মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু ফাদার মারিনো রিগনের জন্মবার্ষিকী পালন

মাসুদ রানা,মোংলা

আপডেট : ১২:২৩ এএম, সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ | ২৬১

মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু, কবি-সাহিত্যিক-অনুবাদক ও শিক্ষানুরাগী ফাদার মারিনো রিগনের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার মোংলায় বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে নানা কর্মসুচি পালিত হয়। কর্মসুচির মধ্যে ছিলো র‌্যালি, শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রবিবার সকাল ৯টায় মোংলার শেলাবুনিয়াস্থ তাঁর সমাধিতে মোংলা সরকারি কলেজ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ফাদার রিগন শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, সেন্ট পল্স ধর্মপল্লী, সেন্ট পল্স উচ্চ বিদ্যালয় ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ’সেবা’র পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করা হয়। এসময় ফাদার রিগন সমাধি চত্বরে রিগন শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যৌথ আয়োজনে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সেন্ট পলস ধর্মপল্লীর পালক পুরোহিত ফাদার দানিয়েল মন্ডল, মোংলা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কুবের চন্দ্র মন্ডল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক মোঃ নূর আলম শেখ, উপাধ্যক্ষ বিভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, প্রভাষক সাহারা বেগম, সেবা সংস্থার নির্বাহি পরিচালক মিনা হালদার, সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্রাদার এন্ড্র জয়ন্ত কস্তা, সাংস্কৃতিক সংগঠক গীতিকার মোল্লা আল মামুন প্রমূখ। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ইতালি নাগরিক ফাদার রিগন বাংলার সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্য্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাই আমৃত্যু তিনি বাংলাদেশে অর্থ্যাৎ মোংলায় থেকেছেন। আর মৃত্যুর পরেও তাঁর অন্তিম ইচ্ছায় তাকে বাংলার মাটিতেই শায়িত করা হয়েছে। তিনি নিজেই বলতেন তাঁর "মস্তকে রবীন্দ্রনাথ আর অন্তরে আছে লালন"। তিনি যাজকীয় দায়িত্বের বাইরে এসে শিল্প-সাহিত্য ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। উল্ল্যেখ্য ১৯৫৩ সালের জানুযারীতে ধর্ম প্রচারের কাজে মারিনো রিগন বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশে এসে প্রথমে তিনি কয়েকটি জায়গায় ঘুরে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার শেলাবুনিয়া গ্রামে স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি মোংলাতেই থাকতেন। ফাদার রিগন মোংলা এলাকায় নিজ উদ্যোগে ১৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সেন্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ফাদার মারিনো রিগন ইতালির ভিল্লাভের্লাা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ফাদার রিগন বাংলাদেশে অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথের ৪৮টি বই, লালনের সাড়ে তিনশো গান এবং কবি জসিম উদ্দিনসহ খ্যাতিমান কবিদের অসংখ্য কবিতা ইতালি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। তিনি ইতালিতে বাংলাদেশের অঘোষিত রাস্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর ৯২ বছর বয়সে বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে ইতালিতে মারা যান তিনি। এর ঠিক এক বছর পর তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় ইতালি থেকে রিগনের মরদেহ বাংলাদেশে আনা হয়। পরে মোংলার শেলাবুনিয়ায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত