বিয়ের মাধ্যমে অভিনব প্রতারনাই যেন নেশা সেলিনার

চার স্বামীর অর্থ আত্নসাতের অভিযোগ

মোল্লাহাট সংবাদদাতা

আপডেট : ১০:২৫ পিএম, মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট ২০১৭ | ১৬০৫

logo

একের পর এক বিয়ের মাধ্যমে অভিনব প্রতারনাই যেন নেশা ও পেশা মোল্লাহাটের গাংনী গ্রামের মৃত ইখলাস ফকিরের মেয়ে সেলিনা (৩৪)। তিনি ইতি মধ্যে চারটি বিয়ে করে প্রত্যেকের থেকে মোটা অংকের অর্থ আত্নসাত করেছেন। এমনকি প্রথম সংসারে একটি ও দ্বিতীয় সংসারে দুইটি কন্যা শিশু প্রসব করলেও তাদেরকে মাতৃদুগ্ধ পাণ কালেই স্বামীর কাছে ফেলে রেখে মিথ্যা মামলায় হয়রানীসহ অর্থ আত্নসাত করেন সেলিনা বেগম।

এরপর চট্টগ্রাম গিয়ে জনৈক জলিলকে বিয়ে করে তার থেকে অঢেল অর্থ আত্নসাত করেন তিনি। পরে মোল্লাহাটের উদয়পুর গ্রামের মোঃ বাবুলকে অত্যন্ত কৌশলে বিয়ে করে তার কাছ থেকে এক বছরে বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় ত্রিশ লাখ টাকা আত্নসাত করে আবার নতুন শিকারের সন্ধানে সেলিনা চট্টগ্রাম গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেলিনার বর্তমান স্বামী বাবুল প্রেসকাব মোল্লাহাট বরাবরে লিখিত এক অভিযোগের মাধ্যমে এসকল তথ্য জানাগেছে।


স্বামী বাবুলের অভিযোগ ও এলাকাবাসি জানান, সেলিনা তার প্রথম স্বামী রাজপাট গ্রামের জনৈক মনির ফরাজীর থেকে অর্থ আতœসাতসহ তার সংসারে একমাত্র শিশু কন্যাকে ফেলে দ্বিতীয় শিকারের খোজ করেন। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই গাংনী গ্রামের জাবির মীরকে বিয়ে করে দুইটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এরই মাঝে জাবির মীরের সর্বস্ব আত্নসাতসহ গর্ভের শিশুদের ফেলে স্বামীর নামে(জাবির মীর) হয়রানী মূলক মামলা করেন সেলিনা। এলাকায় বিষয়টি ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ায় নতুন শিকার ধরতে চট্টগ্রাম যান তিনি। সেখানে গিয়ে জনৈক জলিল’কে বিয়ে করে তার থেকেও অর্থকড়ি হাতিয়ে নেন সেলিনা। এরপর জলিল’কে ত্যাগ করে নতুন শিকার খোজেন তিনি।

সবশেষে মোল্লাহাটের বাবুল তার পরিবহণ ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে চট্টগ্রাম গিয়ে সেলিনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সেলিনাসহ প্রতারনা চক্রের অভিনব কৌশল ও চাপে চট্টগ্রামে এবছর ২১ জানুয়ারী পাঁচ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করে রেজিষ্ট্রী বিয়ে হয় তাদের। ওই দিনই নগদ এক লক্ষ টাকা দিতে হয় সেলিনাকে। পরে উল্লেখিত পাঁচ লক্ষ টাকার দাবীতে বাবুলের মানসম্মান নষ্ট করাসহ তার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানীর হমকি দেয়া হয়।

বাবুল তার ভাবমূর্তি/মানসম্মান বিবেচনা করে স্ত্রী সেলিনা ও শাশুড়ি নাহার বেগমের নিকট নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা দেন। বাবুলের প্রতিদিন নগদ টাকা উপার্জনের লোভ সামলাতে না পেরে আরো টাকা আত্নসাতের লক্ষে সেলিনা ও তার মা নাহার বেগম প্রতিজ্ঞা করে বাবুলকে বলেন-সেলিনা সারা জীবনের জন্য ভালো হয়ে যাবে। সে আর কখনো কোন খারাপ কিছু করবে না, সারা জীবন বাবুলের স্ত্রী হয়ে থাকবে। যদি তাকে আশ্রয়/স্ত্রী’র মর্যাদা দেয়া না হয়, তাহলে তার জন্য বাবুল দায়ী থাকবে এবং সে আরো বেশী খারাপ পথ বেছে নেবে। বাবুল আবারও মোল্লাহাটে একটি ভাড়া বাসায় সেলিনা ও তার মা নাহার বেগমকে রাখেন।

এরপর বাসার জন্য ফ্রিজ, খাট, আলমারী, শোকেজ ও রঙ্গিন টিভিসহ অন্তত চার লক্ষ টাকার আসবাবপত্র ক্রয় ও তৈরী করেন। এছাড়া সেলিনাকে গলার হার/চেইন, চুড়ি, ও কানের রিংসহ স্বর্ণের দুই লক্ষাধিক টাকার গহণা দেন। এরপর সেলিনার মা ও বড় ভাই বাবুলকে অনুরোধের সহিত বলেন-সেলিনার স্থায়ী বসবাসের জন্য তাদের গ্রামের বাড়ী গাংনীতে একটি বিল্ডিং তৈরী করতে। বাবুল উক্ত প্রস্তাবে রাজী হলে যাবতীয় সকল মালামাল নিয়ে ভাড়াবাসা ছেড়ে গাংনী পিতার বাড়ীতে গিয়ে ওঠেন স্ত্রী সেলিনা।

বাসা স্থানান্তরে তাকে সার্বিক সহযোগীতা করেন তার মা নাহার বেগম ও বড়ভাই ইকু ফকির। বাবুলও তার কাজের ফাকে ওই বাড়ীতে যাতায়াত করেন। আবারও স্ত্রী, শাশুড়ি ও শ্যালকের অনুরোধে বাবুল শশুর বাড়ীতে বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করেন। এছাড়া শাশুড়ি নাহার বেগম ও স্ত্রী সেলিনার নিকট বিল্ডিংয়ের কাজের জন্য তিন লক্ষ টাকা গচ্ছিত রাখেন বাবুল। এরই মাঝে বাবুলের তিনটি গাড়ী/ট্রাক যান্ত্রিক ত্রুটি ও দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ায় আয়ের পথ সাময়িকভাবে রুদ্ধ হয়। অর্থনৈতিক অনাটনের ফলে সেলিনা বাবুলকে কিছুই না জানিয়ে আবারও নতুন শিকারের সন্ধানে চট্টগ্রাম চলে যায়।

বাবুল এখন দিশেহারা, মাত্র একবছরে ত্রিশ লক্ষ টাকা প্রতারনার মাধ্যমে আত্নসাতের ঘটনার যথাযথ বিচার চান বলে সাংবাদিকদের জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, এভাবে আর কতজনকে সর্বশান্ত করবে সেলিনা। বাবুল তার কাছ থেকে নেয়া সকল টাকা ফেরতসহ প্রতারনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবীতে আইনের আশ্রয় নিবেন বলেও জানান।


প্রতারনা ও আত্নসাতের বিষয় স্বীকার করে সেলিনার বড়ভাই ইকু ফকির বলেন,তিনিই বিল্ডিং করতে বাড়ীতে জায়গা দিয়েছিলেন, যাতে সেলিনা আর বাইরে গিয়ে খারাব কোন পথে না যেতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত