মোংলায় মাদ্রাসার দুই শিশু ছাত্রকে জোর পুর্বক যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা

মাসুদ রানা, মোংলা

আপডেট : ০৫:৪৮ পিএম, রোববার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ | ৫১৭

আওয়াল সরদার

মোংলায় মাদ্রসার দুই শিশু ছাত্রকে জোর পুর্বক যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে পরিচালনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে সভাপতি আওয়াল সরদার বিরুদ্ধে মোংলা থানায় মামলা দায়ের করেছে নির্যাতনের স্বীকার ছাত্রের বাবা মোঃ আব্দুস সালাম। অভিযুক্ত আওয়াল সরদার সুন্দরবন ইউনিয়নের আগা মাদুর পাল্টা এলাকার মৃত মহর আলী সরদারের ছেলে। এছাড়া অন্যান্য ছাত্র সহ এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে একই সভাপতির বিরুদ্ধে।


মোংলা থানার ওসি কে এম আজিজুল ইসলাম ও এলাকাবাসী জানান, গত ৩ বছর পুর্বে মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নে ৬নং ওয়ার্ড এলাকায় “মাদুর পাল্টা হযরত শাহ্ আলম (রঃ) তালিমুল কোরআন নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা, এতিম খানা ও লিল্লাহ বডিং” এর পরিচালনা কমিটিতে স্থানীয় মোঃ আওয়াল সরদারকে সভাপতি পদে নিযুক্ত করেণ এলাকাবাসী। সেই সাথে স্থানীয় জামে মসজিদ ও এলাকার দীর্ঘদিন যাবত একটি ইসালে সাওয়াব মাহফিলেও সাধারন সম্পাদক পদে নিযুক্ত ছিলেন আওয়াল সরদার। মাদ্রাসার সভাপতি হওয়ার সুবাদে প্রায় সময়ই ওই হাফিজিয়া মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করতেন তিনি। এরই মধ্যে প্রথমে তিনি গত ১০ ফেব্রয়ারী দুপুরে এক ছাত্রে উপর জোর পুর্বক যৌন নিপীড়ণ চালায় সভাপতি আওয়াল সরদার (৪৫)। এ ঘটনা ঘটার পর বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়লে ওই এলাকার এক ইউপি মেম্বরের নেপথ্যের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী একটি মহল ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়। এতে ম্যানেজিং কমিটির লম্পট সভাপতি আওয়াল সরদার আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারী দুপুরে অন্য ছাত্ররা পুকুরে গোসলে গেলে এই ফাঁকে মাদ্রসার আবাসিক কক্ষে আরো এক শিশু ছাত্রকে নগ্ন করে পুনরায় জোর পুর্বক যৌন নিপীড়ন চালায় সভাপতি আওয়াল সরদার বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ দুই শিশু ছাত্রের উপর জোর পুর্বক যৌন নিপীড়নের ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়লে বিষয়টি তাদের অভিভাবকদের অবহিত করে মাদ্রাসার বড় হুজুর হাফেজ মাওঃ মোঃ তুহিন। পরে ঘটনা শুনে নির্যাতনের স্বীকার এক শিশুর বাবা আব্দুস সালাম বাদী হয়ে সভাপতি আওয়াল সরদারকে আসামী করে রোববার দুপুরে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মোংলা থানায় মামলা দায়ের করেন। এমন খবর সর্ব মহলে ছড়িয়ে পরলে এলাকা থেকে দ্রুত পালিয়ে যায় সভাপতি। ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় উদিগ্ন এতিমখানার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। এরকম আরো অনেক ঘটনা সহ এলাকায় নারী ঘটিত ঘটনা ঘটিয়েছে ওই সভাপতি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তবে মামলার আসামি আওয়াল সরদারকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ কে এম আজিজুল ইসলাম।


সুন্দরবন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইকরাম ইজারাদার বলেন, আগে পরে এরকম বহু অপকর্ম করার অভিযোগ রয়েছে আওয়াল সরদারের বিরুদ্ধে। মাদ্রাসার দুই শিশু ছাত্রকে যৌন নিপীড়নের ঘটনা সত্য। তার কঠিন বিচার হওয়া উচিত।


এদিকে, মাদ্রসা ছাত্রদের যৌন নিপীড়নের এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে ও ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে একটি প্রভাবশালী মহল এখনও নানা রকম তদ্বির চালানোসহ উঠে পড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ করেছে ভূক্তভোগীদের স্বজনরা।


মোংলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার বলেন, ঘটনা শোনার সাথে সাথে ওই মাদ্রাসায়স্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। রাতেই মোংলা থানায় এক ছাত্রের বাবা বাদি হয়ে আওয়াল সরদারকে আসামী করে অভিযোগ দেয়া হয়। রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে মামলা রুজু করা হয় এবং তাকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে বলেও জানায় পুলিশের এ কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত