অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

রামপালে হুমকির মুখে খাঁন জাহান আলী বিমান বন্দর

এম, এ সবুর রানা, রামপাল 

আপডেট : ০৬:৪৪ পিএম, মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর ২০২২ | ৪০৮

রামপাল উপজেলার খাঁন জাহান আলী বিমান বন্দরসহ বেশ কিছু এলাকায় একাধিক মিনি ড্রেজার দিয়ে অবৈধ ভাবে ভুগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে, মামলা করে ও বালু খেকোদের কোন ভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই উপজেলার কোথাও না কোথাও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। খাঁন জাহান আলী বিমান বন্দরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় মিনি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করায় নির্মানাধীন খাঁন জাহান আলী বিমান বন্দরসহ এই জনপদের অধিকাংশ এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে। আর এই বালু উত্তোলন করে একটি মহল হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।



স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারন মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে উপজেলার উজলকুড় ইউনিয়নের সোনাতুনিয়া চন্দ্র মহলের উত্তর পাশে গোলবুনিয়া নামক একটি খালে প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে, মিনি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে আশে পাশের বিভিন্ন নীচু জমি, ডোবা, পুকুর, নালা, রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘরের চারপাশ ভরাট করা হচ্ছে। দুরত্ব ভেদে উত্তোলন করা প্রতি ঘনফুট বালু ৬ টাকা থেকে ১০-১২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে হোগলডাঙ্গার আইয়ুব পাটয়ারী, হাতিরবেড়র আল আমীন, গিলাতলার তেঘরিয়ার বিলে ও শ্রীফলতলা পূর্বপাশের বিলে ড্রেজার বসিয়ে ইচ্ছামত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ১০ দিন পূর্বে শোলাকুড়ার আজমাইন নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বাইনতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারি তহশীলদার পলাশ কুমার দাস। আজমাইন নামের ওই ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে ১৪৪ ধারার মামলা চলাকালিন অবস্থায় অবৈধ মিনি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট তহশীলদার নোটিশ করতে গেলে তাকে মারপিট, সরকারি কাজে বাধা দান ও হত্যার হুমকিসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদান করেন ওই আজমাইন। অভিযোগের বিষয় আজমাইনের নিকট জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।


এনামুল হোসেন নামের এক ইউপি সদস্য বলেন, বিমান বন্দরে মাটি ভরাটের জন্য ভোলা নদী ও তার আশেপাশে ব্যাক্তিগত জমিতে পাশাপাশি ৬টির মতো ড্রেজার বসিয়ে দেদারছে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। রামপাল সদরের সিকি এলাকার বাসিন্দা মো. ফরিদ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে ওই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার অন্তত ৫/৬ টি গ্রামের মানুষ ঝুকির মধ্যে রয়েছে। যে কোন সময় ভুমি ধস হলে বাড়ি ঘরের পাশাপাশি বিমান বন্দর এলাকায় ব্যপক ক্ষতি হতে পারে।


এ ব্যপারে স্থানীয় ভাবে দায়িত্বে থাকা সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশলী তুষার বাবুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফরিদ সিভিল এভিয়েশনের কোন লোক নয়। সে একটা ধোকাবাজ লোক। তাকে বিমান বন্দর এলাকা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। সে দীর্ঘদিন ধরে সিভিল এভিয়েশনের লোক পরিচয় দিয়ে বিমান বন্দর এলাকার সম্পদ লুটেপুটে খাচ্ছে। সে এখন বালি ভরাটের কাজ করছে বলে শুনেছি। সরকারি নদী থেকে বালি তোলার কথা নয়। সে নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে সেটা বেআইনি।



ফরিদ উদ্দিনের কাছে এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি জানান প্রতিফুট বালি ৬ টাকায় উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে জমির মালিকদের পক্ষ থেকে দরখাস্ত দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারি কমিশনার (ভুমি) ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে বালু উত্তোলন করতে বলেছে।


স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুন্সি বোরহান উদ্দিন (জেড) বলেন আমার জানা মতে সরকারি ভাবে প্রতি ঘনফুট মোটা দানার বালু ২৬ টাকায় কিনে তা দিয়ে ভরাট করার কথা রয়েছে। তা না করে সরকারি নদী-খাল ও ব্যাক্তিগত জমি থেকে ঠিকাদার ফরিদকে দিয়ে মাত্র ৬ টাকায় প্রতি ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে। প্রতি ঘনফুট বালুতে ২১ টাকা মুনাফা নিচ্ছে ফরিদ। তিনি আরও বলেন নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) কে জানানো হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম বলেন একটা পক্ষ জেলা প্রশাসকের অনুমতি আছে এমন মিথ্যা কথা বলে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছিল। খবর পেয়ে তা বন্ধ করা হয়েছে। এখন কোথাও উত্তোলন হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সহকারি কমিশনার (ভুমি) শেখ সালাউদ্দিন দিপু বলেন মাত্র কয়েকদিন আগে ওই এলাকায় অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ৪/৫ টি ড্রেজার ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। আবারো অবৈধ বালু উত্তোলনকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

উল্লেখ্য সরকারি ভাবে মিহি দানার বালু দিয়ে ভরাটের কোন নিয়ম না থাকলেও .০৮ এফএম মিহি দানার বালু মাটির নীচ থেকে উত্তোলন করে তা দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। এ দানার বালু বৃষ্টি হলেই ধুয়ে যায়। নাম প্রকাশ না করে বিমান বন্দর নির্মান প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা বলেন কাচা মাটির উপরে সীমানা প্রাচীর নির্মান করে সেই প্রাচীরের কাছ থেকে বালু উত্তোলন করায় প্রাচীর ঝুকির মধ্যে পড়তে পারে।

জেলা প্রশাসক আজিজুর রহমান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন রামপালে কোন বালু মহল নেই। কোন ইজারাও হয়নি। কাউকে বালু উত্তোলনের অনুমতিও দেয়া হয়নি। আপনারা অবৈধ বালু উত্তোলনকারিদের তথ্য দিন এবং তাদের বিরুদ্ধে লিখুন। আমরা ধারাবাহিকভাবে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত