৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

মোড়েলগঞ্জে ক্ষুদ্র মেরামতের নামে চলছে দায়সারা কাজ

এম.পলাশ শরীফ

আপডেট : ০৪:০৪ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০১৯ | ৮৮১

মোড়েলগঞ্জে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি(পিইডিপি-৪) ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ক্ষুদ্র মেরামতের নামে এ উপজেলায় ৪৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বরাদ্ধ হলেও দায়সারাভাবে কাজ করছে কোন কোন বিদ্যালয়। অনেক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ন ও পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হলেও সেখানে পেয়েছে ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্ধ। যেসব বিদ্যালয় গুলোতে নতুন ভবনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে জরুরি ভাবে সেখানে চুন কালি সিমেন্ট বালি মেখে কোন মতে দেখানো হয়েছে চকচকে। সর্বাঙ্গে যার ক্ষত রয়েছে সেখানে প্রলাভ দিয়ে ক্ষত সারানোর চেষ্টা চলছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার ২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্ধ পেয়েছে ২ লাখ টাকা করে ৫২ লাখ টাকা ও ১৮টি বিদ্যালয়ে পেয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে ২৭ লাখ টাকা। সর্বমোট ৭৯ লাখ টাকার কাজ চলমান রয়েছে।



সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, ক্ষুদ্র মেরামতের সরকারিভাবে বরাদ্ধকৃত টাকা আংশিক কাজ হলেও অনেকেই দায়সারা ভাবে কাজ সেরেছে। বনগ্রাম ইউনিয়নের ১৮৮ নং পুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯১ সালে স্থাপিত। (নব জাতীয় করন) এ বিদ্যালয়টিতে মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৩০ জন। প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষক রয়েছে ৫ জন। ১৯৯৪ সালে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট পাকা এ ভবনে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। বর্তমানে ভবনটি জরার্জীণ অবস্থায় পরিত্যাক্ত ঘোষণা না হলেও শ্রেণীকক্ষগুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ন। এ বিদ্যালয়ে বরাদ্ধ হয়েছে ক্ষুদ্র মেরামতের ২ লাখ টাকা। ৫ বছর পূর্বেও ১ লাখ টাকা পেয়েছিলো ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার মোল্লা।

এ টাকা দিয়ে জরার্জীণ এ ভবনটিতে করানো হয়েছে একটি শ্রেণী কক্ষের ফোর পাকা, বারান্দায় ফোর, টয়লেটে কোন মতে সিমেন্ট বালি লিপ দেওয়া হয়েছে। রং দিয়ে সাজানো হয়েছে চকচকে।


১৮৩ নং কড়াবৌলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৮৮ সালে, ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৭৫ জন। এর মধ্যে উপস্থিতি রয়েছে ৩২ জন। প্রধান শিক্ষক সহ শিক্ষক মন্ডলি ৫ জন। ১৯৯৪ সালে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ভবনে ছাত্রছাত্রীদের চলছে পাঠদান। বর্তমানে ভবনটি রয়েছে পরিত্যাক্ত। ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্ধ পেয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণীকক্ষের জন্য ৩৬ ফুট লম্বা ৩ রুম বিশিষ্ট একটি টিন শেটের ঘর তৈরি করা হয়েছে ঘরটির বেড়া দেওয়া হয়েছে পুরানো টিন দিয়ে। পরিত্যাক্ত ভবনে একটি শ্রেণী কক্ষে নির্মাণ করা হয়েছে টয়লেট। ঝুঁকির মধ্যেও শিক্ষক মন্ডলী অফিস কক্ষ এখনও ব্যবহার করছে। ইতোপূর্বে ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্ধ পেয়েছে ১ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা হাফিজা খাতুন।


২৭৯ নং র্ঝান্টিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় ১৯৮৯ সালে, ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৬১ জন। এর মধ্যে উপস্থিতি রয়েছে ১৬ জন। ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্ধ পেয়েছে এ বিদ্যালয়ে ২ লাখ টাকা। বরাদ্ধকৃত টাকা দিয়ে ভবন সংস্কার ছাদের কাজ একটি শ্রেণী কক্ষের ফোর পাকা করন ও বারান্দা পাকাকরন, টয়লেটের বালি সিমেন্ট দিয়ে কোন মতে মাজা ঘসা করা হয়েছে। রং করে সাজানো হয়েছে চকচকে। প্রধান শিক্ষক সহ শিক্ষক মন্ডলি ৩ জন। শূন্য রয়েছে ২টি পদ। এর মধ্যে মৌখিক ডেপুটিশনে রয়েছে শিক্ষক তপন কুমার মিস্ত্রী অন্য বিদ্যালয়ে।

রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ছোট জিলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বরাদ্ধ পেয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ভবনটি সংস্কারের নামে সিমেন্ট বালি দিয়ে ফাটল মারা হয়েছে কোনমতে। তবে চটক রং দিয়ে সাজিয়েছে এ বিদ্যালয়টি। মনে হয় এটি একটি নতুন ভবন। অনুরুপ: হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের ৭৬ নং ফকিরবাড়ি কালিকাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিত্যাক্ত ঘোষণা হলেও। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য বরাদ্ধকৃত ক্ষুদ্র মেরামতের ২ লাখ টাকা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ৬২ ফুট লম্বা ৪ কক্ষ বিশিষ্ট টিনের ঘর। ১৫২ নং পাঁচপাড়া সম্মিলিত আর. কেজি সোনামুদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিত্যাক্ত ভবনে বিদুৎ জালিয়ে দিনের বেলা এখনও চলছে পাঠদান। ছাত্রছাত্রী রয়েছে ১০০ জন। উপস্থিতি রয়েছে ২৭ জন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সহ শিক্ষক মন্ডলি রয়েছে ৩ জন। ক্ষুদ্র মেরামতের ২ লাখ টাকা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি ৪ কক্ষ বিশিষ্ট টিনশেট ঘর।


এদিকে স্থানীয় অভিভাবকদের ক্ষুদ্র মেরামতের বিষয়ে রয়েছে নানা ধরনের অভিযোগ। পরিত্যাক্ত ভবনগুলোতে সংস্কার না করে নতুন ভবনে বরাদ্ধের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা। কথা উঠেছে এ বরাদ্ধের টাকা প্রাপ্তির জন্য উপজেলায় কর্তা ব্যাক্তিদের ৩০% দিতে হবে টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকই বলেন, তাদের পদে পদে দিতে হয় টাকা, বুঝেন তো সব কথা বলা যায়না, এর মধ্যেও যতটুকু কাজ করানো সম্ভব তা করানো হয়েছে।

এ বিষয়ে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশিষ কুমার নন্দী বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্ধকৃত টাকার শতভাগ কাজ মাঠ পর্যায়ে বুঝে নিয়ে প্রাপ্ত টাকা দেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত একটি কমিটি রয়েছে। কর্তা ব্যক্তিদের দিতে হয় ৩০% এ বিষয়ে আমার জানা নেই। বিষয়টি সঠিক নয়।


এ সর্ম্পকে উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, ক্ষুদ্র মেরামতের বরাদ্ধকৃত স্কুল গুলোর কাজ মাঠ পর্যায়ে ইঞ্জিনিয়ার দেখে যেসব বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করেছে প্রতিবেদন পাওয়ার পরেই তাদেরকেই প্রাপ্ত টাকা দেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত