‘আমাগে যাওয়া-কওয়ার জায়গা নাই!’

চিতলমারীতে খাল খননে অনিয়মের অভিযোগ

এস এস সাগর, চিতলমারী

আপডেট : ০৯:৩৪ এএম, শনিবার, ৬ এপ্রিল ২০১৯ | ২৫৪৬

চিতলমারী উপজেলায় খাল খননের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। এখানে প্রায় ৩০ বছর পর খাল খননের কাজ হচ্ছে। কিন্তু খনন কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও অন্যায় হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। তাদের ব্যক্তিগত ক্ষেতের ফলন্ত ধান, নারকেল, তালসহ বিভিন্ন গাছ বিনষ্ট করছে। সেই সাথে তি হচ্ছে বসতবাড়ির। এছাড়া খনন কাজে নিয়োজিত স্ক্যাভেটর মেশিন প্রভাবশালী ব্যক্তির মৎস্যঘের কাটার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জরুরী খনন প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। দায়সারা গোছের কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই খালপাড় ভেঙ্গে ভরাট হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ অহিদুজ্জামান মোল্লা কাকামিয়া বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘খাল কাটা না- কুয়ারা শুরু হয়েছে। খাল গভীর করা হচ্ছে না। পেঁড়িমাটি থাকছে। ওই মেশিন দিয়ে খালের পাড়ের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি আর ছবি তোলা হচ্ছে। এতে কৃষকেরা তিগ্রস্থ হচ্ছে।’


তিনি আরো জানান, কৃষকের জরুরী কৃষি সেচ কাজের জন্য বিএডিসি শিবপুর ছোট পোল থেকে হক ক্যানেল পর্যন্ত দু’টি প্যাকেজে চার কিলোমিটার খাল খননের কাজ শুরু করে ১৫ দিন আগে। প্রায় ৪০ লাখ টাকার কাজ। খালের প্রস্ত ১২ ফুট এবং গভীরতা পেড়ির (খালের মধ্যে উপরস্ত নরম মাটি) পরে সাত ফুট পর্যন্ত হওয়ার কথা। স্ক্যাভেটর মেশিন দ্বারা যা করা সম্ভব নয়। মেশিনের পরিবর্তে মাটির কাটার পেশাদার লোক দিয়ে এই খনন কাজ করা হলে কাজটি দীর্ঘস্থায়ী ও মানসম্পন্ন হত বলে তিনি দাবী করেন।


শনিবার সরেজমিনে জানা যায়, শিবপুর-নালুয়া প্রধান সড়কের পাশের খাল খননের কাজ চলছে। স্ক্যাভেটর মেশিনে কাটা মাটি ফেলা হয়েছে কৃষকের ধান েেত। এক মাইলের অধিক দৈর্ঘ্য জায়গা জুড়ে উঠতি বোরো ধানগাছ মাটিচাপা পড়ে আছে। স্ক্যাভেটর মেশিন চলাচলের জন্য নারকেল, তালসহ নানা প্রজাতির গাছ তিগ্রস্থ হয়েছে। চিতলমারীর শিবপুর ইউনিয়নের বড়বাক গ্রামে গোবিন্দ বিশ্বাস ওরফে দাশের মৎস্যঘের কাটায় ব্যবহৃত হয়েছে স্ক্যাভেটর মেশিন। গোবিন্দ’র ছেলে খোকন বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, মেশিনের ড্রাইভারের সাথে যোগাযোগ করে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে তার ঘেরের মাটি কাটাচ্ছেন।


বড়বাক গ্রামের কেনাই হালদারের পুত্র গোবিন্দ হালদার (৭৫) বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তাদের ১০ পুরুষ ধরে বসবাসকৃত বসতবাড়িসহ ভূমি তিগ্রস্থ হচ্ছে। তার প্রতিবেশি উপেন বিশ্বাসের ছেলে রামপদ বিশ্বাস কান্নাজড়িত কন্ঠে বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘দৈত্যের মতন ওই মেশিন খাল কাটার নামে যা শুরু করছে তাতে আমাগে যাওয়া-কওয়ার জায়গা নাই !’ একই গ্রামের মোসলেম ফকিরের ছেলে আব্দুল মহিত ফকির (৬৫) বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান যখন নান্নু ছিলেন, সেই ১৯৮৬ সালের পরে এইবার খাল খনন শুরু হয়েছে। যেভাবে খনন করা হচ্ছে তাতে উপকার তো হবেই না, বরঞ্চ তি বেশি হচ্ছে।’

বড়বাক গ্রামে ড্রেজার মেশিনের পাশে খনন কাজের তদারকি করছিলেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বাগেরহাটের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এসএম সুজাউদ্দীন। তবে তার হাতে খালের কোন মানচিত্র ছিলনা বলে প্রত্যদর্শীরা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান। উপ-সহকারী প্রকৌশলী এসএম সুজাউদ্দীন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্য খালের ২৪ ফুট প্রস্ত করে খননকাজ ৬০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা। খাল খননের গভীরতা কত ফুট এবং বাজেট কত টাকা? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি আমতা আমতা করেন। এক পর্যায়ে বলেন, ‘ঝিনাইদহের তামিম কনস্ট্রাকশন কাজটি পেলেও তার পে দেখাশোনা করছেন বাগেরহাটের এক কমিশনার। আপনারা তার সাথে যোগাযোগ করেন।’ এই কাজ চলাকালে স্ক্যাভেটর মেশিন কারো ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যাবে কি-না তা ঠিকাদার বলতে পারবেন বলে তিনি জানান। মেশিনে খননকৃত মাটি ফেলে ফলন্ত ধানসহ অন্যান্য তি সম্পর্কে তিনি জানান, এটার দায়-দায়িত্ব ঠিকাদারের লোকেদের। চিতলমারী উপজেলার অন্যান্য খাল স্রোতহীন। এই খাল খননে এলাকাবাসীর উপকার কতটুকু হবে? উত্তরে তিনি জানান, এটা জরুরী প্রকল্প। কৃষিসেচের উপকার করাই লক্ষ্য।

উপ-সহকারী প্রকৌশলী এসএম সুজাউদ্দীন আরো জানান, গত ২১ মার্চ ওই খাল খনন কাজের উদ্বোধন করেন চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুসাঈদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার, শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ অহিদুজ্জামান মোল্লা কাকামিয়াসহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত