উপকুলীয় এলাকায় আতংক

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ০৫:৪৭ পিএম, শুক্রবার, ৩ মে ২০১৯ | ১৭০৫

প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা ও বাগেরহাটে শুক্রবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি ও বইছে ঝড়ো হাওয়া।

শুক্রবার দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নে চোরামনকাটি গ্রামে ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে শাহানুর বেগম (৩৫) নামে এক নারী নিহত হয়েছেন। তিনি ওই গ্রামের মোজাহারের স্ত্রী।

দুপুরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাসায় ফেরার পথে ঝড়ো হাওয়ায় তার ওপর গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। পরে তাকে আহত অবস্থায় রামপাল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি মারা যান।

এদিকে সিডর বিধ্বস্ত শরণখোলার বলেশ্বর নদী পাড়ের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। শুক্রবার সকাল থেকে উপকূল জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। দুপুরের পর থেকে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। এ অবস্থায় উপকূলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতেফা য়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।

জেলার প্রতিটি উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হচ্ছে। এলাকাবাসিও আবহাওয়ার সতর্কতা জেনে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করেছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কচুয়া উপজেলার এম বারেদাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইকোন সেল্টারে তিল ধরনের ঠাই নেই। আশ্রয় নেয়া মানুষের ভীড়ে পরিপুর্ণ হয়ে গেছে।

তবে আশ্রয় নিতে আসা মানুষদের মধ্যে টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে বলে দারী করেন আক্কাস শেখ নামের আশ্রয় নেয়া ব্যাক্তি। যার যার নিজ দায়িত্বে খাবার নিয়ে তারা আশ্রয় নিতে এসেছেন বলেও তারা জানান।

কচুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসমিন ফারহানা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, কচুয়া উপজেলায় মোট ৪১টি সাইকোন সেল্টার রয়েছে। সবকটিই প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকারী ভাবে মে.টন চাল বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। ফনি পরবর্তি সময়ে দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে এ বরাদ্ধ ব্যবহার করা হবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের মাধ্যমে জানাগেছে, শুক্রবার মধ্যরাতে এ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানতে পারে।

জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, বাগেরহাট জেলার ২৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

খুলনা জেলার কয়রা উপজলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, দুপুর থেকে থেমে থেমে বৃস্টি ও ঝড়ো হাওয়া বইছে। উপজেলার ১১৬টি সাইকোন সেল্টারে এলাকাবাসি আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় নেয়া মানুষদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ফনি থেকে রক্ষা পেতে শুক্রবার উপকুলীয় জেলা খুলনা ও বাগেরহাটে জুমার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া ও উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়েছে।

বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশ উপকূল ভাগে আঘাত হানলে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের অসংখ্য বন্যপ্রাণির তি হবার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের দুর্গম শ্যালা ও কোকিল মনি ফরেস্ট ক্যা¤েপর সকলকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, এখনই বলা যাবে না এবারের ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণি মারা যাবে। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের বড় ধরনের তি না হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল-মায়া হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণিকূলের তেমন কোনো তি হবে না বলে আশা রাখি। তবে ঘূর্ণিঝড় সুন্দরবনে সরাসরি আঘাত হানলে বন্যপ্রাণির তির সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের প থেকে ঘূর্ণিঝড় ফণীতে তির আশঙ্কায় প্রায় ৪শ মেট্রিকটন চাল ও ৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার মজুত রাখা হয়েছে । সাইকোন শেল্টারের পাশাপাশি উপকূলের সকল শিা প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার নুরুল হুদা জানান, বন্দরে অবস্থানরত ১৬টি বিদেশি জাহাজ নিরাপদে রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত