শিক্ষাবোর্ডের অনলাইন প্রশ্ন ব্যাংকের কারণে

বাগেরহাটে প্রশ্ন বাণিজ্য বন্ধের উপক্রম

জিএম মিজানুর রহমান

আপডেট : ০৪:৪২ পিএম, শনিবার, ৩০ জুন ২০১৮ | ৮৬৮

যশোর শিক্ষাবোর্ডের অন-লাইন প্রশ্নপত্রে একযোগে বোর্ডের আওতাধীন সকল বিদ্যালয়ে অর্ধ-বার্ষিক ও প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা গ্রহণ করায় সারা দেশে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। এর ফলে বাগেরহাটে শিক্ষক সমিতির প্রশ্ন বাণিজ্য বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সকল পরীক্ষায় শিক্ষকদের তৈরিকৃত প্রশ্নে পরীক্ষা নেবার কথা থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমিতির প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণ করে আসছিল। এছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরিকৃত সমিতির প্রশ্নে অনেকক্ষেত্রে ভুল থাকে। সিলেবাস অনুসরণ করা হয় না। গাইড থেকে সরাসরি প্রশ্ন তুলে দেওয়া হতো। হাতে গোনা কয়েকটি স্কুল নিজস্ব তৈরিকৃত প্রশ্নে পরীক্ষা নিতো। অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে থাকতো। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে ২০১৫ সালে শিা মন্ত্রণালয়ের তৎকালিন সচিব নজরুল ইসলাম খানের পরামর্শক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর অন-লাইন প্রশ্নপত্র প্রনয়ণের কথা ভাবেন এবং যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিা বোর্ডের পরীা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র ২১ জুন এ-সংক্রান্ত ফাইলে স্বার করেন। ২০১৫ সালের ‘প্রশ্নব্যাংক’-এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হলেও ২০১৬ সাল থেকে পরীামূলক ভাবে এটি চালু করা হয়।


০১/০৭/১৮ তারিখ হতে একযোগে বোর্ডের আওতাধীন সকল বিদ্যালয়ে অর্ধ-বার্ষিক ও প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ৮ম-১০ম শ্রেণির অধিকাংশ বিষয়ের প্রশ্ন এবং ৬ষ্ঠ-৭ম শ্রেণির গণিত ও ইংরোজি বিষয়ের প্রশ্ন বোর্ডের অন-লাইন প্রশ্নব্যাংক থেকে ডাউনলোড করে পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। অবশিষ্ট হাতে গোনা কয়েকটি বিষয়ের প্রশ্ন অধিকাংশ সমিতি সরবরাহ করতে আগ্রহী নয়। ফলে স্ব-স্ব বিদ্যালয় বাকি বিষয়গুলির প্রশ্ন তৈরি করে পরীক্ষা গ্রহণ করছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর এর ওয়েবসাইডে এ সংক্রান্ত একাধিক নোটিশ জারি করা হয়েছে।

শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা বিভাগ থেকে জানা যায়, সকল শিক্ষকদের বিষয় ভিত্তিক প্রশ্ন প্রনয়ন করে আপলোড করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষকদের মধ্যে প্রশ্ন প্রণয়নের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার একদিন আগে শিক্ষকদের তৈরিকৃত প্রশ্নের মধ্য থেকে প্রশ্ন বাছাই করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। এতে প্রশ্ন ফাঁসের কোন সম্ভাবনা থাকে না।

এ প্রসঙ্গে চুলকাঠি ঘনশ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুশীল কুমার বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বোর্ডের সরবরাহকৃত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ায় প্রশ্নের মান ভাল হচ্ছে। বোর্ডের প্রশ্নে ভুল নেই বললে চলে। যদুনাথ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ অজয় কুমার চক্রবর্তী বোর্ড কর্র্তৃপক্ষকে স্বাগত জানিয়ে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বোর্ডের এ ধরণের উদ্যোগ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুসংগঠিত করেছে। প্রশ্ন ফাঁসের সম্ভাবনাও নাই। চুলকাটি ঘনশ্যামপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষিক মোজাহিদুল হক বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বোর্ডের প্রশ্নের মান তুলনা মূলকভাবে ভাল। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলে যে কোন দিন সমস্যা হতে পারে।

বাগেরহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাছুদা আক্তার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বোর্ডের সরবরাহকৃত প্রশ্নে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে সাবলীল বোধ করছে এবং শিক্ষার্থীরা বোর্ডের প্রশ্নে পরীক্ষা দিতে অভ্যস্ত হচ্ছে।

বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার মো: কামরুজ্জামান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, যশোর শিক্ষা বোর্ড একযোগে অভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণের যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা’ সময়োপযোগী ও প্রশ্ন ফাঁস রোধে এক কার্যকরী উদ্যোগ। এ উদ্যোগ যাতে কোনক্রমে ব্যাহত না হয় সে জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। এক যোগে বোর্ডের আওতাধীন সকল বিদ্যালয়ে একই দিনে একই প্রশ্নে পরীক্ষা নিতে পারার বিষয়টিকে একটি বড় অর্জন দাবি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর এর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে যশোর শিা বোর্ডের সব কার্যক্রম অনলাইন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হচ্ছে। পরীা গ্রহণ পদ্ধতি অনলাইনে আনার জন্য প্রশ্নব্যাংক চালু করা হয়েছে। শিক্ষকরা প্রশ্ন প্রনয়ণে অভ্যস্ত হচ্ছে। আগামীতে সকল পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন অন-লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করে পরীক্ষা নেবার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত