শরণখোলার তাফালবাড়ী স্কুল এন্ড কলেজ

অর্থনীতিতে শিক্ষক আছেন নেই কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী, মন্ত্রনালয়ের অডিটে আপত্তি

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০২:০৮ এএম, মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর ২০২৩ | ৩৯০

শরণখোলার তাফালবাড়ী স্কুল এন্ড কলেজের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষক আছেন ঠিকই কিন্তু ওই বিষয়ে নেই কাম্যসংখ্যক শিক্ষার্থী। যেখানে কমপক্ষে ২৫জন শিক্ষার্থী থাকার কথা সেখানে আছে মাত্র তিন জন। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এক নিরীক্ষায় (অডিট) ধরা পড়ে এমন অসঙ্গতি।

অথচ ওই বিভাগের (অর্থনীতি) শিক্ষক আব্দুল মালেক প্রায় দুই যুগ ধরে নিয়মিত বেতন-ভাতা ভোগ করে চলেছেন। গত ২৫ আগষ্ট মন্ত্রনালয়ের নিরীক্ষা কমিটির সদস্যরা কলেজের হাজিরা খাতায় অর্থনীতি বিষয়ে মাত্র তিন জন শিক্ষার্থীর সন্ধান পেয়ে হতাশ হন। কাম্যসংখ্যক শিক্ষার্থী না পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকের বিরুদ্ধে মন্ত্রনালয়ে আপত্তি দেওয়া হবে বলে নিরীক্ষা কমিটি সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়া শিক্ষক আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে রয়েছে আরো নানা অভিযোগ। তিনি কলেজ যান না নিয়মিত। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে একাদিক পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে সময় ব্যয় করেন। সাংবাদিকতার নামে প্রভাব বিস্তার করেন উপজেলার সরকারি-বেসরকারি অফিসে গিয়ে। একারণে গত ২৬ জানুয়ারি উপজেলা সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় তার বিরুদ্ধে রেজুলেশন করা হয়। রেজুলেশনে শিক্ষার মানোন্নয়ন ব্যাহত হওয়াসহ একাধিক কারণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিরীক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক ড. এনামুল ইসলাম বলেন, আমরা তাফালবাড়ী স্কুল এন্ড কলেজের সকল বিভাগ ও বিষয়ের তিন বছরের কাগজপত্র যাচাই-বছাই করে দেখেছি। কমপক্ষে একটি বিষয়ে ২৫জন শিক্ষার্থী থাকার কথা। কিন্তু সেখানে অর্থনীতি বিষয়ে কোনো বছরই দুই থেকে তিন জনের বেশী শিক্ষর্থী পাওয়া যায়নি। তাই এ বিষয়ে মন্ত্রনালয়ে আপত্তি দেওয়া হবে।

তাফালবাড়ী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মানিক চাঁদ রায় অর্থনীতি বিষয়ে তিন জন শিক্ষার্থী থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, অর্থনীতিতে সব জায়গায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা একটু কমই থাকে। মন্ত্রনালয়ের অডিট কমিটি প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র নিয়ে গেছে। তারা রিপোর্ট দিলে আপত্তির বিষয়ে জানা যাবে।

শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভাপতি মো. রায়হান উদ্দিন আকন শান্ত বলেন, কিছু কিছু শিক্ষক আছেন তারা স্কুল-কলেজে না গিয়ে সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন। এতে শিক্ষার মান দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। তাই বিষয়টি সমন্বয় কমিটির রেজুলেশনে এনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানিয়েছেন, ১৯৯৯ সালে তাফালবাড়ি স্কুল এন্ড কলেজে অর্থনীতি বিভাগে অন্য এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি অজ্ঞাত কারণে ওই ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে রেজুলেশনে ফ্লুইড ব্যবহার করে আব্দুল মালেককে নিয়োগ দেয়। কাগজে-কলমে কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী দেখানো হলেও নিয়োগের পর থেকে এপর্যন্ত দুই থেকে পাঁচ জনের বেশি শিক্ষার্থী কখনোই ছিল না।

এ ব্যপারে তাফালবাড়ী স্কুল এন্ড কলেজে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আব্দুল মালেক বলেন, অডিটররা কেবল মাত্র অডিট করে গেছেন। তবে শিক্ষার্থী কম থাকার বিষয়টি তারা এখনো আমাদের কিছু জানায়নি। তাদের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত