বিভীষিকাময় এই দিনে প্রান হারায় ৫১ জন নিরস্ত্র মানুষ

আজ কচুয়ার শাখারীকাঠি গনহত্যা দিবস

শেখ আহসানুল করিম

আপডেট : ১০:২৪ পিএম, শনিবার, ৪ নভেম্বর ২০১৭ | ৮১২

শাখারীকাঠি গনহত্যা

মুক্তিযুদ্ধে বাগেরহাটের ইতিহাসের বিভীষিকাময় শ্খারীকাঠি গনহত্যা দিবস আজ ৫ নভেম্বর পালিত হবে। ১৯৭১ সালের এইদিনে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার শাখারীকাঠি বাজারে পাকহানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণ হারায় মুক্তিগামী ৫১ জন নিরস্ত্র নিরীহ মানুষ। এই দিনটি পালনে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা কর্মসূচী গ্রহন করেছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ৪ নভেম্বর রাতে কচুয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী মোড়েলগঞ্জের দৈবজ্ঞহাটির বিশ্বাস বাড়ীতে অবস্থিত রাজাকার ক্যাম্প আক্রমন করে মুক্তিযোদ্ধারা। সীমিত সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে এ আক্রমনটি করে। প্রতিপক্ষের প্রবল প্রতিরোধ ও বৈরী আবহাওয়ার কারনে অল্প সময়ের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা সেখান থেকে পিছু হটে। এরপর দিন ৫ নভেম্বর শুক্রবার কচুয়া উপজেলার শাখারীকাঠীর সাপ্তাহিক বাজারের দিন ছিল। শাখারীকাঠির এ বাজারটি মোড়েলগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলার সীমান্তে বিশখালী খালের পাড়ে অবস্থিত। দৈবজ্ঞহাটি রাজাকার ক্যাম্প থেকে এ বাজারটি মাত্র ২ কিলোমিটার দুরে। বিকেলে শতাধিক পাকসেনাদের সহায়তায় রাজকারের একটি বাহিনী অতর্কিতে বাজারটি ঘিরে ফেলে। এরপর তারা বাজারে আসা ৫১ জন মুক্তিকামী নিরীহ নিরস্ত্র ব্যাক্তিকে আলাদা করে।

পরবর্তীতে দুজন দুজন করে তাদের হাতপা বেধে সারিবদ্ধ করে বিশখালী খালের পাড়ে দাড় করায়। সন্ধ্যার আগেই ব্রাশ ফায়ারের মাধ্যমে তাদের বুক ঝাজরা করে দিয়ে হানাদারেরা এলাকা ত্যাগ করে।

স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর ওই সময়ে মৃত্যুর হাত থেকে থেকে বেঁচে যাওয়া একজন ছিলেন মোড়েলগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষ্ণলাল দাস। তিনি বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, ওই দিন হানাদারদের হাতে প্রান হারানো ৫১জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন, মঙ্গলময় দাস, অধীর কুমার দাস, উকেন দাস, মনিলাল দাস, মহাদেব দাস,যতীন্দ্র নাথ দাস, রামকৃষ্ণ দাস, কালীপদ সাহা, হিরমোহন সরকার,কৃষ্ণলাল চক্রবর্তী,কৃষ্ণলাল দাস,বিকাশ হালদার,ললিত হালদার,কার্তিক দাস,কালিপদ দাস,কুঞ্জলাল দাস,নিতাই চন্দ্র দাস,বনমালী দাস,কৃষ্ণলাল দাস,বাসুদেব দাস জরি, রামকৃষ্ণ দাস, পবন শিকদার, হারাধন মন্ডল, নরেন্দ্রনাথ পাল, রমনী মৃধা, অমলকৃষ্ণ দত্ত, কৃষ্ণ দাস, অনিল কৃষ্ণ দাস, দ্বিজবর দাস, বসন্ত কুমার দাস, শৈলেন্দ্র নাথ দাস, অমর কৃষ্ণ পরামানিক,নারায়ন চন্দ্র দাস, নিরাঞ্জন দাস,বাসুদেব দাস, বিনোদ বিহারী দাস, মতিলাল দাস, গনেশ চন্দ্র দাস, দুলাল চন্দ্র দাস,নকুল চন্দ্র দাস, নিশিকান্ত দাস, বনমালী দাস, মহাদেব দাস, সাতো দাস, হরিপদ দাস, অতুলচন্দ্র সাহা, দেবেন্দ্রনাথ সাহা, প্রফুল্ল কুমার সাহা, সতীশ চন্দ্র সাহা, নীতিশ ভদ্র। হানাদার বাহিনী নিরীহ নিরস্ত্র মানুষদের হত্যা করে ওইদিন পাকিস্তান রেডিওতে ‘রাজাকার ক্যাম্প আক্রমনকারী দুস্কৃতিকারীদের খতম করা হয়েছে’ শিরোনামে খবর প্রচার করে।

সরকারী ভাবে শাখারীকাঠি গনহত্যা দিবসটি পালিত হয়না এ প্রসংঙ্গে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা নিমাই চন্দ্র দাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘৭১ এর ৪ নভেম্বর যারা দৈবঞ্জহাটির রাজাকার ক্যাম্প আক্রমন করেছিল আমি তাদের একজন। আমাদের না পেয়ে পাক হানাদার বাহিনী অর্ধশত নিরীহ, নিরস্ত্র, নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করেছিল। জানিনা আমাদের রাজাকার ক্যাম্প আক্রমনের সাথে এই গনহত্যার কি সম্পর্ক ছিল। তবে সেই থেকে একটি অপরাধবোধ আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের তাড়িত করে। এই দায়বদ্ধতায় কয়েক বছর ধরে অন্যান্যদের সহযোগীতায় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা শাখারীকাঠি গনহত্যা দিবসটি পালন করে আসছি। এবারও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত