ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব: উপজেলা প্রশাসনের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন

শরণখোলায় বৃষ্টি-দমকা বাতাস, তিন গ্রাম প্লাবিত

মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা

আপডেট : ০৭:২৮ পিএম, শুক্রবার, ৩ মে ২০১৯ | ১৭৩৪

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে উপকূলীয় বাগেরহাটের শরণখোলায় শুক্রবার দুপুর একটা থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত ও দমকা বাতাস শুরু হয়েছে। নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বলেশ্বর নদীর জোয়ারের চাপে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়িবাঁধের সাউথখালী ইউনিয়নের বগী এলাকার তিনটি পয়েন্ট ভেঙে তিন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে, পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা দুবলার চর, আলোরকোল, কটকা ও শ্যালার চরে অবস্থানরত বনকর্মী ও জেলেরা আশ্রয় কেন্দ্রে নিরাপদে অবস্থান করছে বলে বনবিভাগ জানিয়েছে।

দুপুর দুইটার দিকে শরণখোলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ, রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন, প্রকল্প বাস্তাবয়ন কর্মকর্তা মো. নাসির আহমেদসহ উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরে তারা সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন দুর্যোগ কমিটির সঙ্গে এক জরুরী সভা করেন।

শুক্রবার সরেজমিনে ভাঙনকবলিত বগী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বগীবন্দর থেকে গাবতলা আশার আলো মসজিদ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁদ মারাত্মক ঝুঁকিরপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বলেশ্বর নদের প্রবল জোয়ারে পূর্বের ভেঙে যাওয়া বগী সাতঘর এবং নতুন করে বগী নতুন স্লুইস গেট ও বগী কমিউনিটি কিনিকের সামনের বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে। জোয়ারের পানিতে বগী, দক্ষিণ সাউথখালী ও চালিতাবুনিয়া এই তিনটি গ্রামের চার সহস্রাধীক বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে।

এসময় স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী (৬৫), আইউব আলী হাওলাদার (৪৫), মনির ফরাজী (৪৮), সোহরাব পঞ্চায়েত (৭০) বলেন, বগী, গাবতলা, দক্ষিণ সাউথখালী গ্রামের যারা বলেশ্বর তীরে বসবাস করে তারা গত বুধবার থেকে রাতের বেলা সাইকোন শেল্টারে থাকছে, আবার দিন হলে যার যার ঘরে ফিরে আসছে। সিডরের অভিজ্ঞতা থেকেই সবাই আগে থেকেই প্রস্তুত রয়েছে।

তারা বলেন, আমরা বর্তমানে ঘূণিঝড় ফণীর চেয়ে বেড়িবাঁধ নিয়ে বেশি আতঙ্কে আছি। জোয়ারের পানিতে আমারা স্বাভাবিক চলাচল ও কাজকর্ম করতে পারছিনা। টেকসই বেড়িবাঁধ থাকলে আমারে এতোটা দুর্ভোগে পড়তে হতো না।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের বগী ওয়ার্ডের মেম্বার মো. রিয়াদুল পঞ্চায়েত বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর পূর্বাভাস পেয়ে বলেশ্বর তীরের বসবাসকারী সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রয়েছে। গত দুদিন ধরে রাতের বেলা অধিকাংশ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে থাকছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বগী এলাকার বেড়িবাঁধের আরো দুটি পয়েন্ট নতুন করে প্রায় দুইশ’ মিটার ভেঙে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে চার সহ¯্রাধিক পরিবার দুর্ভোগে পড়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক ও শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, দুপুর ১২টার দিকে দুবলার চরে প্রবল বেগে ঝড়, বৃষ্টি শুরু হয়। এর আগে দুবলার জেলেপল্লী, কটকা ও শ্যালার চরে অবস্থানকারী জেলে ও বনকর্মীরা সুন্দরবনের সাইকোন শেল্টারগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। তারা নিরাপদে রয়েছে।

অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ভাঙনরোধে প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহল এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জরুরী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সার্বিক বিষয় অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া, সাউথখালী উনিয়ন পরিষদের সকল মেম্বার ও ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে জরুরী মতবিনিময় সভা করে দুর্যোগের আগে ও পরে করনীয় বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত