বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

চিতলমারীতে মধুমতির ভাঙনে চরম ঝুঁকিতে ঢাকা-পিরোজপুর মহাসড়ক

এস এস সাগর, চিতলমারী

আপডেট : ০৬:১২ পিএম, শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১৯২৮

চিতলমারীতে মধুমতী নদীর উপছে পড়া ঢেউ বন্যা রক্ষাকারী ভেড়িবাধে প্রচন্ড আঘাত হানছে। এতে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে দোকানপাট, বসতবাড়ি, গাছপালা ও ফসলি জমি। গত ৪ দিনের ভাঙনে উপজেলার মধুমতি-সংলগ্ন শৈলদাহ বাজার, আশপাশের অসংখ্য দোকানপাটসহ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তীব্র ভাঙনে ঢাকা-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে মহাসড়কের কিছু অংশ ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা চরম হতাশায় ভুগছেন। অবিলম্বে নদীভাঙন রোধে স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা না করলে অচিরেই এ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুক্রবার পানিউন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ লুৎফর রহমান ও তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আবুল হোসেন ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙ্গন রোধে জরুরী ভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছেন।


ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মধুমতি নদীর উপচে পড়া ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধের মাটি নদীতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এতে ভাঙ্গন দিনদিন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে নদী ভাঙ্গনে শৈলদাহ বাজার, খেয়াঘাটসহ তার আশপাশে বেশকয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। অব্যাহত এ ভাঙ্গনের কবলে পড়ে শৈলদাহ বাজার ও ঢাকা-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটি এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ঘর-বাড়ি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। পৈত্রিক বসত-বাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থরা বাঁচার তাগিদে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে রাস্তার পাশের খাস জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ঘটনায় বিগত ১০বছর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে প থেকে ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলেও এখনো পর্যন্ত কার্যকরী পদপে গ্রহন করা হয়নি ।


শৈলদাহ খেয়াঘাটের দোকান মালিক রোকা মিয়া সরদার, বাজারের সেনেটারী দোকান মালিক সাহাদাৎ খান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, কিছু বুঝে উঠার আগেই আকস্মিক ভাবে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই তাদের প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।


বাজারের গ্রামীন চিকিৎসক মোঃ আঃ সোবাহান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ২০১৭ সালে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি নদীতে চলে গেছে। পরবর্তীতে তিনি পার্শবর্তী স্থানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও সেটি নিয়ে আতঙ্কে ভূগছেন।


ক্ষতিগ্রস্থ শৈলদাহ বজারের রবিউল শিকদার বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বিগত ৩৮ বছরের মধ্যে এখানকার প্রায় অর্ধশত ঘর-বাড়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মধুমতির গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। শুধু আশ্বাসের বাণী শুনে আসছি কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এখনো কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি।


স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ হাবিবুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, এভাবে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে এ বাজারকে কোন ভাবে আর রাকরা সম্ভব হবে না। এখানকার খেয়াঘাটটি এখন চরম হুমকির মুখে। এই ঘাট থেকে প্রতিদিন গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, কোটালীপাড়া ও পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শত শত লোক পারাপার হয়। বর্তমানে ভাঙনের কবলে পড়ে খেয়া পারাপারের সময় নানা রকমের দুর্ঘটনা ঘটছে।


এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু সাঈদ বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ হয়েছে। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেবেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত