সাধারণ মানুষ সর্বশান্ত

রামপালে ভুয়া ডাক্তার প্রদীপ দাসের প্রতারণা

রামপাল সংবাদদাতা

আপডেট : ০৫:১৪ পিএম, রোববার, ৮ অক্টোবর ২০১৭ | ২৬০৬

ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার প্রদীপ দাস 

ডাক্তার পি, কে দাস ! পুরো নাম প্রদীপ কুমার দাস। কখন ও ম্যাজিষ্ট্রেট, কখনও ইনকাম ট্যাক্স এর বড় কর্মকর্তা, কখনও ডিবির ওসি, কখনও সাংবাদিক, আবার কখন ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে থাকে ওই প্রদীপ দাস।

কে ওই প্রদীপ দাস ? খোজ নিয়ে জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার রনজিৎপুর গ্রামের অরবিন্দু দাসের ছেলে এসএসসি পাশ করা প্রদীপ দাস প্রথমে ব্রাক এনজিও এর পিয়ন পদে চাকুরিকালীন সময় অর্থ আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে চাকুরিচ্যুত হয়। এর পর কিছুদিন ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ ও ডিস লাইন ওয়্যারিং এর কাজ করে। পরে কিছুদিন খুলনা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় কাজ শুরু করে। পত্রিকায় কাজ করা কালিন সময় সে এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন প্রতারণা শুরু করে।

এক পর্যায়ে চুলকাঠি ঘনশ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জনৈক এক স্কুল ছাত্রীকে ব্লাক মেইলিং করে যৌন হয়রানি ও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা দায়ের করেন ওই ছাত্রীর অভিভাবক। মামলা থেকে জামিনে বের হয়ে এসে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকে ওই প্রতারক প্রদীপ। এরপর সে বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন ঔষধের দোকানে, ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারে ও বিভিন্ন প্রাইভেট কিনিকে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয় দিয়ে প্রতারণার জাল বিস্তার করে।

একে একে সে রামপালের রাজনগর, কালেখারবেড় দিঘীর পাড়ে একটি চেম্বার খুলে রোগী দেখা শুরু করে। এভাবে সে ফয়লাহাটের ল্যাব-ওয়ান ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার, ফকিরহাট বেতাগার কালিবাড়ির মোড়ে একটি চেম্বার, ফয়লাহাটের সুন্দরবন ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার, রামপাল সদরের একটি ঔষধের দোকান ও বড়কাটালি বাজারে মিলন বিশ্বাসের ঔষধের দোকানে চেম্বার খুলে এমবিবিএস পাশসহ বিভিন্ন ডিগ্রীর পরিচয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেজে রোগী দেখা শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ মাসের বেশি এক এলাকায় রোগী দেখে না।

এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকাল ৪ টায় রামপাল প্রেসকাবের সাংবাদিকরা সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বড়কাটালি বাজারে অবস্থিত অবৈধভাবে ঔষধ বিক্রেতা নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দানকারী মিলন বিশ্বাসের দোকানে গিয়ে দেখা যায় সিরিয়াল দিয়ে রোগী দেখছেন ওই প্রতারক প্রদীপ দাস।

সাংবাদিকরা নিশ্চিত হয়ে তার ব্যাগ খুলে দেখাতে বলেন। এসময় দেখা যায় ভারতীয় বিভিন্ন ব্রান্ডের ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ইনজেকশন ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট। এর মধ্যে এক ধরনের প্লাষ্টিকের পটে নকল লেবেল লাগিয়ে সেগুলি রোগীদের কাছে বিক্রি করতে দেখা গেছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগী পুষ্প রানী, ছালেহা বেগম, ফারজানা ইয়াসমিনসহ অন্যান্য রোগীরা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ৩শ টাকা ফি দিয়ে ডাক্তারকে দেখাতে হচ্ছে। প্রেসক্রিপশনের ঔষধ কিনতে হচ্ছে রোগীভেদে সর্বনিম্ন ৫শ টাকা থেকে ৩হাজার টাকা।

এর মধ্যে সে বিভিন্ন ধরনের চায়না মেশিন দ্বারা থেরাপিসহ বিভিন্নভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সর্বশান্ত করে ফেলছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের। কথিত অপর ডাক্তার মিলন বিশ্বাস লাইসেন্স ছাড়া ঔষধের দোকান খুলে দেদারছে অবৈধ ক্ষতিকারক ভারতীয় ঔষধ বিক্রি করে আসছে। মিলন বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে সে জানান, ওই ঔষধ প্রদীপ ডাক্তারের। অবৈধভাবে ঔষধ বিক্রয়ের বিষয়টি সে অস্বীকার করে। প্রতারক ভুয়া ডাক্তার প্রদীপ দাসের বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইলে সে তার প্রতারণার কথা স্বীকার করে ক্ষমা চায়। এ বিষয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাসুম ইকবাল বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এ ধরনের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করলে বা ভুয়া ডাক্তার সাজলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি এ জন্য সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত