিয়েই মেয়ে সেলিনাকে ডাক দিলেন, সেলিনা ?

জ্বী, আব্বা।

কী করস ?

এই তো আমরা গল্প করছি ।

তোর মা আছে ওখানে ?

জ্বী, আছেন ?

এমন সময় স্ত্রী নূরজাহান সাড়া দিলেন, কী কিছু বলবেন ?

আমজাদ সাহেব রুমে ঢুকেই বললেন, তোমরা এখানে বসে খোস গল্প করতেছে । আর আমি তো বহুত বিপদে আছি ।

কেন, কী বিপদ ?

তোমার ছেলে আরমান । সে তো ঢাকা থেকে আসতাছে না। সে নাকি গ্রামে আসবেই না। ঢাকাই কোন এক মাইয়াকে নাকি বিয়েও করবে।

আপনাকে কে বলল?

মানিক । মানিক বিকেলে বাড়ি এসেছে । সে-ই সব বলল ।

আমি একটা প্লান করেছি ।

কী প্লান ?

চমকে উঠবে না বলে পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা হাতে ধরিয়ে দিলেন । এই নাও ।

কী করব এ দিয়ে ?

তোমার ছেলেকে মোবাইল কর । বলবে, আমার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে । আমি শয্যাশায়ী।

এসব মিছা কথা কী বলা যায় ? তোমার ছেলে যেমন তাকে তেমন বলতে হয়।

এ সময় রাখি বলল , চাচি বলেন । এটা তো আর সত্য নয় । জাস্ট অভিনয় । সিনেমা নাটকে অভিনয় দেখেন না। নায়ক-নায়িকা কত কথাই বলে সব কী সত্য ?

আমজাদ সাহেবও তার কথায় সায় দিয়ে বললেন,, জাস্ট অভিনয়। আমার কি সত্যি সত্যিই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে নাকি ?

নূরজাহান বেগম আবারও জিজ্ঞেস করলেন, বলব ?

সেলিনা বলল, হ্যাঁ মা বলো । বাবা যখন বলতে বলছেন ।

আচ্ছা, বলে মোবাইলে ডায়াল করতেই ওপাশ থেকে আরমান জবাব দিল, হ্যালো মা।

মায়ের মোবাইল পেয়েই আরমান চমকে জিজ্ঞেস করল, মা কী খবর তুমি তো সাধারনত এমন সময় ফোন কর না ?

হ, বাবা । কাঁদো কাঁদো ভাবে বলল, তোর বাবার শরীরটা ভাল না।

কেন,কী হয়েছে ?

মনে হয় হার্ট অ্যাটাক করেছে ।

আরমান আতকে উঠে জিজ্ঞেস করলো, হাসপাতালে নিয়েছো ?

না,বাড়িতেই আছে।

ঠিক আছে মা রাখ। আমি এখনই আসছি ।

ব্যস্ত হয়ে আসার দরকার নাই । কাল সকালে ধীরে সুস্থ্য আয়,বাবা।

ফোন ছেড়েই নূরজাহান বেগম বললেন, বালাই ষাট, কী সব আজেবাজে কথা বললাম।

আরমানের বাড়ি আসতে আসতে বিকেল হয়ে গেল।

বাড়িতে ঢুকেই মানিককে সামনে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো, মানিক বাবা কই কেমন আছেন ?

দোতলায় তার রুমে। তুই উপ্রে যা।

ওদিকে আরমানের পথচেয়ে সকলে তাকিয়েছিল । কখন সে আসে ? ছোটবোন সেলিনাকে সে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে । আরমান আসলেই সে যেন দ্রুত সংবাদ দেয়। বাড়িতে ঢোকার আগেই আমজাদ সাহেব অসুস্থের ভান করে বিছানায় শুয়ে পড়তে পারে। রাখিও সেলিনার সাথে জানালায় চোখ রাখছে , হবু স্বামীকে এক নজর দেখার জন্যে ।

আরমানের আসার খবর পেয়েই আমজাদ সাহেব তার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লেন । তাঁকে ঘিরে রুমে আছেন স্ত্রী নূরজাহান, মেয়ে সেলিনা ও রাখি।

দোতালার সিড়ি বেয়ে তর তর করে আরমান উঠে গেল। মানিকও আরমানের পিছে পিছে গেল। আরমান রুমে ঢুকেই মলিন মুখে বাবার দিকে তাঁকিয়ে ডাক দিল বাবা । তুমি কেমন আছ বাবা ? তোমার নাকি হার্ট অ্যাটাক হয়েছে ? বাবার মুখে কোন কথা নেই । শুধু মুখ এদিক ওদিক করছে ? বাবা কথা বলো । এবার মায়ের দিকে মুখ ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করল, মা বাবা কথা বলছে না কেন ? তাঁকে কোন ডাক্তার দেখিয়েছে ? প্রেসক্রিপসনটা দেখাও ? কি ব্যাপার কেউ কথা বলছে না কেন ?

এ সময়ে রাখি বলে উঠলো কথা বলবে ক্যামনে ? বাবার অসুখের কথা শুনে কেউ কী এত দেরী করে আসে ?

রাখির কথা শুনে আরমান মায়ের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল , মা এই মেয়েটি কে ? তাকে তো চিনতে পারলাম না ? এই মেয়ে তুমি কে ? আমাদের ফ্যামিলির ব্যাপারে কথা বলছ । বেরিয়ে যাও ।

বাবা এবার শোয়া থেকে উঠে বসে বলে উঠলেন ,না। ও যাবে না। সে এই বাড়িতেই থাকবে । দরকার হলেই তুই এ বাড়ি ছেড়ে চলে যা।

বাবার মুখে এমন কথা শুনে আরমান বাবাকে জিজ্ঞেস করল, বাবা তোমার না হার্ট অ্যাটাক হয়েছে ?

হ্যাঁ হয়েছে ।

এখন আমি সুস্থ্য । খুব সুস্থ্য ।

তবে, আমাকে এমন ভাবে ডাকার মানে কী ?

বহুত বড় মানে । আমার কিচ্ছু হয় নি । তোমাকে অনেকবার খবর দেয়া হয়েছে। তুমি কোন সাড়া শব্দ দাওনি । তাই অসুস্থতার ভান করে তোমাকে খবর দেয়া হয়েছে । তোমার মাকে কান্নাকাটি করিয়ে মোবাইল করায়েছি। কারণ আমার মৃত্যুর সময় তুমি আমার কাছে থাক কিনা?

কী বুজলে বাবা কাছে থাকবে ?

আমি তোমার সব খবর রাখি । কোথাকার কোন এক মেয়ের সাথে ফেসবুকে পরিচয় । জানা নাই শোনা নাই । তুমি তার পিছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ কর। রেন্ট এ কার নিয়ে পদ্মা সেতু ভ্রমণে যাও । আর মাস শেষে বাবার কাছে চিঠি দাও, মোবাইল করো আমার টাকার দরকার । এক লাখ টাকার দরকার দেড় লাখ টাকার দরকার । এই ভাবে বাপকে ব্লাক মেইলিং করো । তোমাকে আর সে সুযোগ দেয়া হবে না। একটা অপদার্থ বালক আমার । তোমার ভবিষ্যত আমাকেই তৈরি করে দিতে হবে।

রাখির দিকে আঙুল নির্দেশ করে দেখায়ে বলল, আমি ঐ মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছি । ওর নাম রাখি। আমার বন্ধুর মেয়ে । আমার বন্ধু খুব ভালো মানুষ ছিল । তার মেয়েও তেমন ভাল, সুন্দরি গুণবতী।

জানা নেই শোনা নেই। কোথার কোন এক গ্রামের ক্ষ্যাত মেয়ে ? ওই মেয়েকে আমি কোনদিন বিয়ে করবনা ।

তোমার জানার দরকার নেই। আমি তো বলেছি আমার বন্ধুর মেয়ে। খুব ভালো মেয়ে।

বাবা আমার মাথা কিন্তু খারাপ হয়ে যাচ্ছে । আমি যে কোন কিছু করে ফেলতে পারি।

এ সময়ে মা সকলকে সরিয়ে দিয়ে সামনে এসে বললেন, এই কী করবি ? কি করবি তুই। মা বাবার কথা শুনবিনা তুই। যেই সব ছেলে মেয়েরা মা বাবার কথা না শোনে তাদের জীবনে সুখ শান্তি হয় না মনে রাখিস।

মা তুমিও বাবার সাথে সাথে কী শুরু করলে বলে বসা থেকে উঠল আমি আর এক মূহূর্ত এখানে থাকবো না। এখনই ঢাকা চলে যাব বলে বাইরে যেতে উদ্যত হলে বাবা বলে উঠলেন, মানিক রায়হান ওকে ধর । ধরে ঘরে বন্দী করে রাখ। সকলকে ধাক্কা মেরে বেড়িয়ে যেতে চাইলে মাও সামনে এগিয়ে এলেন । মাকেও ধাক্কা মারল । ধাক্কা খেয়ে তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। গেলেন তো গেলেন একেবারে অজ্ঞান। মায়ের এ অবস্থা দেখে সকলে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।

মাকে ধাক্কা মারাটা আরমানের ছিল সম্পূর্ন অপ্রত্যাশিত। কি ভাবে যে কী হয়ে গেল ? অপরাধী মন নিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে রইল।

এ সময়ে রাখি সামনে এসে বললো, কী করলেন ? ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহশত্‌ ।‘ সেই মাকে আপনি ধাক্কা মেরে ফেলে দিলেন। যে মা দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারন করে রেখেছেন। কত কষ্টই না করেছেন সন্তানের জন্য। সেই মায়ের প্রতি এমন আচরণ মোটেও কাম্য নয়।

দুঃখিত । এসব নীতি বাক্য শোনার সময় এখন নয়। আমাকে এখনই ডাক্তার নিয়ে আসতে হবে। ততক্ষণ আপনি আমার মায়ের দিকে খেয়াল রাখুন প্লিজ,বলে আরমান ঘর থেকে দ্রুত বেড়িয়ে গেল।

ডাক্তার বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলে গেলেন,ভয়ের কোন কারণ নাই। হঠাৎ গভীর শক পেয়েছেন তো ! ঠিক হয়ে যাবেন। তাঁকে পুরো অবজারভেশনে রাখতে হবে ।

রাখির সেবা-সুশ্রুষায় মা নূরজাহান বেগম সুস্থ্ হয়ে উঠলেন ।

মা সুস্থ হয়ে উঠলে একদিন রাখিকে একাকি পেয়ে আরমান তাকে ডেকে বলল, রাখি তোমাকে ধন্যবাদ।

কেন?

তোমার কারণেই মা আজ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।

আমার তো মা নাই। বাবাকেও হারিয়েছি সেই বালিকা বয়সে । চাচিরে সেবা করতেছি মনে হচ্ছে যেন নিজের মাকেই সেবা করতেছি ।

পুঁথিগত শিক্ষাই শিক্ষা নয়। সংসার জীবনের শিক্ষাই বেশী দরকারি। গ্রামের মেয়ে বলে তোমাকে আমি অবজ্ঞা করেছিলাম। কিন্তু, আমার ধারণাটা ভুল।

আহ,সে কথা রাখেন বলে রাখি জিজ্ঞেস করল, আপনার সেই শহুরে ফেসবুক বান্ধবির খবর কী ?

প্লিজ, ও কথা নিয়ে আমাকে আর প্রশ্ন করো না। আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। তুমি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও ।

কালকে আমি ভাইয়াকে নিয়ে চলে যাচ্ছি ।

কাল চলে যাচ্ছি । কথাটা শুনতেই আরমানের বুকের ভেতরে কেমন যেন ধক করে উঠলো। মেয়েটাকে তো সে পছন্দ করে না। তবে এমন কেন হলো ? এই মেয়ের সেবা-সুশ্রুষায় মা আজ সুস্থ। বাবারও ইচ্ছে সে ছেলের বউ হোক। বিয়ে তো একদিন করতে হবে । তবে মা বাবার পছন্দের পাত্রী বিয়ে করলে ক্ষতি কী ? ফেসবুকের ঐ বান্ধবী সোনিয়া ? তার পিছনে গত তিন মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছে । তবু শুধু চাই ,আর চাই । বাবা তো ঠিকই বলছেন আমি তার অপদার্থ বালক । হ্যাঁ বাবার কথাই ঠিক । কোন বাবা মা কী সন্তানের অমঙ্গল চান ? আজ রাতেই তাঁকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে । কাল সকালেই মা বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে হবে ।

সকাল বেলা মলিন মুখে আমজাদ সাহেব, তার স্ত্রী নূরজাহান , মেয়ে সেলিনা ও ভাগনে মানিক সদর দরজায় দাঁড়িয়ে রাখি ও তার ভাই রায়হানকে বিদায় দিচ্ছে । বাইরে একটি সিএনজি অপেক্ষা করছে।

এ সময় রায়হান আমজাদ সাহেবের কাছে গিয়ে, চাচা আমরা আসি। আপনাদের অনেক কষ্ট দিলাম।

না, না। আমাদের কষ্ট দিলা কই ? আমি বরং তোমাদের কষ্ট দিয়েছি । কথা দিয়ে কথা রাখতে পারলাম না।

রাখি নূরজাহান বেগমের কাছে যেতেই তিনি কেঁদে উঠলেন। না, মা তুই যাবি না, মা। রাখিও নূরজাহান বেগমের গলা ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো ।

নূরজাহান বেগম স্বামীকে লক্ষ্য করে বললেন,ওকে যাইতে বারণ করেন । যাইতে দিয়েন না।

নুরজাহান বেগমের কাছ থেকে রাখি এবার আমজাদ সাহেবের পদধূলি নিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো, আসি চাচা । দোয়া করবেন ।

আমজাদ সাহেবও কেঁদে কেঁদে বললেন,দোয়া তো আমি করি মা। দোয়া সব সময় করি । পারলাম না মা পরলাম না। অনেক চেষ্টা করলাম । পারলাম না। যেখানেই থাক সুখে থেক।

এমন সময় দোতালার সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে আরমান উচ্চস্বরে ডেকে বলল, দাঁড়ান ।

নিচে নেমে আসতেই আমজাদ সাহেব রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন তুই এখানে কি চাস ? তুই এই মেয়েটাকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস। তাকে বাইন্ধা রাখতে অনেক চেষ্টা করেছি পারলান না। পারলাম না শুধু তোর জন্যে ।

বাবার কথার জবাব না দিয়েই মায়ের কাছে গেল । মায়ের গলা ধরে বললো, মা আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি না ? আমি তো ইচ্ছে করে দেইনি । হঠাৎ ক্যামন যেন মাথাটা খারাপ হয়ে যায় । ছেলে কী কখনও মাকে কষ্ট দিতে পারে বলো ? আর ছেলে কখনও মাকে ছেড়ে যেতেও পারে না। বাবার দিকে ফিরে বলল, আমি বাবার একটি অপদার্থ বালক। আমার সব ভুল বুঝতে পেরেছি। মা-বাবার আশির্বাদ ব্যতিত কোন সন্তানই সুখী হতে পারেনা। আমাকে ক্ষমা করে দাও মা, বলে মায়ের পায়ে লুটিয়ে পড়ল। পরে রাখির দিকে তর্জনী উচিয়ে, রাখি। ঐ যে রাখি, বাবার পছন্দের গ্রামের মেয়েটি । সে হতে পারে তোমাদের পুত্রবধূ । বাবাকে সব ব্যবস্থা করতে করতে বলো ।

কথাটা বাবার কানেও পৌঁছিল। তিনি বলে উঠলেন কী ? কী কইলো ? মায়ের কানে কানে কী কইলো ? আমারে কইতে পারে না ?

কি আর কইবে ? আপনি যা চেয়েছিলেন তাইই হবে । আপনার পছন্দের পাত্রী রাখির সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করতে কয় ।

আমজাদ সাহেব খুশিতে চিৎকার দিয়ে ভাগনে মানিককে ডেকে কয় ,এই মানিক চেয়ে চেয়ে কী দেখছোস? মিষ্টি আন,কাজী ডাক আর প্রতীক্ষা কেন ?

মলিনতা ভেঙ্গে সবার মনে খুশীর বন্যা বইতে লাগলো।

লেখকঃ বাগেরহাটের অধিবাসী

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী

বিদ্রঃ গল্পের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক । এটির সাথে জাতি,ধর্ম বা কোন ব্যক্তির মিল নেই । যদি কোন মিল পাওয়া যায় তা সম্পূর্ণভাবে কাকতালীয় ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত