করোনা ভাইরাস নিয়ে আতংক, সচেতন থাকতে লিফলেট বিতরন

মোংলায় প্রবাসীদের বাড়ীতে লাল নিশান, নদী পারাপারে মানছেনা নির্দেশনা

মোংলা প্রতিনিধি

আপডেট : ০২:৩১ পিএম, মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ ২০২০ | ৫৮১

মোংলায় ইতালি, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, বাহারাইন ও ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে এ পর্যন্ত আসা ২৩৪জন প্রবাসীর মধ্যে গত তিনদিনে কোয়ারেন্টাইনে আনা হয়েছে ৭২জনকে। এর আগে ১৪৫জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বাকি ১৭জন প্রবাসীর খোজে পুলিশ, স্কাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রসাশন। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীদের বাড়ী চিহ্ণিত করতে প্রতিটি বাড়ীতে লাল নিশান সাটানো হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

এদিকে করোন ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসন মোংলা নদী পারাপারে কম যাত্রী বহনের নির্দেশ দেয়া হলেও তা মানছেন না মাঝি-মাল্লা সমিতির নেতৃবৃন্দ। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এক একটি খেয়া ট্রলারে অন্তত ৭০/৮০ জন লোক অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে নদী পার হচ্ছেন। নদী পারাপারের যাত্রীদের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জন সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরন ও হ্যান্ড ওয়াস করাচ্ছেন প্রতিবন্ধী নারী সংগঠন ও বিএএসডি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ৫০জন সেচ্ছা সেবক। এসময় নদী পারাপার যাত্রী ছাড়াও দুড়পাল্লার যাত্রীদের হ্যান্ড ওয়াস, মাইকিং ও লিফলেট’র মাধ্যমে সচেতনতা মুলক প্রচার অব্যাহত রেখেছে এ সংগঠনের লোকজন।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ডাঃ জিবীতোষ বিশ্বাস বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে জানায়, মোংলা উপজেলার বিভিন্ এলাকায় বিদেশ থেকে আসা ২৩৪ জন প্রবাসীর মধ্যে শুরু থেকে ১৪৫জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। গত তিন দিনে আরো ৭২জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে স্বাস্থ্য ও উপজেলা প্রসাশন। রয়েছেন ১২১জন। তবে বন্দরসহ এ উপজেলায় আসা প্রবাসীরা বেশিরভাগই হচ্ছেন ভারত থেকে আসা। সামান্য কয়েকজন রয়েছেন সিঙ্গাপুর, ইতালি, মালয়েশিয়া, বাহারাইনের। শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোংলায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত কোন রোগী শনাক্ত হয়নি।

এদিকে, করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে এবং এর বিস্তার রোধে কোয়ারেন্টাইনে থাকা সকল প্রবাসীর বাড়ীর সামনে সোমবার সকাল থেকে লাল নিশানা সাটিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। এ নিয়ে স্থানীয় সাধারন মানুষের মাঝে করোনা আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। ভীতির কারণে লাল নিশানা টানানো বাড়ি-ঘর এড়িয়ে চলছেন লোকজন। এছাড়া মানুষের নিত্যপন্যের ও ওষুধের দোকান ছাড়া সন্ধ্যা ৬টার পর সকল দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রশাসন। এ ঘোষণার বাইরে কেউ দোকানপাট খোলা রাখলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নিবার্হী অফিসার রাহাত মান্নান।

তবে খোলা থাকবে মুদি, কাঁচা ও ওষুধের দোকান। এছাড়া দিনের বেলায় চায়ের দোকানগুলোতে বসার বেঞ্চ ও ক্যারাম বোর্ড সরিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে সকল দোকানপাটের টেলিভিশনও। উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো: রাহাত মান্নানের প থেকে সোমবার সকাল হতে পৌরসভার ডিজিটাল কেন্দ্র দিয়ে এ প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে এ ঘোষণার বাইরে কেউ দোকানপাট খোলা রাখলে বা পন্যের মুল্য বেশী নিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নিবার্হী অফিসার রাহাত মান্নান।

অপারদিকে, করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসন মোংলা নদী পারাপারে কম যাত্রী বহনের নির্দেশ দেয়া হলেও এখনও তা মানছেন না মাঝি-মাল্লা সমিতির নেতৃবৃন্দ। বন্দর কর্তৃপক্ষ, ইপিজেড, কাষ্টমস, ব্যাংক, শিল্প এলাকার বিভিন্ন ফ্যাক্টরী, বেজাসহ প্রতিদিন কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু এ নদী পাড়ি দিয়ে তাদের কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া খুলনা, বাগেরহাট, ঢাকা ও চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ নদী পাড়ি দিয়ে সড়ক পথে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক লোক যাতায়াত করেন। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এক একটি খেয়া ট্রলারে অন্তত ৭০/৮০ জন লোক অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে নদী পার হচ্ছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা থাকলেও অতি মুনাফা লোভী খেয়া ট্রলারের মাঝি ও নেতারা এ নির্দেশনা মানছেন না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এনিয়ে প্রশাসনের কঠোর নজর দেয়ারও দাবি জানিয়েছে তারা।

অন্যদিকে, সোমবার সকালে নদী পারাপারের যাত্রীদের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে জন সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরন ও হ্যান্ড ওয়াস করাচ্ছেন প্রতিবন্ধী নারী সংগঠন ও বিএএসডি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ৫০জন সেচ্ছা সেবক। এসময় নদী পারাপার যাত্রী ছাড়াও দুড়পাল্লার যাত্রীদের হ্যান্ড ওয়াস, মাইকিং ও লিফলেট’র মাধ্যমে সচেতনতা মুলক প্রচার অব্যাহত রেখেছে এ সংগঠনের লোকজন। মঙ্গলবার উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায় সাধারন মানুষদের নিরাপদে থাকতে হাতে-কলমে সচেতনতা মুলক প্রশিক্ষন ও প্রচার চালাচ্ছে এ সংগঠনের সদস্যরা।

মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাহাত মান্নান বাগেরহাট টুয়েন্টি ফোরকে বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের বাড়ীতে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতা মুলক। তার পরেও সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক যারা কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে এবং মোংলায় আসা প্রবাসীদের বাড়ীতে উপজেলা প্রশাসনের প থেকে লাল নিশানা দেয়া হয়েছে। প্রবাসীরা বিদেশ থেকে আসার পর ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামুলক করে তাদের বাড়ীতে সংকেত লাল নিশান সাটানো হবে। সরকারের নিয়ম ভঙ্গ করলে তাৎক্ষনিক ব্যাবস্থা নেয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
  • নির্বাচিত