কচুয়ায় ভৌত অবকাঠামো ও ঔষধ সংকটে কমিউনিটি ক্লিনিক

স্টাফ রিপোর্টার

আপডেট : ১১:১২ পিএম, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৯ | ৭১৬

বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক সারাদেশে মা ও শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। এসব কেন্দ্র থেকে ৩০টি মারাত্মক রোগের ওষুধও দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। সরকারের এই জনস্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম জাতিসংঘ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংকসহ বহির্বিশ্বে বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে দেশের কমিউনিটি কিনিকগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি এক স্বাধীন মূল্যায়নে এ রকম একটি মন্তব্য করেছে।৬ হাজার গ্রামীণ মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি কিনিক করার কথা থাকলেও বর্তমানে আছে প্রায় ১৪ হাজার। যা প্রায় ১২ হাজার মানুষের জন্য উপযোগী। ২০২২ সালের মধ্যে আরও প্রায় এক হাজার কমিউনিটি কিনিক তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কমিউনিটি কিনিকের সেবা নেয়ার ক্ষেত্র যাতায়াতসহ যানবাহনের অভাব, খারাপ রাস্তাঘাট, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান, ওষুধপত্রের অভাব, সামাজিক ও ধর্মীয় কিছু সংস্কারও রয়েছে।

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় মোট ক্লিনিকের সংখ্যা ১২ টি । যার মধ্যে ৬ টার উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা যায় ভৌত অবকাঠামো , স্যানিটেশন, রোগ নির্নয়ের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও ঔষধের অভাব । তাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এর আওতাভুক্ত SAP তিনটি ও SAP এর আওতামুক্ত একটি কিনিক ভাল সেবা প্রদান করছে বলে জানিয়েছেন সেব গ্রহীতারা । এই গবেষক উক্ত প্রতিষ্ঠানে থাকা কালীন ও তাদেও সেবা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন ও সেবা প্রদান ও সেবা গ্রহনকারী দের কথা বলা হয় । কয়েক বছর আগেও এলাকার মানুষকে চিকিৎসাসেবা নিতে উপজেলা সদর কিংবা জেলা সদরে আসতে হতো। কমিউনিটি কিনিকের কল্যাণে এখন বাড়ির পাশেই চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন তারা।এসব ক্লিনিককে সরকারের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে ২৭ ধরনের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

কচুয়া উপজেলার বারুইখালীর বাসিন্দা শিলা রানী সাহা (৪২)ও সুমিত্রা সাহা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন ,‘আগে আমাদের সামান্য জ্বর হলে কচুয়ায় অথবা বাগেরহাটে যেতে হতো কমিউনিটি ক্লিনিক থাকায় আমরা সহজেই সেখান থেকে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পাচ্ছি। এ ক্লিনিকটা না থাকলে আমাদের যে কি হতো।’

কচুয়া উপজেলার ১২ টি কমিউনিটি কিনিকের মধ্যে ৬ টি পরিদর্শন করে দেখা যায় গ্রামীন জনগোষ্ঠীর প্রায সব স্তরের মানুষ এখানে সেবা নেয়। তবে, তার মধ্যে অর্ধেক প্রায় দরিদ্র বা অতি দরিদ্র এবং সেই জনগোষ্ঠার বেশীর ভাগই নারী, শিশু ও বৃদ্ধ।

এই ক্লিনিক গুলির মূল সেবা প্রদানকারী ব্যক্তিটি হচ্ছেন CHCP তিনি সপ্তাহে ছয়দিন ক্লিনিকে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত সেবা দিয়ে থাকেন । তাকে সহায়তা করেন স্বাথ্য অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারী। তারা সপ্তাহে তিনদিন করে বসে থাকেন ।

চরকাঠী কমিউনিটি ক্লিনিকের CHCP বীনা দাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান , তিনি বাংলাতে এম এ শেষ করে ৩ মাসের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার মানুষকে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকে যোগদান করেন । তিনি ধাত্রী বিদ্যার উপরেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন । এলাকায় তিনি মাতৃত্বকালীন সেবা প্রদান করেন অর্থাৎ , তিনি গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন ও গর্ভ পরবর্তী সেবা প্রদান করে থাকেন। তিনি এলাকার বাড়ীতে গিয়ে ৩/৪ টি ডেলিভারী করিয়েছেন।

এখানে , তিনি সাধারনত: সর্দি, কাশী, ব্যাথা, আমাশয়, কাটা ,পোড়া, গ্যাষ্টিক , ওজন মাপা, ব্লাড প্রেশার মাপা, এখানে শিশু ও মহিলারা বেশী আসে ।


অন্য দিকে , বারুইখালী কমিউনিটি কিনিকের CHCP সুব্রত কুমার সাহা বাংলাতে এম এ শেষ করা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তিনি অন্যান্য ট্রেনিং এর সাথে শিশুদের উপর ECD (Early Childhood development) এর উপর ৫ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন । অর্থাৎ, তিনি অন্যান্য সেবার পাশাপাশি শিশুদের একটু বেশী সেবা দিতে পারছেন। তবে, তিনি বলেন মাঝে মাঝে S Refreshing training হলে ভাল হয় ।

প্রতিদিন সব মিলিয়ে কমপক্ষে ৪০-৫০ জন সুবিধাভোগী আসেন। মসজিদ ,মাদ্রাসার মত বাড়ী, বাড়ী থেকে সুপারি, টাকা সংগ্রহ করে কমিউনিটি ক্লিনিকের তহবিলে রাখা হয় । পরে তা ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্যয় করা হয় ।

তিনি জানালেন , তিনি P4D সম্পর্কে জানেন যে , তাদের সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে ও সচেতনতা সৃষ্টি করতে উঠান বৈঠক করে, জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে লোকজ নাটক, বাল্য বিবাহ রোধ ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ক্লিনিকে মিটিং করে

টেংরাখালী কমিউনিটি কিনিকের CHCP রাইসুল ইসলাম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানান, তার এলাকায় কমিউনিটি কিনিক ছাড়াও গ্রাম্য ডাক্তার, ফার্মেসী ও ওঝা’র তথাকথিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। তার দেওয়্ সেবা নিয়ে তিনি ৮০ ভাগ সন্তুষ্ট আর ২০ ভাগ অসন্তুষট কারণ মাসের শেষের দিকে তিনি রোগীদের ঔষধ দিতে পারেন না। তিনি আরও জানান , প্রায় সাড়ে ৩ বর্গ কিলোমিটার দূর থেকে সাধারনত: সেবা গ্রহন করে থাকেন ।

তার ক্লিনিকে রয়েছে ওজন ও উচ্চতা মাপার মেশিন, ব্লাড প্রেসার মাপার মেশিন , থার্মোমিটার ও গ্লকো মিটার নষ্ট হওয়ায় কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জমা রয়েছে। ২০/০৯/২০১৯ তারিখে রোগীর উপস্থিতি ছির সাধারণ রোগী ছিল ৪৪ জন ও শিশু ২ জন। এখানে নারীদের খাবার বড়ি ও কনডম সরবরাহ করা হয়। পরিদর্শন কালে উপস্থিত রোগীর সংখ্যা ছিল ১০ জন।

রেজুলেশন খাতা হালনাগাদ ছিল। ক্লিনিকে প্রদানকৃত সেবা সমূহ; পাতলা পায়খানা, গ্যাস, জ্বর, এলার্জী, মাথাব্যাথা, হাতকাটা,দূর্বলতা, বমি, কৃমি, শ্বাস কষ্ট । শিশুদেও জ্বর, পাতলা পায়খানা, সর্দি, কাশী ইত্যাদি ।

ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা তুলাতলা এরাকার মনিরা বেগম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন , তিনি জ্বর, দূর্বলতা,সর্দিকাশী ও দূর্বলতা ও অন্যান্য বিষয়ে মাসে ১ বার বা ২ বার সেবা নিতে আসেন। এছাও ফুলতলা ও তুলাতলা থেকেও লোক আসে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো. মনজুরুল আলম বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন , আমরা আমাদেও সাধ্যমত সেবা প্রদানও মনিটরিং করছি । মানুষ ভার সেবা পাক এটাই আমাদের একমাএ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য । তবে, চরকাঠী কমিউনিটি ক্লিনিকের CHCP বীনা দাস এই ক্লিনিক গুলোর সেবাদানের কিছু সমস্যা রয়েছে।

তিনি জানান ক্লিনিকের ভবনের অবস্থা ভাল না, বিদ্যুৎ থাকলেও পানিয় জলের ব্যবস্থা নেই। টিউবওয়েল মেরামত করলেও, দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। গ্লুকো মিটার নষ্ট। দেড় মাসে যে ঔষধ দেওয়া হয় তা একমাসে শেষ হয়ে যায়, কারণ মাসের শেষের দিকে ঔষধ শেষ হয়ে যায়।

অন্য দিকে , বারুইখালী কমিউনিটি কিনিকের CHCP সুব্রত কুমার সাহা বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানালেন, ক্লিনিকে লজিস্টিক সমস্যা রয়েছে, এখানকার গ্লুকো মিটারও নষ্ট, জমা দেওয়া। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের ফোর নষ্ট, আলমারী ১ টিতে সমস্যা ও ওয়াল সংষ্কার করতে হবে। দেড় মাসে যে ঔষধ দেওয়া হয় তা একমাসে শেষ হয়ে যায়। FWA পদ শূন্য রয়েছে ।

এ ব্যাপারে টেংরাখালী কমিউনিটি ক্লিনিকের CHCP রাইসুল ইসলাম বলেন, তার কমিউনিটি কিনিকটা জরাজীর্ন, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য একজন লোক হলে ভাল হয়। তিনি বলেন, প্রতিটি কিনিকে ভাল স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও পানিয় জলের বড় সমস্যা। তার ক্লিনিকে বৃষ্টির পানিই ভরসা ।

অন্যদিকে, মালিপাটন কমিউনিটি ক্লিনিক প্রায়ই বন্ধ থাকে বলে জানিয়েছেন মালিপাটনের লোকজন। তাদের অভিযোগ মলিনা রানী বিশ্বাস প্রায়ই যথা সময়ে আসেননা। প্রায়ই বন্ধ থাকে ক্লিনিকটি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো. মনজুরুল আলম বলেন , আমাদের ১২ টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ১১টি ভাল চলে তেমন কোন অভিযোগ নেই, তবে মালিপাটনের ১ টি তেই আমরা ফেল করেছি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, তিনি প্রজেক্ট অফিসে লিখছেন, এ কাজটি করে ঐ ealth Engineering Department (HED) বাজেট পাওয়া সাপেক্ষে তারা এ কাজ গুলো করবেন তবে, মেডিকেলের যন্ত্রপাতি মাঝে মাঝে পাওয়া যায় । তবে, তবে অবকাঠামো ও ঔষধের ব্যাপারে আপাতত: কোন আশার আলো নেই।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত