নদী শাসনের দাবিতে

শরণখোলায় বগীবাসীর মানব প্রাচীর, প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ১২:৪৩ পিএম, রোববার, ২১ এপ্রিল ২০১৯ | ২১৮৪

শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের বগী ও দক্ষিণ সাউথখালী অংশে নদী শাসনের দাবিতে মানবপ্রাচীর গড়ে তোলা হয়। রবিবার সকাল ১১টায় গাবতলা আশার আলো মসজিদ থেকে বগীবন্দর পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটারের এ মানবপ্রাচীরে নদী ভাঙনের শিকার দুই গ্রামের শত শত নারী-পুরুষ অংশ নেয়। পরে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। বলেশ্বর নদী শাসন অন্তর্ভূক্তকরণ দাবি আদায় আন্দোলন কমিটির ব্যানারে প্রায় এক ঘন্টা ধরে এ কর্মসূচী পালিত হয়েছে।

আন্দোলন কমিটির আহবায়ক নজরুল ইসলাম আকন ও সমন্বয়কারী বগী ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মো. রিয়াদুল পঞ্চায়েত বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শরণখোলার ৩৫/১ পোল্ডারের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং ভাঙনকবলিত এলাকা হচ্ছে সাউথাখালী ইউনিয়নের বগী ও দক্ষিণ সাউথখালী অংশ। এখানকার প্রায় দুই কিলোমিটার বাঁধ প্রতিমুহূর্তে বলেশ্বর নদীতে বিলিন হচ্ছে। গত ১০ বছরে এ দুই গ্রামের হাজার হাজার ঘরবাড়ি, শত শত একর ফসলী জমি বলেশ্বর গ্রাস করেছে। দুটি গ্রামের প্রায় তিনভাগের দুইভাগই বলেশ্বর গিলে খেয়েছে। গত ২২ মার্চ বগী বেড়িবাঁধের ১০০ মিটার ভেঙে একমাস ধরে জোয়ারের পানি ঢুকে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। শত শত পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। কিন্তু ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতে এ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

তারা বলেন, এমন ভয়াবহ ভাঙনের মুখে নদী শাসন না করেই বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) মাধ্যমে বেড়িবাঁধ নির্মানের পাঁয়তারা চলছে। এক দিকে নদী ভাঙছে, আবার অন্যদিকে বার বার ফসলী জমি অধিগ্রহন করে প্রহসনের বাাঁধ নির্মান করা হচ্ছে। যার ফলে, বছর বছর বাঁধ বিলিন হয়ে সরকারকে কোটি কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে এবং নিঃশ্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় নদী শাসন না করে এখানে বাঁধ নির্মানের চেষ্টা করলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী তা কোন ভাবেই মেনে নেবেনা। বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করা হবে। কর্মসূচী শেষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এক স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়।

এ ব্যাপারে বাপাউবোর ‘সিইআইপি’ প্রকল্পের খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, শিগগিরই বগীতে রিংবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঠেকানোর ব্যবস্থা করা হবে। অপরদিকে, নদী শাসনের জন্য এক কিলোমিটারের একটি প্রস্তাবনা বিশ্ব ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে অনেক আগেই। এটা দীর্ঘমেয়াদী প্রকৃয়া। তাছাড়া, সরকারের উচ্চপর্যায়েও বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্করি ঘূণিঝড় সিডরে উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলা লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ওই ঝড়ে বলেশ্বর নদের তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই থেকে এলাকাবাসী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ‘বাপাউবো’র উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান কাজ শুরু হয়। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে চায়নার ‘সিএইচডব্লিউই’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মান কাজ বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু নদী শাসন না করেই মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করায় বাঁধের স্থায়ীত্ব নিয়ে শুরু থেকেই এলাকাবাসী প্রশ্ন তোলেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত